শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩:৩৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চুয়াডাঙ্গায় অধিক মুনাফার লোভে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয় পাম্প মালিকরা, ক্ষোভ ক্রেতাদের

চুয়াডাঙ্গায় অধিক মুনাফার লোভে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয় পাম্প মালিকরা, ক্ষোভ ক্রেতাদের

স্বদেশ ডেস্ক:

সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। শুক্রবার রাত ১২টা থেকে নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে লিটারপ্রতি ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

শুক্রবার রাত ১০টায় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে, তেলের দাম বৃদ্ধির সংবাদে অধিক মুনাফার লাভের আশায় সন্ধ্যারাতেই চুয়াডাঙ্গার কয়েকটি তেল পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয় পাম্প মালিকরা। তবে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের চাপে চুয়াডাঙ্গা একাডেমি মোড়ের হক ফিলিং স্টেশন রাত সাড়ে ১১টার পর স্বল্প পরিসরে তেল বিক্রি শুরু করলেও বন্ধ ছিল আলুকদিয়ার বিশ্বাস, দৌলতদিয়াড়ের সুগন্ধা ও সাতগাড়ি মোড়ের জোয়ার্দ্দার পেট্রোল পাম্প।

এদিকে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির খবর গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন অঞ্চলের হাজার হাজার মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারসহ ছোট ছোট গাড়ির মালিকরা তেলের জন্য বিভিন্ন পাম্পে ছোটাছুটি শুরু করেন। চুয়াডাঙ্গা শহরের যে কয়েকটি পাম্প স্বল্প পরিসরে তেল বিক্রি চালু রেখেছিল সেই পাম্পগুলোতেও ক্রমেই বেড়ে যায় শত শত গাড়ির চাপ। ফলে অনেক গাড়ির মালিককেই দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কাঙ্ক্ষিত তেল না পেয়ে ফিরে যেতে হয়।

এর আগে গতকাল শুক্রবার রাত ১০টায় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান তথ্য অফিসার মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন কর্তৃক পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানা যায়। যা শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে নতুন দাম কার্যকর হওয়ার কথা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভোক্তা পর্যায়ে লিটার প্রতি ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগূ।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জনবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় আমজনতার স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। যতদিন সম্ভব ছিল, ততদিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির চিন্তা করেনি। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই কিছুটা অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে হচ্ছে। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য কমিয়ে দিয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনরায় বিবেচনা করা হবে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতির কারণে পাশের দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করে থাকে। ভারত ২০২২ সালের ২২ মে থেকে কলকাতায় ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৯২.৭৬ রুপি এবং পেট্রোল লিটার প্রতি ১০৬.০৩ রুপি নির্ধারণ করেছে, যা অদ্যাবধি বিদ্যমান রয়েছে। এ মূল্য বাংলাদেশি টাকায় যথাক্রমে ১১৪.০৯ টাকা এবং ১৩০.৪২ টাকা। (১ রুপি = গড় ১.২৩ টাকা)। অর্থাৎ বাংলাদেশে কলকাতার তুলনায় ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ৩৪.০৯ এবং পেট্রোল লিটার প্রতি ৪৪.৪২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছিল। মূল্য কম থাকায় তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো সময়ের দাবি।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বিগত ছয় মাসে (২২ ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রিতে (সব পণ্য) ৮০১৪.৫১ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক তেলের বাজার পরিস্থিতির কারণে বিপিসির আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখাতে যৌক্তিক মূল্য সমন্বয় অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

এদিকে হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে তেলের এ ধরনের মূল্য বৃদ্ধির সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে চুয়াডাঙ্গা জেলা জুড়ে মোটরসাইকেল মালিকদের ছোটাছুটি বেড়ে যায়। এদেরই একজন মোটরসাইকেল মালিক আলুকদিয়ার মনিরুল ইসলাম সাতগাড়ি মোড়ের জোয়ার্দ্দার তেল পাম্পের সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও তেল পাননি। পরে তেল পাম্প থেকে বলা হয় তাদের পাম্পে তেল নেই। পরে মনিরুল ইসলাম তেল না পেয়ে ঠেলতে ঠেলতে গাড়ি নিয়ে চলে যান। অপর এক মোটরসাইকেল মালিক বাড়ি যাওয়ার জন্য আধা লিটার তেল চাইলেও পাম্প মালিক ফিরিয়ে দেন। জোয়ার্দ্দার তেল পাম্পের মালিকের ছেলে সালমান বলেন, তারা রাতে তেল বিক্রি করেন না। এছাড়া তাদের তেল ফুরিয়ে গিয়েছে।

তেল নিতে আসা আব্দুস সামাদ বলেন, দোকান থেকে বাড়ি যাচ্ছি। মোটরসাইকেলে বেশি তেল না থাকায় ফিলিং স্টেশনে এলাম। এখানে এসে দেখি, উপচে পড়া ভিড়, কিন্তু ফিলিং স্টেশনে কেউ নেই। বিষয়টি বুঝে উঠতে পারছি না।

আব্দুল হাই নামে আরেকজন বলেন, সরকারিভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই ১০টার পর থেকে ফিলিং স্টেশনের কর্তৃপক্ষ এমনটা শুরু করেছে। কারণ আগের জমাকৃত তেল রাত ১২টার পর থেকে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে।

এদিকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, কোনো কোনো ফিলিং স্টেশনে আবার রাত ১০টার পর থেকে ১০০ টাকার বেশি তেল দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি কিছু পাম্পে রাত ১২টার আগেই বেশি দামে তেল বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। আবার কিছু এলাকায় ফিলিং স্টেশন বন্ধ রাখার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ রাতে তেলের জন্য ছোটাছুটি করা এসব গাড়ির মালিকরা দাবি করেছেন, পূর্বের দামে কেনা তেল পূর্বের দামেই বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে চুয়াডাঙ্গার প্রশাসনকে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গার যেসব পাম্পগুলো তেল বিক্রি বন্ধ করে পালিয়ে গিয়েছে, তাদের তেলের মজুদের তালিকা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877