স্বদেশ ডেস্ক:
জাতিসংঘ বলছে, ভারত শাসিত কাশ্মীরে সম্প্রতি যে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে, সেটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং মানবাধিকারের জন্য ক্ষতিকর।
জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র এর উদাহরণ হিসাবে টেলিযোগাযোগ বন্ধ করা, নেতাদের জোর করে আটকে রাখা আর রাজনৈতিক সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে উল্লেখ করেছেন। রোববার থেকে ওই অঞ্চল ঘিরে অচলাবস্থা চলছে এবং সবরকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
কাশ্মীরের জন্য সংবিধানে দেয়া ‘বিশেষ মর্যাদা’ বিলোপের সিদ্ধান্তের পর থেকে এই পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।
আর্টিকেল ৩৭০ নামের সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে, যার ফলে তারা পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে নিজেদের আইন তৈরি করতে পারতো।ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের ৭০ বছরের সম্পর্ক এর ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল।
হিমালয় অঞ্চলের এই ভূখণ্ডটি ভারত ও পাকিস্তান, উভয় দেশই দাবি করে, তবে প্রত্যেক দেশ এর একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে মাত্র। ওই অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে অপূরণীয়ভাবে এই অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কে পরিবর্তন আনলো দিল্লি। এই পদক্ষেপটি অনেকটা হঠাৎ করে আসে এবং বিরোধী অনেক আইন প্রণেতা, সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ নাগরিকদের সমালোচনার শিকার হয়েছে। তবে অনেকে একে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, পদক্ষেপটি অসাংবিধানিক নয়।
সোমবারের ঘোষণার কয়েকদিন আগে থেকেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে কাশ্মীরে। রোববার রাত থেকেই কাশ্মীরের ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও ল্যান্ডলাইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় এবং সাবেক দুইজন মুখ্যমন্ত্রীসহ অনেক রাজনৈতিক নেতাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। এখনো তারা গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
কাশ্মীরসহ বেশিরভাগ এলাকাই এখনো অচল অবস্থায় রয়েছে। অন্য এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, তারা এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দেখা করতে পারছেন না।
সরকার বলছে, সহিংসতা বা বিক্ষোভ ঠেকাতে তারা সতর্কতা হিসাবে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে বিবিসি স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেছে এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের দিকে পাথর ছুড়ে মারার মতো বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ দেখতে পেয়েছে।
১৯৮৯ সাল থেকে ওই অঞ্চলে সশস্ত্র সহিংসতার ঘটনা ঘটে আসছে। পাথর ছুড়ে মারা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে প্রায়শ সংঘাতে জড়িয়েছে নিরাপত্তা কর্মীরা, যেখানে অতীত বছরগুলোয় হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে।
টুইটারে দেয়া একটি ভিডিও বিবৃতিতে জাতিসংঘের মুখপাত্র রুপার্ট কোলভিল কাশ্মীরে মানবাধিকার নিয়ে সংস্থাটির উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, এর আগের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, কর্তৃপক্ষ কিভাবে বারবার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে মতপ্রকাশ বন্ধ করতে চাইছে, স্থানীয় সোচ্চার রাজনৈতিক নেতাদের আটকে রাখার পন্থা নিয়েছে এবং বিক্ষোভকারীদের দমনে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে, যার মধ্যে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও রয়েছে। তবে তিনি বলছেন, নতুন কড়াকড়ির বিষয়গুলো পরিস্থিতি ‘অন্য এক মাত্রায়’ নিয়ে গেছে।
জাতিসংঘ বলছে, ‘যে ব্যাপকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে রাখা হয়েছে, সেটি এর আগে যেমন আমরা দেখেছি, তার চেয়ে অনেক বেশি।’ তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বাসিন্দারা জম্মু ও কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নিয়ে গণতান্ত্রিক কোন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না।