এ দেশের চামড়া শিল্পের প্রভূত সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। প্রতি বছর গরু-ছাগলসহ বিপুল গবাদিপশু বাংলাদেশে জবাই হয় ঈদুল আজহা উপলক্ষে। এসব পশুর চামড়া অনেক ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কোরবানির মওসুমে পুরো বছরের অর্ধেকের বেশি পশু জবাই হয় এ দেশে। বেশি পরিমাণ চামড়া একসাথে পাওয়া যাওয়ায় এ থেকে ব্যাপক অর্থনৈতিক সুযোগ গ্রহণ করা যায়। কিন্তু এ সুযোগকে আজ পর্যন্ত কাজে লাগানো যায়নি, বরং চামড়া নিয়ে ‘রাজনীতি’ হয়ে থাকে। সঠিক দরে চামড়া বাজারজাত করার সুযোগ রাখা হয় না। চামড়াবাজার প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দখলে চলে যায়। তদুপরি, এর প্রক্রিয়াজাতকরণে টেকসই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে বিপুল সম্পদের অপচয় হয় প্রতি বছর। এবারো কোরবানি মওসুম এসেছে। জবাই হবে বিপুলসংখ্যাক গবাদিপশু। সংশ্লিষ্ট সবাই যদি সমন্বিতভাবে অগ্রিম পদক্ষেপ নেয়, তাহলে কাঁচা চামড়া থেকে অনেক বেশি সুফল পাওয়া যেতে পারে।
প্রতি বছরের মতো এবারো কোরবানির পশুর চমাড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। লবণযুক্ত গরুর চামড়ার নির্ধারিত মূল্য ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরি ১৩ থেকে ১৫ টাকা। ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে বাণিজ্যমন্ত্রী চামড়ার এ দাম নির্ধারণ করেন। তবে চামড়ার দাম গত বছরও একই ছিল। বছরে বাংলাদেশে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায় এবং প্রায় দুই কোটি ৩১ লাখ ১৩ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই হয়। চামড়ার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রেও একটি সিন্ডিকেট তৎপর থাকে। তারা অল্প দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য করে। অথচ বাস্তবে চামড়ার দামের টাকা অভাবী মানুষের প্রাপ্য। এবার যে দাম নির্ধারণ হয়েছে, অন্ততপক্ষে সেই দামে যেন চামড়া বিক্রি করা হয়।
কোরবানিতে সংগৃহীত বিপুল চামড়া কেন অর্থনৈতিক সুফল বয়ে আনতে পারছে না, সে ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকায় ট্যানারি চালু হতে পারছে না। সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে প্লটের সংখ্যা ২০৫টি, শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ১৫৫টি। পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে ৭৮টি ট্যানারিকে। কোরবানির মওসুমে বিপুল চামড়া স্বল্পসংখ্যক ট্যানারি প্রক্রিয়াজাত করার সামর্থ্য রাখে না। এতে করে সংগৃহীত চামড়া গুদামে পড়ে থাকে। এ বছর যখন কোরবানির মওসুম সমাগত এই সময়ও আগের বছরের চামড়া গুদামে পড়ে আছে। এ অবস্থায় নতুন বছরের বিপুল চামড়ার কী হবে? কেন এমনটি হচ্ছে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার পর এর দাম অনেক বেড়ে যায়। সেই চামড়া দিয়ে যদি কোনো পণ্য বানানো হয়, তার দাম আরো অনেক বেশি হয়। উৎপাদিত সব চামড়া যদি দেশে প্রক্রিয়াজাত হয় এবং তা থেকে পণ্য তৈরি করা যায়, তার পুরো সুফল দেশ ও জাতি পাবে। কোরবানির মওসুমে প্রতি বছর প্রতিবেশী দেশে ব্যাপকভাবে পাচার হয়ে যায় চামড়া। এ পাচার হওয়া রোধ করতে হবে।