স্বদেশ ডেস্ক: ডেঙ্গুর আতঙ্কের মধ্যেই ইদুল আজহা উপলক্ষ্যে স্বজন-প্রিয়জনদের সাথে ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন মানুষ। ১১, ১২ ও ১৩ আগস্ট ঈদুল আজহার ছুটি। আগের দু’দিন ৯ ও ১০ আগস্ট সাপ্তাহিক ছুটি। যে কারণে বৃস্পতিবার থেকেই ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ৫৫টি আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনে প্রায় সাড়ে ৫৯ হাজার যাত্রী নির্ধারিত আসনে বসে যাত্রা করার কথা রয়েছ। পাশাপাশি বাস ও লঞ্চে করেও ঢাকা ছাড়বেন বিপুলসংখ্যক মানুষ।
যারা আগাম টিকিট কেটেছেন, তারাই এখন যাত্রা করছেন। নির্ধারিত আসনের বাইরে দাঁড়িয়ে ও ট্রেনের ছাদে চড়ে যাত্রা করতে দেখা যায়নি কাউকে।
এদিকে এবারের ঈদে দীর্ঘ ছুটি পেলেও টিকিট সঙ্কট রয়েই গেছে। যে কারণে অনেক মানুষ চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছে। অপর দিকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায়ে নেমেছে। কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া আদায় করছে। বৃহস্পতিবার থেকে কোনো কোনো রুটের বাস মালিক-শ্রমিকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করার অলিখিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভুক্তভোগীরা বলেছে, ইতোমধ্যেই দূরপাল্লার বিলাসবহুল বাস এবং লঞ্চের টিকিট লাপাত্তা। ট্রেনের টিকিট আগাম বিক্রি করা হয়েছে ঘোষণা দিয়ে। যে কারণে আগে যারা টিকিট কাটতে পারেনি তারা এখন চরম বিপাকে। ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মনসুর গতকাল বলেন, ছুটিতে তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা যাওয়ার কথা। কিন্তু টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। গত কয়েক দিন তিনি বাস কাউন্টারগুলোতে ঘুরেছেন। কিন্তু কোনো টিকিট পাননি। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এখন কিভাবে বাড়িতে যাবেন সেই চিন্তায় আছেন।
ছিদ্দিকুর রহমান নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি বরগুনা যাবেন। সব সময় লঞ্চেই যাতায়াত করেন। এবার এখন পর্যন্ত লঞ্চের কোনো কেবিন পাননি। তিনি বলেন, প্রতি বছর কেবিনের টিকিট আগে সংগ্রহ করেও ভোগান্তির শিকার হতে হয়। গত বছর আগাম টিকিট থাকা সত্ত্বেও ঘাটে গিয়ে দেখেন লঞ্চ আগেই ছেড়ে দিয়েছে। পরে আরেক লঞ্চে ব্যবস্থা হয়েছে। এবারতো টিকিটই পাননি।
এদিকে যারা আগাম টিকিট সংগ্রহ করেছেন তাদের প্রত্যেকেই বেশি টাকা ভাড়া গুনেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ ভাড়া গুনেছেন অনেকে। আবুল কাশেম নামের এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ১৮ শ’ টাকার লঞ্চ টিকিট সংগ্রহ করেছেন ২৫ শ’ টাকা দিয়ে। মনিরুজ্জামান নামের অপর এক ব্যক্তি বলেছেন, বাসের ৫০০ টাকার টিকিট সংগ্রহ করেছেন ৯০০ টাকায়।
যাত্রীদের কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, আজ থেকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের হয়রানি আরো বেড়ে যাবে। গতবারের আশঙ্কা থেকে মোশাররফ নামের এক যাত্রী জানান, গুলিস্তান থেকে মাওয়ার ভাড়া ৭০ টাকা। গত ঈদে সেই ভাড়া রাখা হয়েছিল ১২০ থেকে দেড় শ’ টাকা। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা যার কাছ থেকে যা পেরেছে আদায় করে নিয়েছে। এর প্রতিবাদও করা যায়নি। এবারো সেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মোশাররফ। তিনি বলেন, এভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতা নেই। তাদের চোখের সামনে পরিবহনগুলো বাড়তি ভাড়া আদায় করে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান বলেছেন, সরকারের তরফ থেকে কঠোর মনিটরিং না হলে যাত্রীরাতো ভোগান্তির মধ্যে পড়বেই। ঈদ যাত্রায় প্রতিবারই যাত্রীরা হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। পরিবারের সাথে আনন্দা ভাগাভাগি করতে গিয়ে অনেকে রাস্তায় প্রাণ হারায়। নানাভাবে নাজেহাল হয়। প্রশাসন যদি সক্রিয় হতো তাহলে এরূপ ঘটনা ঘটত না।