রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:১৮ পূর্বাহ্ন

কুলাউড়ার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি

কুলাউড়ার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি

স্বদেশ ডেস্ক:

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। রোববার দিনে বৃষ্টিপাত না হলেও রাতে ও সোমবার ভোর থেকে আবারো বৃষ্টিপাত হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে কুলাউড়া পৌর এলাকার বেশির ভাগ এলাকা এখন বন্যার পানিতে প্লাবিত। সরকারি হাসপাতাল, খাদ্য গুদাম, উপজেলা চত্বর, রাবেয়া স্কুল রাস্তা, মহিলা কলেজ রোড এলাকা ও উত্তর মাগুরা এলাকার মানুষজনের বাসাবাড়িতে পানি উঠায় মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। পৌর এলাকাসহ বন্যা দুর্গত গরিব মানুষরা ত্রাণের অভাবে অসহায় জীবনযাপন করছেন। সরকারিভাবে যে ত্রাণ দেয়া হয়েছে তা একেবারেই অপ্রতুল বলে জানা গেছে।

এদিকে উপজেলার হাওর অধ্যুষিত ভুকশিমইল, ভাটেরা, কাদিপুর, রাউৎগাঁও, বরমচাল, জয়চন্ডী, ব্রাম্মণবাজার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া কর্মধা ইউনিয়নে পাহাড়ি ঢলে ফানাই নদীর মহিষ মারা এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলার প্রধান সড়কসহ শহরে যোগাযোগের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে গিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক এলাকায় মানুষের বসতগৃহে পানি উঠায় মালামালসহ নিজেরা খাটের উপরে আশ্রয় নিয়েছেন। বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মক্তব পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ ছাড়া কুলাউড়া পৌরশহরের উপজেলা পরিষদ, হাসপাতালে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সব মিলিয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছেন কুলাউড়া উপজেলার মানুষজন। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পৌর এলাকায় চারটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদসহ বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে গেছে। কুলাউড়ার প্রায় ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যায় হাকালুকি হাওর এলাকা ভূকশিমইলের সাথে কুলাউড়া উপজেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বন্ধ আছে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

এ নিয়ে ভূকশিমইল ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির বলেন, ভূকশিমইলে তিন দিন থেকে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্লাবিত হয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর। হাওর এলাকার মানুষ বর্তমানে আশ্রয় নিচ্ছেন ভূকশিমইল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঘাটের বাজার শেড ঘর ও গৌড়করণ মাদরাসায়।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কর্মধা ইউনিয়নের মহিষমারা গ্রামের ফানাই নদীর বাঁধ ভেঙে মহিষমারা, বাবনিয়া, হাশিমপুর, ভাতাইয়া ও পুরশাই গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। কুলাউড়া উপজেলার রাবেয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দে বিভিন্ন এলাকা থেকে আশ্রয় নিয়েছেন বেশ কয়েকটি পরিবার।

হাকালুকি হাওড় পারের মইতাম এলাকার ৭৫ বছর বয়সী আবু তাহের বলেন, ‘১৯৮৮ সালের বন্যা দেখেছিলাম, সেবার বাড়িতে পানি উঠেনি। কিন্তু, গতকাল সকাল থেকে পানি বাড়তে শুরু করে এবং বিকেলে ঘরে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। উপায় না পেয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। বাড়ি থেকে কিছু নিয়ে আসতে পারিনি।’

একই আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা নজরুল ইসলাম বলেন, বাঁধ ভেঙে নদীর সাথে বিলীন হয়ে আর মাত্র আড়াই ফুটের মতো প্রস্থ আছে। পানি বৃদ্ধি পেলে যেকোনো সময় ওই অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

কুলাউড়া উপজেলার ইউএনও এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, হাকালুকি হাওড়ে পানি বাড়ছে। নিম্নাঞ্চলে পানি আসছে। যেখানে পায়ের পাতা সমান পানি ছিল, আজ সেখানে হাঁটু সমান পানি হয়েছে। গতকাল বিকালে আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০-৫০ পরিবার ছিল। আজ তা বেড়ে ১০০ ছাড়িয়েছে। আমরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবার বিতরণ করেছি।

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, তিনি কুলাউড়া বন্যা দূর্গত এলাকা ভিজিট করেছেন। মানুষজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরন করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলিতে রান্না করা খাবার বিতরণ অব্যাহত আছে। তিনি জানান,প্রশাসন সর্বাত্মকভাবে দুর্গতদের পাশে রয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877