এলাহী নেওয়াজ খান:
বহু বছর ধরে ভারতের প্রভাববলয়ে থাকা নেপালের রাজনীতি এখন তীব্র সঙ্কটে পড়েছে। একদিকে অস্থিতিশীল সরকার; অন্যদিকে ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় নেপালের রাজনীতিকরা কিছুটা বিচলিত। ভারসাম্য রক্ষার খেলায় নেতাদের কূটনীতির পিচ্ছিল পথে দক্ষতার পাশাপাশি কৌশলী পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। দেশটির নিজস্ব নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে ভারত, চীন ও আমেরিকার মতো বৃহৎ শক্তিগুলোর সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে চলাই এখন নেতাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে ক্রমাগত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে নাজুক হয়ে পড়ছে। বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা। সবার অবাক লাগবে, রাজার কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে ১৯৯০ সালে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার উন্মেষ জনমনে যে বৈপ্লবিক চেতনা জাগিয়েছিল তা ঘনঘন সরকার পরিবর্তনে অনেকটা ফিকে হয়ে পড়েছে। বিগত ৩০ বছরে কোনো সরকারই মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। এই তিন দশকে এক ডজনেরও বেশি সরকার গঠিত হয়েছে। একেকটি সরকার গড়ে ৯ মাস করে ক্ষমতায় থেকেছে। কিন্তু টেকসই উন্নয়নে দরকার স্থিতিশীল সরকার। অথচ গত তিন দশকে নেপালে তা নেই। ফলে সম্পূর্ণ ভূমিবেষ্টিত দেশটিতে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নানাভাবে। সাথে রয়েছে ভারত ও চীনের টানাটানি। একইসাথে যক্তরাষ্ট্রের সাহায্যের লম্বা হাত।
কৌতূহলোদ্দীপক হচ্ছে- নেপাল কখনোই অন্য কোনো দেশের উপনিবেশ হয়নি। তবে এর রয়েছে সুদীর্ঘ উত্থান-পতন ও সঙ্ঘাতের ইতিহাস। ভারত উপমহাদেশের দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনামলে নেপালকে ব্রিটিশ ও চীনা সাম্রাজ্যের মাঝখানে পড়ে চলতে হয়েছে ভারসাম্য রক্ষা করে। সে ধারা এখনো ভিন্নভাবে বহাল আছে। বিশেষ করে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হলে তিন দিক দিয়ে ভারত পরিবেষ্টিত নেপালের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে দিল্লি যেসব উদ্যোগ নেয় তার মধ্যে অন্যতম ছিল ১৯৫০ সালের ‘শান্তি ও বন্ধুত্ব’ চুক্তি। এই চুক্তির অন্যতম হচ্ছে ‘ওপেন বর্ডার’ কার্যক্রম। যার ফলে নেপালিরা অবাধে ভারতে যাতায়াত ও ব্যবসায়-বাণিজ্য করতে পারে। ল্যান্ড লকড কান্ট্রি হিসেবে তখন এটা ছিল নেপালিদের জন্য বিরাট সুযোগ। বিশেষ করে ওই চুক্তিবলে নেপাল ভারতের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার ও জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করে।
ভারতের সাথে নেপালের এক হাজার ৮৫০ কিলোমিটারের দীর্ঘ সীমান্তের সাথে যুক্ত রয়েছে সিকিম, পশ্চিমবাংলা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখন্ডের মতো ভারতের পাঁচটি রাজ্য যা ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক বন্ধনে কাছাকাছি। ফলে এ ধরনের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নৈকট্য কাজে লাগিয়ে ভারত কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠে। সেখানে নেপালি মুদ্রার পাশাপাশি ভারতীয় মুদ্রাও চালু হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ভারতীয় পুলিশ কোনো অনুমতি ছাড়াই হরহামেশাই কাঠমান্ডুতে হানা দিত। এটা নেপালিদের কখনো পছন্দ হয়নি।
অন্যদিকে চীনের সাথে আগে থেকেই একটি বাণিজ্য রুট থাকলেও মাঝে মধ্যেই তা ভূমিধসে বন্ধ হয়ে যেত। সে কারণে মূলত নেপালিরা ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকত বেশি। বিশেষ করে, হিমালয় রেঞ্জের দুর্লঙ্ঘ পর্বতমালায় চীনের সাথে নেপালের অবারিত যোগাযোগ বাধা হয়ে ছিল। এ পরিস্থিতির পুরো সুযোগটাই ভারত নিয়েছে। কিন্তু গত তিন দশকে অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে চীনের পরাশক্তি হয়ে ওঠায় পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। বিশেষ করে তিব্বতের সাথে যুক্ত নেপালের উত্তরাঞ্চলের মানুষ, যারা বেশির ভাগ বৌদ্ধ এবং সাংস্কৃতিকভাবে তিব্বতের সমাজ ও ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত; তারা চীনর সাথে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে বেশি। ফলে উত্তরের মানুষের ব্যবসায়-বাণিজ্য সবদিক দিয়েই চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। অপর দিকে, ভারত সীমান্তের সাথে যুক্ত পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণের নিম্নভূমির সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ ভারতের সাথে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে বেশি। কারণ তারা ভারতের সমাজ ও সংস্কৃতিতে বেশি প্রভাবিত। যদিও নেপালের মোট জনসংখ্যার ৮২ শতাংশ হিন্দু। বৌদ্ধদের সংখ্যা ১১ শতাংশের মতো। মুসলমানের সংখ্যা সাড়ে ৪ শতাংশ। কিছু শিখ, জৈন ও নিরীশ্বরবাদীও আছে। তবে বহু ভাষা ও জাতিগত বিভক্তি রয়েছে নেপালি সমাজে। ১০০টির মতো জাতিগত সম্প্রদায় সেখানে বাস করে, যা রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে নানাভাবে।
এ রকম সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পটভূমিতে চীনকে মোকাবেলায় নেপালের ওপর ভারতের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার আগ্রাসী প্রচেষ্টা দু’দেশের মধ্যে তীব্র আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি করে। বিশেষ করে নেপালের বিরুদ্ধে দু’টি দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ নেপালের জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। দু’টি অবরোধই আরোপ করা হয়েছিল ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর। বিধ্বস্ত জনপদে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষে ওই সব অবরোধ নেপালের জন্য ছিল ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’য়ের মতো।
নব্বই দশকের মাঝামাঝি নেপালের রাজা বীরেন্দ্র বাহাদুর শাহ ভারতকে না জানিয়ে চীনের কাছ থেকে যখন অস্ত্র ক্রয় করে তখন দু’দেশের সম্পর্ক টালমাটাল হয়ে পড়ে। ভারতের সিকিম দখল ও ভুটানের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ঘটনা নেপালের রাজাকে ভীত করে তুলেছিল। তাই তিনি নিজ দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে চীনের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন। আর এটা ভারতের জন্য ছিল বজ্রপাতের মতো। এ ঘটনায় তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং ১৯৮৯ সালের এপ্রিল মাসে নেপাল সীমান্ত বন্ধ করে দেন। এর কিছু দিন আগে নেপালে একটি ভূমিকম্পে বিপর্যয়কর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। ঠিক এ রকম এক পরিস্থিতিতে ভারত শুরু করে দেয় তার ক্ষুদ্র, দুর্বল ও দরিদ্র প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অবরোধ। ১৩ মাস ধরে চলা এ অবরোধে নেপালের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল। জিডিপি নেমে গিয়েছিল শূন্যতে। দেখা দিয়েছিল অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয়।
কিন্তু ওই অবরোধের ফলে ১৯৯০ সালে স্বাধীনচেতা রাজা বীরেন্দ্রের ক্ষমতা সঙ্কুচিত হয়ে যায়। তিনি নামমাত্র রাজায় পরিণত হন। অন্যদিকে উত্থান ঘটে বহুদলীয় গণতন্ত্রের। তবে ভারতের ওই ১৩ মাসের অবরোধ নেপালের জনগণের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। তারা বিকল্প হিসেবে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। সরকারগুলোও চীনের সাথে ব্যবসায়-বাণিজ্য শুরু করে ব্যাপকভাবে। যদিও চীনের সাথে ব্যবসায়-বাণিজ্য চলে আসছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু তা ছিল সীমিত। নেপালও বাণিজ্য বাড়ানোর আগ্রহ দেখায়নি। কারণ বিভিন্ন সময়ে কোনো কোনো বিষয়ে বিরোধ দেখা দিলেও ভারতের ওপর নির্ভরশীলতার ক্ষেত্রে কখনো চূড়ান্ত আস্থাহীনতা দেখা দেয়নি। কিন্তু জাতীয় দুর্যোগকালে বন্ধু দেশের এই অবরোধ নেপালি জনগণ মেনে নিতে পারেনি। এটা ছিল নেপালিদের কাছে দুর্যোগের ওপর দুর্যোগ।
ঘটনাক্রমে ওই সময় কাঠমান্ডুতে অবস্থান করছিলাম। সাথে ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক চন্দন সরকার। আমরা নয়াদিল্লিতে একটা ওয়ার্কশপে যোগদান শেষে ঢাকায় ফেরার পথে কাঠমান্ডুুতে দু’দিনের বিরতি নিয়েছিলাম। সেটা ছিল এক অবর্ণনীয় দৃশ্য। জ্বালানি তেলের অভাবে কোনো বাস, ট্রাক, ট্যাক্সি চলছিল না। শুধু চলাচল করছিল অল্প কিছু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। রাস্তাঘাট ছিল প্রায় জনশূন্য। একটি রাজধানী শহরে এ দৃশ্য ছিল অকল্পনীয়। মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। তখনই দেখলাম বাজার ছেয়ে গেছে চীনা পণ্যে। আগের মতো ভারতীয় মুদ্রা চলছিল না। একটা পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। আরো বেশ কয়েক বছর পর আবার যখন কাঠমান্ডু যাই তখন দেখলাম অন্যরকম এক দৃশ্য। মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি তখন সারা নেপালে সশস্ত্র লড়াই করছে। সবার চোখে-মুখে আতঙ্ক। রাতে কাঠমান্ডু ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হতো। মাওবাদীরা একদিকে ভারতকে সম্প্রসারণবাদী বলত, অন্যদিকে তাদের লক্ষ্য ছিল রাজতন্ত্রের উৎখাত ঘটিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী নেপাল সৃষ্টি করা।
১৯৯৬ সালে শুরু হয়েছিল এই মাওবাদী রক্তাক্ত সশস্ত্র সংগ্রাম। ভারতের মধ্যস্থতায় ২০০৬ সালে এই মাওবাদী গেরিলা যুদ্ধের অবসান ঘটে। ততদিনে নেপালি সমাজে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। নাটকীয়ভাবে ভারতনির্ভরতা কমে যায়। রাতারাতি বাড়তে থাকে চীনের সাথে বাণিজ্য। চীন ব্যবসার স্বার্থে নেপাল-লাসা মহাসড়ককে একটি আধুনিক সড়কে পরিণত করে। এর ফলে নেপাল চীনের সমুদ্রবন্দর ব্যবহারেরও সুযোগ পেয়ে যায়। চীনের সাথে একটি চুক্তির অধীনে নেপাল তৃতীয় দেশ থেকে আমদানির জন্য বেইজিংয়ের সাতটি সমুদ্র ও স্থলবন্দর ব্যবহারের সুযোগ পায়। আগে নেপাল তৃতীয় দেশ থেকে সব আমদানিই করত ভারতের মাধ্যমে। ২০১৯ সালে চীনের সাথে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। মূলত ভারত সীমান্তে ২০১৫ সালে আরেকটি ভয়াবহ অর্থনৈতিক অবরোধের ঘটনা শেষ পর্যন্ত নেপালি নেতাদের তাড়িত করে চীনের সাথে এ ধরনের চুক্তিতে উপনীত হতে। কারণ ওই সময় বিধ্বংসী একটা ভূমিকম্প সামলাতে নেপাল সরকার যখন হিমশিম খাচ্ছে; তখন আরেকটি অবরোধ নেপালের জন্য ছিল দুঃসহ। যদিও কলকাতা থেকে ওই সব চীনা বন্দরের দূরত্ব কয়েকগুণ বেশি। তবুও কথায় কথায় ভারতীয় অবরোধ থেকে বাঁচতে নেপালিরা চীনের সাথে কষ্টকর ও ব্যয়বহুল এই বাণিজ্য বেছে নেয়।
নেপালের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের অবরোধটা ছিল ভারতের একটা চাতুর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। মূলত নেপালের নতুন সংবিধানের বিরুদ্ধে ভারত সীমান্তবর্তী তরাই নিম্নভূমির মদেশিস জনগণের প্রতিবাদ। তারা নেপালে ঢোকার সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়। ফলে জ্বালানিসহ কোনো পণ্যই নেপালে প্রবেশ করতে পারছিল না। ছয় মাস ধরে এই অবরোধ চলে, যা নেপালবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগে ফেলে দিয়েছিল। ভারত সরাসরি এর সাথে জড়িত ছিল না। কিন্তু নেপালের সচেতন মহল মনে করত, এর পেছনে ভারতের হাত আছে। এ ব্যাপারে ওই সময়ে নেপালের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত থেকে এটা মনে হয়েছে, ভারতের মদদ ছাড়া এত ব্যাপক ও দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
যাই হোক, নেপালের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপ নতুন কিছু নয়। অবাধ্য প্রতিবেশীকে শাস্তি দেয়ার ভারতীয় কৌশল নেপালিদেরও আর অজানা নেই। তাই নেপালিরা বিকল্প হিসেবে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। একই সাথে আমেরিকার সাহায্যের হাতকেও সাদরে গ্রহণ করে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ‘মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কো-অপারেশনের (এমসিসি) আওতায় নেপালকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান দেয়া হয়। চীনের নিষেধ উপেক্ষা করে এই অনুদান গ্রহণ দু’দেশের মধ্যে টানাপড়েন সৃষ্টি করে। দ্রুত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই কাঠমান্ডু উপস্থিত হন। কারণ চীন যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুদানকে ভালো চোখে দেখেনি। তাদের আশঙ্কা ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান চীনের স্বপ্নের বিআরআই মহাপরিকল্পনার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হবে। শঙ্কিত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেপালকে আরো ঋণ দেয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু নেপাল ঋণের পরিবর্তে অনুদানের অনুরোধ জানায়। নিদেনপক্ষে মাত্র ২ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে নেপাল আগ্রহ দেখায়। উল্লেখ করা যায়, নেপালে বিআরআইয়ের অধীনে ৭৯০টি প্রকল্পের কাজ চলছে। শ্রীলঙ্কা ঘটনার পর নেপাল কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ায় টানাপড়েন দেখা দেয়।
এ ছাড়া চীনের সাথে নেপালের বাণিজ্য ঘাটতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা কোনো হিসাবের মধ্যেই পড়ে না। নেপালের গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে নেপাল চীন থেকে আমদানি করেছে ২৩৩.৯২ ডলারের পণ্য। পক্ষান্তরে নেপাল চীনে রফতানি করেছে মাত্র এক বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এর থেকে বোঝা যায়, বাণিজ্য ঘাটতিটা কোন পর্যায়ে। এ নিয়েও নেপাল চিন্তিত। আরো অনেক বিষয়ে চীনের সাথে বোঝাপড়ার ব্যাপার আছে। তবে চীন চায় প্রতিবেশী দুই ক্ষমতাশালী শক্তির মাঝখানে নেপাল যেন নিরপেক্ষ থাকে। তাই ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় নেপাল নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছে।
কিন্তু নেপালের এখন মূল সঙ্কট হচ্ছে সরকারের অস্থিতিশীলতা। বহু জাতি-গোষ্ঠীতে বিভক্ত নেপালে ইতোমধ্যে যে কয়টি নির্বাচন হয়েছে, তার কোনোটিতেই কোনো দল এককভাবে সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। প্রতিবারই একটি জোট সরকার জাতি দেখতে পায়। কিছুদিনের মধ্যেই তা ভেঙে যায়। নেপালি একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, নেতাদের অপরিসীম লোভ, স্বজনপ্রীতি ও স্বার্থপরতাই এ নাজুক অবস্থার জন্য দায়ী। তাই নেপালের অভিজ্ঞ মহলের অভিমত হচ্ছে, রাজনৈতিক নেতাদের জোট সরকারের বাস্তবতা মেনে নিয়ে একটি স্থায়ী সরকারের কথা ভাবতে হবে। তবে রাজনৈতিক বিভক্তি থাকা সত্ত্বে¡ও নেপালের রাজনীতিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে এমন একটি সংবিধান উপহার দিতে পেরেছেন, যেখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় রাষ্ট্রের পরিবর্তে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে। এর আগে নেপাল সাংবিধানিকভাবে হিন্দু রাষ্ট্র ছিল। এটাই ভারতের বিজেপি সরকার মেনে নিতে পারেনি।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক