স্বদেশ ডেস্ক: জম্মু-কাশ্মির পুনর্গঠন বিলের প্রস্তাব এবার ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভাতেও বিপুল ভোটে পাস হয়েছে। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ৩৬৬ এবং বিপক্ষে পড়ে ৬৬ ভোট।
এর আগে সোমবার সকালে ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রস্তাব করেন। সংসদের অনুমোদনের পরই প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ এই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন। প্রেসিডেন্টের সইয়ের সঙ্গে সঙ্গেই কাশ্মিরকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেয়া ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
এরপর মঙ্গলবার সারা দিন কাশ্মিরের পুনর্গঠন বিলের প্রস্তাব নিয়ে লোকসভায় আলোচনা চলে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিলের সমর্থনে নিজের প্রস্তাব দেন। লোকসভায় দাঁড়িয়ে অমিত শাহ বলেছেন, ‘৩৭০ ধারার কারণে মানুষের মনে সংশয় জাগত, কাশ্মির আসলেই ভারতের অংশ কি না। এ ধারা বাতিলের পর এখন ভারত ও কাশ্মিরের মধ্যকার দেয়াল দূর হবে। জম্মু-কাশ্মির যে চিরকাল ভারতেরই থাকবে, তা নিশ্চিত করবে এই বিল।‘
অমিত শাহের পাল্টা কংগ্রেস নেতা মনীশ তিওয়ারি বলেন, ‘সংবিধানের ৩ নং ধারায় উল্লেখ করা রয়েছে যে, কোনও রাজ্যের পুনর্বিন্যাস করতে গেলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বিধানসভায় আলোচনা করতে হবে। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তা কি হয়েছে?’ মনীশের পাল্টা বিজেপির পক্ষ থেকে তেলঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ ভাগের প্রসঙ্গ তোলা হয়।
আরেক কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অমিত শাহ টেনে এনেছেন জওহরলাল নেহরুকেও। নেহরু কাশ্মির ইস্যুকে জাতিসংঘ পর্যন্ত না টানলে পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মিরের কোনো অস্তিত্বই থাকত না, এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। অমিত শাহ বলেছেন, ‘কাশ্মির ইস্যুকে জাতিসংঘে কে নিয়ে গিয়েছিল? পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। ৩৭০ ধারা বাতিলের এ সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল তা ইতিহাস ঠিক করে দেবে। কিন্তু যখনই এ বিষয়ে আলোচনা হবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথা মানুষ স্মরণ করবে।’
পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মিরের দাবির বিষয়ে ভারত এক চুলও ছাড় দেবে না, এমন কথাও বলেছেন অমিত শাহ। মোদি লোকসভায় উপস্থিত থাকা অবস্থায়ই অমিত শাহ বলেছেন, ‘বিজেপি কিংবা নরেন্দ্র মোদি কেউই পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মিরের বিষয়ে হাল ছেড়ে দিতে পারে না। অতীতের যেকোনো সময়ের মতোই পাকিস্তান অধ্যুষিত কাশ্মিরের প্রত্যেক অংশের ওপর আমাদের দাবি অব্যাহত থাকবে।’
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ‘পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল’ উল্লেখ করে তাঁদের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, ‘তাঁদের সঙ্গে কথা বলার দরকার কী? আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চাই না, বরং কাশ্মিরের জনগণের সঙ্গে কথা বলতে চাই।’
অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন বা এআইএমআইএম সভাপতি ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক ভুল হিসেবে আখ্যা দিলে অমিত শাহ বলেন, ‘এটি কোনো ঐতিহাসিক ভুল নয়। বরং আমরা একটি ঐতিহাসিক ভুলকে সংশোধন করছি।’
অমিত শাহের বক্তব্যের পরপরই লোকসভায় এই বিল পাস হয়। এর আগে রাজ্যসভায় মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি, নবীন পট্টনায়েকের বিজু জনতা দল, জগন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস, চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি ও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির সমর্থন পেয়ে বিল পাস করেছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি।