স্বদেশ ডেস্ক: তীব্র গরমে আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বসা রাজধানীর অস্থায়ী পশুর হাটগুলোয় হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। ভিন্ন পরিবেশ ও অসহ্য গরমের সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে গ্রামগঞ্জ থেকে আনা গরু-মহিষগুলো। গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটে গতকাল গরম সহ্য করতে না পেরে স্ট্রোক করে মারা গেছে মেহেরপুর থেকে আনা টাইগার নামের ৩০ মণ ওজনের একটি গরু। বিভিন্ন হাটে অসুস্থ হয়ে পড়েছে আরো অন্তত ডজনখানেক পশু। গরমের তীব্রতা থেকে প্রিয় পশুকে রক্ষায় দিন-রাত পাখা করে চলেছেন অনেক বেপারি।
টাইগারের মালিক মেহেরপুরের আব্দুর রাজ্জাক জানান, ৮-১০ লাখ টাকায় বিক্রির আশায় গরুটি নিয়ে গাবতলীতে এসেছিলেন তিনি। গতকাল সকালেও গরুটি ভালো ছিল। গোসল করানোর পর হঠাৎ দেখি গরুটি হাঁসফাঁস করছে, চোখের মণি উল্টে গেছে। এরপর ধপাস করে গরুটি মাটিতে পড়ে যায়। অসুস্থ হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই গরুটি মারা যায় বলে জানান আব্দুর রাজ্জাক। প্রায় দেড় বছর আগে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা দিয়ে গরুটি কিনেছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি জানান, বাড়িতে থাকা অবস্থায় বেপারিরা গরুটি পাঁচ লাখ টাকায় কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু বেশি দামের আশায় টাইগারকে নিয়ে গাবতলী এসেছিলেন তিনি।
বিভিন্ন পর্যায়ের হাট ইজারাদার ও গরুর বেপারির সাথে কথা বলে জানা যায়, তীব্র গরমের সাথে দীর্ঘ যাত্রা শেষে রাজধানীতে পৌঁছানোর পর এসব পশুর বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে। পশুগুলো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাট এলাকার বাইরে ঠাণ্ডা জায়গায় রেখে চিকিৎসা করিয়ে আবার হাটে ফেরত আনা হচ্ছে। তা ছাড়া অল্প অসুস্থতার ক্ষেত্রে পশুকে স্বস্থানে রেখেই চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলছেন মালিক ও বেপারিরা। চিকিৎসকদের পরামর্শে বেপারিরা পশুকে ওষুধ খাইয়ে সেবা দিয়ে বিক্রির জন্য হাটেই রাখছেন। গরমের কারণে পশুর যে রোগগুলো সাধারণত দেখা দিচ্ছে, সেগুলো কোরবানির ক্ষেত্রে ক্ষতিকর নয় বলে নিশ্চিত করেছেন বিশেষজ্ঞেরা।
যে ধরনের রোগ ও লক্ষণ পশুর হাটে দেখা গেছে সেগুলো হলো- নাক-মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা নিসৃত হওয়া, শরীর ব্যথা, খাবারে অরুচি, পেট ফাঁপা ও ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা। বেশির ভাগ বড় আকারের গরুর ক্ষেত্রে এসব পরিস্থিতি দেখা গেছে। ছাগল কিংবা মহিষ ও তুলনামূলক মাঝারি ছোট আকারের গরুর ক্ষেত্রে এ ধরনের রোগের প্রভাব খুব কম।
হাটের চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে, গরমে ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভ্রমণ করার কারণে অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ, শরীর ব্যথা, খাবারে অরুচি, পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দেয়। ওষুধ খেলে আবার ঠিক হয়ে যায়। এই গরুগুলো আকারে বেশ বড়। শরীরে চর্বি বেশি। এরা ঠাণ্ডা পরিবেশে অনেক যতেœ বড় হয়। কোরবানির সময় এই ধকলটা এরা নিতে পারে না। তবে এসব বড় কোনো সমস্যা না।
গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকায় এবার অস্থায়ী পশুর হাট বসছে ২৩টি। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৯টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বসছে ১৪টি অস্থায়ী হাট। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন চাচ্ছে শেষ মুহূর্তে আরো দুইটি হাটের অনুমতি দিতে। ৩০০ ফিট সড়কের হাটের টেন্ডার আহ্বান করেও পরে তা বাতিল করা হয়। বেশির ভাগ হাটের প্রস্তুতিই প্রায় সম্পন্ন। তবে ডেঙ্গু সমস্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করায় কর্তপক্ষকে এবার সেদিকেই বেশি নজর দিতে হচ্ছে। হাটগুলোর টেন্ডার থেকে এবার দুই সিটির আয় হয়েছে ২২ কোটি টাকারও বেশি।
ডিএসসিসির অস্থায়ী হাটগুলো হলো- উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সঙ্ঘের মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ঝিগাতলা-হাজারীবাগ মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি স্থান, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশ এলাকার খালি জায়গা, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সামসাবাদ মাঠসংলগ্ন আশপাশের খালি স্থান, কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, শনিরআখড়া ও দনিয়া মাঠসংলগ্ন ফাঁকা জায়গা, ধূপখোলা মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউয়ারটেক মাঠসংলগ্ন আশপাশ এলাকার স্থান, আফতাবনগর ইস্টার্ন হাউজিং মেরাদিয়া মৌজার সেকশন-১ ও ২, খিলগাঁও রেলগেটের পশুর হাট এবং পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন পশুর হাট।
ডিএনসিসির অস্থায়ী হাটগুলো হলোÑ উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিম অংশে ও ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের ফাঁকা জায়গা; মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়কসংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইনসের খালি স্থান; মিরপুর সেকশন-৬, ওয়ার্ড ৬-এর (ইস্টার্ন হাউজিং) খালি জায়গা; মিরপুর ডিওএইচএসের উত্তর পাশের সেতু প্রপার্টি সংলগ্ন ফাঁকা স্থান; ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট খেলার মাঠ; ভাটারা (সাঈদ নগর) পশুর হাট; বাড্ডার ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাব নগর) ব্লক-ই, আফতা বনগর সেকশন ৩-এর খালি জায়গা এবং কাওলা-শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন এলাকা। এ ছাড়া গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাট তো রয়েছেই।