স্বদেশ ডেস্ক: ভারতের রাজধানী দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দিনভর দফায় দফায় বৈঠক আর অন্য দিকে পাকিস্তানের হুঁশিয়ারির আবহে উৎকণ্ঠার পারদ চড়ছিল ভারত-অধিকৃত কাশ্মিরে। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল না, দিল্লি ঠিক কী পদক্ষেপ করতে চলেছে। রোববার রাতে দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। গৃহবন্দি করা হয়েছে বিধায়ক সাজ্জাদ লোনও। গ্রেফতার সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামি এবং কংগ্রেস নেতা উসমান মজিদ। এর পর কী হবে, এই উদ্বেগেই এখন থমথমে উপত্যকা। অনির্দিষ্ট কালের জন্য জারি করা হয়েছে কার্ফু।
কিছু যে ঘটতে চলেছে, সে ইঙ্গিত অবশ্য মিলছিল কয়েক দিন ধরেই। অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করে দিয়ে হঠাৎই কাশ্মিরে বাড়ানো হয়েছিল আধা সামরিক সৈন্য। সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হানার খবর পেয়েই কী এই ব্যবস্থা, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে সরকারের, জল্পনা জমছিল তা নিয়েই। ফেরানো শুরু হয়েছিল পর্যটকদের। রোববার সন্ধ্যায় একটি সূত্রে শোনা যায়, জম্মু-কাশ্মির পুলিশকে অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে কথা অবশ্য স্বীকার করেনি সরকার। তবে সূত্রের খবর, শোপিয়ানের মতো স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে থানা পাহারা দিচ্ছে বিএসএফ। বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। ফিরিয়ে আনা হয়েছে যুব ক্রিকেটারদেরও।
এ দিন কাশ্মীরের মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা মেহবুবার বাড়িতে এক সর্বদল বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা খর্ব করার চেষ্টা হলে একযোগে তার প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। তার পরপরই তাদের কাউকে গ্রেফতার, কাউকে গৃহবন্দি করা হয়। মেহবুবা-ওমর দু’জনেই টুইট করে নিজেদের গৃহবন্দিত্বের কথা সকলকে জানিয়েছেন। এই কড়াকড়ির সিদ্ধান্ত কি আজ দিল্লির বৈঠকেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল? স্পষ্ট করে বলেননি কেউ।
রোববার সকালে সংসদে পৌঁছেই অমিত শাহ সকলের আগে ডেকে পাঠিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গৌবাকে। বিদায়ী স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলোচনার পরে আসেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। শুরু হয় তিনজনের বৈঠক। কিছুক্ষণ পরে ওই বৈঠকে যোগ দেন দুই গোয়েন্দাপ্রধান অরবিন্দ প্রধান ও সমন্তকুমার গয়াল। পরে আলাদা ভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জম্মু-কাশ্মিরের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অমিত।
এরই মধ্যে ভারতকে হুঁশিয়ারির বার্তা দেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। নিয়ন্ত্রণরেখায় কেরন সেক্টরে ৩১ জুলাই রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্যাট বাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছিল ভারত। সেই হামলায় নিহত পাঁচ পাকিস্তানি সেনাসদস্যের লাশ পাকিসতানি বাহিনীকে নিয়ে যেতে বলেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। কিন্তু ওই হামলার কথা অস্বীকার করে উল্টে এ দিন ভারতের বিরুদ্ধেই সুর চড়িয়েছেন ইমরান।
টুইটারে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘‘নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতের হামলার নিন্দা করছি। এটা মানবাধিকার আইন ও ১৯৮৩ সালের প্রথাগত অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে চুক্তির পরিপন্থী। এ নিয়ে জাতিসঙ্ঘের সতর্ক হওয়া উচিত। ভারত কোনো ভুল পদক্ষেপ করলে পাকিস্তান জবাব দেবে।’’ এর পরেই তিনি লেখেন, ‘‘কাশ্মির সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হলে তবেই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় রাখা সম্ভব। এখনই মধ্যস্থতা করার সময়।’’
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী রাজা ফারুক হায়দর পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।