মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৯ পূর্বাহ্ন

৮০ টাকার মশা প্রতিরোধক ক্রিম বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়

৮০ টাকার মশা প্রতিরোধক ক্রিম বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়

স্বদেশ ডেস্ক: বাংলাদেশে প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মশা প্রতিরোধক পণ্যের দাম। সারাদেশে ডেঙ্গু সতর্কতার কারণে মশা নিরোধক ক্রিম, জেলসহ নানা পণ্যের দাম এক ধাপে বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।

ঢাকার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যে মসকিটো রেপেলেন্টের দাম ছিল ৮০ থেকে ১২৫ টাকা সেই একই পণ্য এখন বিক্রি করা হচ্ছে ৩০০টাকা থেকে ৫২০ টাকায়।

এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে ভোক্তাদের নানা অভিযোগের মুখে রবিবার সকালে ঢাকার কলাবাগান এলাকায় অভিযানে যায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সেখানে গিয়ে দেখা যায় বেশিরভাগ ফার্মেসি তাদের ইচ্ছামতো দাম রাখছে।

এ ব্যাপারে অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক ভোক্তা অভিযোগ করেছেন যে এই ক্রাইসিস মোমেন্টে তাদের কাছে এসব মসকিটো রেপেলেন্টের দাম কয়েকগুণ বেশি রাখা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও তারা কিনতে বাধ্য হয়েছে। ওইসব ক্রেতাদের কাউকেই তারা কোন ক্যাশমেমো দেন নাই।”

“এজন্য আমাদের কয়েকজন সদস্য ছদ্মবেশে ক্রেতা হয়ে এসব ফার্মেসিতে যায়। যেই ওডোমসের দাম ছিল ৭০/৮০ টাকা সেটা তাদেরকে কিনতে হয়েছে ৫০০ টাকায়। মানে কতোগুণ বেশি দাম খালি ভাবেন।”

মশা প্রতিরোধক এই পণ্যগুলোর বেশিরভাগই আসছে ভারত থেকে এবং এগুলো আমদানির কোনও বৈধ কাগজপত্রও ফার্মেসিগুলোর দেখাতে পারেনি। মূলত তারা ‘লাগেজ পার্টির’ মাধ্যমে অবৈধভাবে এই ক্রিমগুলো আনেন।

অবৈধভাবে পণ্য আমদানি সেইসঙ্গে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত দাম রাখার অভিযোগে কলাবাগানের তিনটি ফার্মেসিকে সাময়িক বন্ধের পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

যদিও বিক্রেতাদের দাবি সরবরাহ কম কিন্তু চাহিদা বেশি থাকার কারণে তাদেরকে এসব পণ্য আমদানিকারকদের থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে এসব পণ্য বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

এক বিক্রেতা বলেন, “বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, সেদিন এক ভদ্রলোক হাতে করে কিছু ওডোমস নিয়ে আসছে। উনি বলছেন যে ইন্ডিয়াতেও নাকি ডেঙ্গুর কারণে এগুলার দাম বেশি। চাহিদা বেশি তাই কিনেছি। আমার কেনাই পড়েছে ৪৫০ টাকা। এখন আমরা লস করে তো আর বিক্রি করবো না।”

তবে বিক্রেতাদের এমন যুক্তি মানতে নারাজ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। দেশের এমন সংকটময় পরিস্থিতিকে পুঁজি করে যারা মুনাফা লুটছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি করে দিয়েছেন অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।

“আমি গত সপ্তাহে নিজে এসে এই ফার্মেসিগুলোকেই সতর্ক করে গেছি যে আমদানীকারকরা বেশি দাম চাইলে আপনারা কিনবেন না। যখন ব্যবসায়ীরা কেনা বন্ধ করে দিবে, তখন তো তারা আগের দামে দিতে বাধ্য হবে।”

এখানে আমদানীকারক ও ব্যবসায়ীদের একটি চক্র বা সিন্ডিকেট বাজারে সংকট তৈরি করে মুনাফা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এই বিষয়টি এফবিসিসিআই থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের যে বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে, সেগুলোর নজরে আনা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

“একটা চক্র এখানে কাজ করছে। কিন্তু একজন ভোক্তা কেন ঠকবেন? প্রতিটা জেলায় এখন ব্যবসায়ীদের চেম্বার আছে, এফবিসিসিআই আছে। তাদের কিন্তু এখন আলাদা টিম করে কঠোরভাবে এগুলো মনিটর করার সময় এসেছে।”

এদিকে ডেঙ্গু নিয়ে সারাদেশে যখন আতঙ্ক বিরাজ করছে, তখন ভীষণ প্রয়োজনীয় এই পণ্যগুলোর দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ভোক্তারা।

কলাবাগানের বাসিন্দা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, “দাম হয়তো বাড়াতে পারে, তাই বলে এতো বেশি? এতো দামে তো সবাই এগুলো কিনতেও পারবে না। দেশের যে অবস্থা, এই ব্যবসায়ীদের তো উচিত মানুষের দিকটা ভাবা। আগের দামটাই তারা রাখুক। কিন্তু এইভাবে লাভ করতে থাকলে সাধারণ মানুষেরই তো ক্ষতি হচ্ছে।”

ফার্মেসির পাশাপাশি সুপারশপগুলোয় এই পণ্যগুলোর দাম কেমন রাখা হচ্ছে তা দেখতে গুলশান-২ নম্বরের একটি সুপার শপে অভিযানে যায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

সেখানে দেখা যায় তারা এই মসকিটো রেপেলেন্টগুলো প্যাকেটের গায়ে লেখা দামের চাইতে পাঁচগুন বেশি দামে বিক্রি করেছে। ভোক্তাদের চাহিদার সুযোগে ব্যবসায়ীদের এ ধরনের আচরণের নিন্দা জানান অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আফরোজা রহমান। তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীরা বুঝে গেছে যে এখন মানুষ যে করেই হোক এগুলো কিনবে। তারা ওই সুযোগটা নিচ্ছে। এটা পুরোপুরি বেআইনি এবং অন্যায্য।”

অতিরিক্ত দাম রাখার কারণে গুলশানের একটি ফার্মেসি ও সুপারশপের ড্রাগস কর্নার সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয় সেসময়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877