সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১২:৪০ অপরাহ্ন

যানজট ভোগান্তি থেকে রেহাই নেই এবারও

যানজট ভোগান্তি থেকে রেহাই নেই এবারও

স্বদেশ ডেস্ক:

যানবাহন চলাচলে এবার বিধিনিষেধ না থাকায় গতবারের তুলনায় আসন্ন ঈদে প্রায় দ্বিগুণসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছাড়তে পারেন। পথে পথে তাদের ভোগান্তিতে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। যানজট, ভাঙা রাস্তার দুর্ভোগ সবই ভয় জাগাচ্ছে। এ ছাড়া ফেরি সংকট এবার বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। এর সঙ্গে যোগ হতে পারে তীব্র গরম। ঈদ আনন্দযাত্রায় টিকিটের বাড়তি দাম, যানবাহন সংকট, ভাঙাচোরা রাস্তার পাশাপশি সড়ক-মহাসড়কে যানজটের সঙ্গে যুদ্ধ করে এবারও যেতে হবে বাড়ি।

ঈদের আগের চারদিনে ঢাকা ছাড়তে পারেন প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। প্রতিদিন যাবেন গড়ে ৩০ লাখ মানুষ। যাত্রীদের বড় অংশ যানবাহন সংকটে পড়বে। এর সঙ্গে যোগ হবে পথের ভোগান্তি ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদীউজ্জামান বলেন, প্রতিবারই ঈদের আগে বলা হয়, যাত্রা নির্বিঘ্ন হবে। এর পরও ভোগান্তি হয়। কী কারণে, কার দায়ে ভোগান্তি হয়েছে, তা কি দেখা হয়? এটা দেখলে ভোগান্তি কমবে।

ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন সড়কে চলমান সংস্কার ও নির্মাণকাজ ঈদের আগে-পরে ১৪ দিন বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সড়কে সংস্কার ও নির্মাণকাজ চলায় যানবাহনের গতি কমে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। ২৭ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত সব ধরনের সংস্কার ও নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার পাশাপাশি মহাসড়কের যেসব অংশে বেশি যানজট হয়, সেসব স্থানে সার্বক্ষণিক হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআই।

এদিকে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর গত শনিবার এক বৈঠকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে সব মহাসড়ক চলাচলের উপযোগী করার নির্দেশ দেয়। ওই বৈঠকে বলা হয়, যেখানে যেখানে মেরামত দরকার, তা আগে করে ফেলতে হবে। অবশ্য এর আগে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে রাস্তা মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা শহর পার হতেই বেশ ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। পাঁচ বছর ধরে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার যাত্রী ভোগান্তি দিয়ে আসা বিআরটির (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট) নির্মাণকাজ এবারও ভোগাবে। আশুলিয়ার নবীনগর মোড় পার হতেই যানজটে ভুগতে হয়। আবার এই মহাসড়কের টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক। সেতুও দুই লেনের। যানবাহনগুলো দুই লেনের মুখে আটকে যায়। সেখান থেকেই যানজটের শুরু। বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল দিতে গিয়েও ঈদের সময় দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম দিকে মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ফলে মহাসড়কটির কোথাও সঙ্কুচিত, আবার কোথাও একমুখী। ঈদের সময় অতিরিক্ত গাড়ির চাপে এই মহাসড়কে যানজটে পড়তে হয়।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পার হতেই ভাঙাচোরা সড়কের মুখোমুখি। বিআরটির নির্মাণকাজের কারণে ১২ লেনের বিশাল প্রশস্ত সড়ক ছয় লেনে এসে ঠেকেছে। উত্তরায় জসীমউদ্দীন রোডের সামনে ফ্লাইওভারের সরঞ্জাম রাখায় সরু হওয়া সড়কে যানজট ঠেলে টঙ্গী সেতুতে পৌঁছাতে লাগে ঘণ্টাখানেক। বিআরটির জন্য ঢাকা ও গাজীপুরের সীমান্তে তুরাগ নদে চলছে ১০ লেনের সেতুর নির্মাণকাজ। এ কারণে পাশে অস্থায়ীভাবে নির্মিত স্টিলের সাঁকো পাড়ি দিয়ে গাড়ি ঢাকা ছেড়ে গাজীপুরে ঢোকে। সেতু পার হয়ে চেরাগ আলী পর্যন্ত ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, ঢাকা থেকে রংপুর যেতে এখনই ১২-১৩ ঘণ্টা লেগে যায়। ঈদের সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

ঈদের সময় যানজটে ভোগান্তি হতে পারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও। এই মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশের বারপাড়া এলাকায় চার লেনের সংস্কারকাজের কারণে দু-তিন কিলোমিটার এলাকায় এখন প্রায় নিয়মিতই যানজট হচ্ছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুর থেকে ভুলতা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশে যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। এর কারণ, মহাসড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে যানবাহনের স্ট্যান্ড ও অবৈধ পার্কিং। কাঁচপুর সেতুর নিচে শ্যামবাজার বাসস্ট্যান্ড ও তারাব চৌরাস্তায় মহাসড়ক দখল করে গড়ে তোলা লেগুনাস্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণেও যানজট হচ্ছে।

সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্য বলছে, বাস, ট্রেন, লঞ্চ, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলে করে ঈদের সময়ে প্রতিদিন ১৭ থেকে ১৮ লাখ মানুষের ঢাকা ছাড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি ১২ থেকে ১৩ লাখ মানুষকে ঢাকা ছাড়তে হবে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্রেনের ছাদ ও লঞ্চের অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁঁকি বাড়বে।

এআরআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ঈদে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি দুর্ঘটনা হয়েছে। এবার দ্বিগুণ মানুষের গ্রামে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় এবং সড়ক ও যানবাহনের সেই সক্ষমতা না থাকায় দুর্ঘটনা আরও বেশি হতে পারে। যাত্রীদের চাপে সড়কের ব্যবস্থাপনা ‘কোমায়’ চলে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

সড়কে গাড়ি ও যাত্রীর চাপ স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি হয়ে গেলে বিদ্যমান ব্যবস্থাপনা কাজে লাগবে না বলে মনে করেন অধ্যাপক হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ২০ রমজানের পর বন্ধ হয়ে যাবে। পরিবারের সদস্যদের যাদের কাজ নেই, তাদের ২০ রমজান থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার পরামর্শ তার। তাহলে ঈদযাত্রায় যানবাহনের সংকট ও ভোগান্তি হওয়ার যে আশঙ্কা রয়েছে, তা থেকে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে।

গাবতলী পেরিয়ে আমিনবাজার ও হেমায়েতপুর ঘুরে দেখা যায়, লোকাল গাড়ির লেনে বসেছে বাজার ও পার্কিং। মহাসড়কের লেনে রিকশা, ইজিবাইক, অটোরিকশা থেকে শুরু করে সব ধরনের গাড়িই চলছে। ঠিক একই অবস্থা দেখা যায় সাভার, বাইপাইল, জিরানীসহ অন্য এলাকাতেও। যে যার মতো সড়ক পার হচ্ছে। অযান্ত্রিক গাড়িগুলো যেখানে ইচ্ছা টার্ন নিচ্ছে। এসব বিশৃঙ্খলায় মহাসড়কের গাড়ি কাক্সিক্ষত গতিতে চলতে পারছে না।

ঢাকার আরেক প্রবেশপথ পোস্তগোলা সেতু (প্রথম চীন মৈত্রী সেতু)। যান চলাচল একেবারেই নির্বিঘœ। তারপরও ভোগাচ্ছে সেতুতে পুরানো পদ্ধতিতে গাড়ি থামিয়ে হাতে তোলা টোল। টোলের কারণে যানজট হচ্ছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রবেশপথ কাঞ্চন সেতুতেও। ঢাকা বাইপাসের নির্মাণকাজের কারণে গোলকান্দাইল থেকে মীরেরবাজার পর্যন্ত ১০-১৫ কিলোমিটার পথে যানজট লেগেই আছে। যারা এই পথ হয়ে ঢাকা ছাড়েন, ঈদে তাদের ভুগতে হবে। ঢাকার আরেক প্রবেশপথ কাঁচপুরে দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের পর শিমরাইলে আগের ভোগান্তি নেই। তবে এবার শিমরাইল ও কাঁচপুরে যানজটের শঙ্কা তৈরি করেছে সেতুর নিচে থাকা ইউটার্ন এবং কাঁচপুর সেতুর পূর্বপাশে সিলেটমুখী লেনে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামার কারণে।

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গত সপ্তাহে অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করেছে সওজ। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ঈদযাত্রায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। টার্মিনাল থেকে আটকে দিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত নামানো হবে। সওজের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠানের দাবি, সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা ভালো। রাস্তার কারণে যানজট হওয়ার কারণ নেই।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877