স্বদেশ ডেস্ক: ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো ডেঙ্গুরোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সব জায়গাতেই রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে রেফার করা হচ্ছে ঢাকায়। মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, রাঙ্গামাটি, সাতক্ষীরা, রংপুর ইত্যাদি জেলায় হাসপাতালগুলোতে এখনো অনেক ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ দিকে দিন দিন ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে আছে মানুষ।
মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১২০ জনে পৌঁছেছে। শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৮ জন ডেঙ্গু রোগী মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালে আরএমও ডা: মো: লুৎফর রহমান।
এখন পর্যন্ত মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ৮০ জন এবং মুন্নু মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ৪০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য ৯ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা: লুৎফর রহমান বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তারা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরায় এখন পর্যন্ত এ জেলায় ৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ১৬ জন। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ২৫ জন। উন্নত চিকিৎসা জন্য অন্যত্র রেফার করা হয়েছে আরো দুইজনকে। এসব রোগীর বেশির ভাগই ঢাকা থেকে ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরায় ফিরে এসেছেন। আক্রান্তদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রতিদিন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কিত সাতক্ষীরার সাধারণ মানুষ।
আতঙ্ক কাটছে না রংপুরে
রংপুর অফিস জানায়, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত ১৬ দিনে হাসপাতালটিতে ১১২ জন ডেঙ্গু শনাক্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ২০ জন চিকিৎসা শেষে ফিরে গেছেন। এ দিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে রংপুর সিটি মেয়রের নেতৃত্বে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। তবুও আতঙ্ক কাটছে না নগরবাসীর।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ কে এম শাহেদুজ্জামান নয়া দিগন্তকে জানান, গত ১৯ জুলাই থেকে গতকাল শনিবার বিকেলে পর্যন্ত ১১২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সাতজন রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় নিজ বাড়িতে আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি ১০৭ জনই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৫ জন শিশু এবং ১২ জন মহিলা রয়েছেন। ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ২০ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: সুলতান আহমেদ জানান, ইতোমধ্যেই ডেঙ্গু শনাক্তে পরীক্ষার সরঞ্জামাদি আনা হয়েছে। রোগীরা বিনামূল্যে এখানে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে পারছেন। সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা নয়া দিগন্তকে জানান, মানুষকে সচেতন করে ডেঙ্গুর হাত থেকে রক্ষার করার জন্য করপোরেশন অন্যান্য প্রশাসনের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
রাঙ্গামাটিতে ৭ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত
রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা জানান, রাঙ্গামাটিতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সাতজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন, রাঙ্গামাটি বাঘাইছড়ির উপজেলার সোমা চাকমা (১৭), শহরের বনরূপা এলাকার আতিথ্য চাকমা (২০), শহরের দক্ষিণ কালিন্দিপুর এলাকার তোদিতা দেওয়ান (৭), তবলছড়ির মাতৃমঙ্গল এলাকার মো: ইকবাল হোসেন (২৭) টিটিসি এলাকার সৈকত চাকমা (২২) ও জ্ঞানবিকাশ চাকমা (৩৩), অনিন্দিতা চাকমা (২২) রাঙ্গামাটি সদর। এর মধ্যে ইকবাল হোসেনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে প্রেরণ করা হয়েছে। দুইজন রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রাঙ্গামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডা: শহীদ তালুকদার বলেন, রাঙ্গামাটি মেডিক্যাল কলেজের একজন অধ্যাপকের নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক মেডিক্যাল টিমটি প্রস্তুত রয়েছে। যারা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের বিনামূল্যে সব পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং ডেঙ্গু রোগের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এক লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
রাজবাড়ীতে ৫০ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত
রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ীতে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। রাজবাড়ীর পাঁচ উপজেলায় গতকাল শনিবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত করা হয়েছে নতুন ১০ জন ডেঙ্গু রোগী। সব মিলিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে ১৮ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ১৫ জন, বালিয়াকান্দিতে একজন, গোয়ালন্দ ও পাংশায় একজন করে রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। ডেঙ্গুর এ বিস্তারে সাধারণ মানুষ, হাসপাতালে অবস্থানরত অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজনদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক আতঙ্ক।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা: মো: মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, শনিবার সকাল পর্যন্ত জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট ৫০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা গেছে। এর মধ্যে বর্তমানে ১৮ জন ভর্তি রয়েছে এবং বাকিরা ইনডোর ও আউটডোরে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। ডেঙ্গু শনাক্তে বিনামূল্যে পরীক্ষা চলছে। রাজবাড়ীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কোনো রোগীর অবস্থাই আশঙ্কাজনক নয় বলেও জানান তিনি।
মুন্সীগঞ্জে ডেঙ্গু রোগী ৩৫ জন
মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জেলায় এ পর্যন্ত ৩৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা: শেখ ফজলে রাব্বি। এদের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ছয়জন, সিরাজদিখানে পাঁচজন এবং শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে চারজন, সিরাজদিখানে দুইজন ও শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজনসহ মোট সাতজনকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে ১২ জনসহ তিনটি হাসপাতাল থেকে ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং ১৪ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ যাবতীয় ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ডেঙ্গু রোগীরা। এতে দরিদ্র রোগীদের হিমশিম পোহাতে হচ্ছে। সদর উপজেলার হাতিমারা থেকে পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি এক ডেঙ্গু রোগী জানান, তিনি একজন মুদি দোকানদার। ডেঙ্গু পরীক্ষা থেকে শুরু করে অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং স্যালাইন, ওষুধ সবই বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। দুর্গাবাড়ি থেকে থেকে আসা এক নারী রোগী জানান, তিনি আট দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত। শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাইরে থেকে ওষুধ, স্যালাইন কিনে এনেছেন। কিন্তু কোনো ডাক্তার, নার্স স্যালাইন পুশ করতে আসছে না।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা: তোফাজ্জল হোসেন জানান, কিছু কিছু পরীক্ষা রোগীদের বাইরে থেকে করতে হচ্ছে। সাপ্লাই সীমিত হওয়ায় দরিদ্র ও ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা যাদের বেশি তাদের ডেঙ্গু স্পিরিং টেস্ট করা হচ্ছে।
ফরিদপুরে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৩৪ জন
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরের গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৩৪ জন ব্যক্তি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত ফরিদপুরের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সংখ্যা ১৪০ জনে পৌঁছেছে। এখন পর্যন্ত প্রতিদিনই জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব রোগীর বেশির ভাগই এসেছেন ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে। জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা: এনামুল হক জানান, বর্তমানে ডেঙ্গু রোগে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ১০৮ জন ছাড়াও ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল ও বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে ৩২ জন রোগী রয়েছেন। সব মিলিয়ে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪০ জন।
শরীয়তপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী
শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, শরীয়তপুরে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গতকাল শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে ৩৪ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন শরীয়তপুর সিভিল সার্জন অফিস। তাদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ১২ জন এবং জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুইজন ভর্তি হয়েছে।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন মো: খলিলুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের সংখ্যা বাড়লেও জেলা হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা সবাই শঙ্কামুক্ত। উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্ত করার পরীক্ষা করা হচ্ছে। শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত শরীয়তপুর জেলায় ৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।
নীলফামারীতে ২ দিনে ভর্তি ৬ ডেঙ্গু রোগী
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীতে গত দু’দিনে নতুন করে ছয়জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা হলেনÑ জেলার ধর্মপাল গ্রামের শাহাবুদ্দিন, সৈয়দপুর কয়ানিজ পাড়ার বাসিন্দা ও পৌরসভার লাইসেন্স সহকারী কাজী আসাদুজ্জামান, ইসলামবাগ এলাকার সোহেল খান, সৈয়দপুর শহরের কয়ানিজ পাড়ার মাহবুব হাসান, নতুন বাবু পাড়ার কাবিরা ইয়াসমিন, কামারপুকুর দলুয়াপাড়ার শামীম আহম্মেদ। জানা যায়, শনিবার সকালে ঢাকা থেকে জ্বর নিয়ে বাড়িতে আসে শাহাবুদ্দিন। দুপুরে শাহাবুদ্দিন জ্বর নিয়ে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হলে তার অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অপর পাঁচজন রোগী শুক্রবার ও শনিবার সকালে সৈয়দপুর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
রূপগঞ্জে এএসপিসহ শতাধিক ডেঙ্গুরোগী
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ঢাকার খুব কাছে হওয়াতে চরম ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা। এরই মধ্যে রূপগঞ্জ উপজেলায় শতাধিক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় জেলা (গ) সার্কেলের এএসপি, নারী ও শিশুসহ প্রায় শতাধিক রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। উপজেলার আল-রাফি হাসপাতালে ১৫ জন, ইউএস বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩৫ জন, রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স একজন, ডিকেএমসি হাসপাতাল লিমিটেডে ১৩ জন, মেমোরি হাসপাতাল লিমিটেডে চারজন, ভুলতা জেনারেল হাসপাতালে পাঁচজন, মায়ের ছায়া জেনারেল হাসপাতালে দু’জনসহ শতাধিক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। কয়েকজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
পার্বতীপুরে ৭ ডেঙ্গু রোগী
পার্বতীপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরের পার্বতীপুরে গত সাত দিনে নারী-শিশুসহ সাত ব্যক্তি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তারা হলেনÑ পলাশ সরকার (১৭), সুরবালা (৬০), রনিৎ প্রসাদ সোনার (১৭), আরাফাত হোসেন (৯), আসাদ আলী (৩৮), হেলাল হোসেন (২১) ও মাসুমা (২০)। পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: আবদুল্লাহেল মাফি জানান, আক্রান্ত দুইজন রোগী ঢাকা থেকে এসেছেন। অন্য পাঁচজন স্থানীয়। তবে হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। আক্রান্ত রোগী ও পরিবারকে যোগাযোগের জন্য হাসপাতালে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
ভৈরবে কিটস না থাকায় ডেঙ্গু শনাক্ত ব্যাহত
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এনএস-১ কিটস না থাকায় ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই ডেঙ্গু শনাক্ত করা হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোববার এনএস-১ কিটস পৌঁছতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এ দিকে গত বৃহস্পতিবার ভৈরবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে স্কুলছাত্র মো: হামজার (১২) মৃত্যু হয়। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নরশীলপুর গ্রামের ইসরাইল মিয়ার ছেলে ও রাঙ্গুরিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় হামজাকে প্রচণ্ড জ্বরসহ ভৈরব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে তার পরিবার। তখন সে অচেতন অবস্থায় ছিল। তার শরীরে পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫টা ২০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদমীস জানান, এখন পর্যন্ত ভৈরবে ৩৫ জনের মতো ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের পর তারা চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে।
গাইবান্ধায় বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ
গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধায় ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালে ১৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে সিভিল সার্জন জানিয়েছে, গোটা গাইবান্ধা জেলায় এ পর্যন্ত ১৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা গেছে।
এ দিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ভয়ে সামান্য সর্দি, জ্বর, কাশি, ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত রোগীরাও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ফলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ২০০ বেডের গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতালে বেডে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় ওয়ার্ডের মেঝেতে এবং করিডরে ভর্তিকৃত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় পর্যায়ে কেউ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সব ডেঙ্গু রোগীরাই সম্প্রতি ঢাকা থেকে ঘুরে এসেছেন এবং সেখান থেকেই তারা ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে গাইবান্ধায় এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানা গেছে।
রামেক হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় ১৩ নতুন রোগী
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে এখন পর্যন্ত যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন, কিংবা চিকিৎসা নিয়েছেন, তারা রাজশাহীর বাইরে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন। তবে এক সাংবাদিকসহ দু’জন ব্যক্তি রাজশাহীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ দিকে রামেক হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৩ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত ভর্তি রয়েছেন ৬৩ জন। আর সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ১২৪ রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতালের ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৬১ জন ডেঙ্গু রোগী।
রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা: সাইফুল ইসলাম ফেরদৌস জানান, বর্তমানে হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি অংশ ডেঙ্গু ওয়ার্ড করা হয়েছে। সেখানে বেড সংখ্যা ১৭টি। তিনটি বেড নিয়ে হাসপাতালের ১৭ নম্বর কেবিনটিকে ডেঙ্গু কর্নার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশারি টাঙিয়ে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। সেখানেই বেশির ভাগ রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রাজশাহীতে মশারি, কয়েল, অ্যারোসলের চাহিদা বেড়ে গেছে। মশার কামড় থেকে রক্ষা দেয়া লোসন ওডোমসের চাহিদা বেড়েছে ব্যাপক হারে। গত দুই দিন ধরে রাজশাহীর বাজারে ওডোমস পাওয়া যাচ্ছে না।
বরিশালে ডেঙ্গু আতঙ্কে মশারির কেনার ধুম
বরিশাল ব্যুরো জানায়, গোটা দেশের সাথে ডেঙ্গু আতঙ্কে কাঁপছে বরিশাল নগরীসহ জেলার প্রতিটি উপজেলা। প্রতিদিনই আক্রান্ত মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এ অবস্থায় এডিস মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে সবচেয়ে বেড়েছে মশারির ব্যবহার। অনেকেই দিনের বেলায়ও বাসা বাড়িতে মশারি টানিয়ে রাখছেন। যারা সারা বছর ঘরে মশারি ব্যবহার করেন না তারাও এখন বাজারে আসছেন মশারি ক্রয় করতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকা ব্যতীত বরিশালের দশটি উপজেলা কিংবা ছয়টি পৌরসভার কোথাও ডেঙ্গু মোকাবেলায় কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেই। তাই উপজেলা ও পৌর এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে ডেঙ্গু থেকে মুক্ত থাকতে কয়েল, ইলেকট্রিক কয়েল ও ব্যাট, অ্যারোসল স্প্রে থেকে শুরু করে মশা নিধন সংক্রান্ত পণ্যের পাশাপাশি মশারি বিক্রির ধুম পড়েছে। ডেঙ্গু আতঙ্কের কারণে আগের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি মশারি বিক্রি বেড়েছে। অন্যান্য সময় যে মশারির দাম ছিল ২৫০ টাকা সেই একই মশারি এখন ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ দিকে বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিথদিন বেড়েই চলেছে। গতকাল শনিবার এ হাসপাতালে ১৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাসপাতালের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, যার মধ্যে পুরুষ ২০ জন, নারী ১৪ জন ও শিশু একজন। এ দিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঞা।