শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
নিরাপদ হোক একা নারীর ঈদযাত্রা

নিরাপদ হোক একা নারীর ঈদযাত্রা

বহু সংগ্রামের পর নারী ঘর থেকে বাইরে আসতে পেরেছেন। যদিও তা পরিপূর্ণভাবে সম্ভব হয়নি, তবুও সমাজ ও রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে নারী কাজ করছেন কমবেশি। তবে ঘরে কিংবা ঘরের বাইরে- যেখানেই থাকুন না কেন, তিনি নিরাপদ নন। বর্তমানে এমন অনেক উদাহরণ চোখের সামনে। এ বৈরী পরিবেশের মধ্য দিয়েই চলে নারীর জীবন।

জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেক নারীই পরিবার ছেড়ে দূরে থাকেন একাÑ তিনি ছাত্রীই হন আর চাকরীজীবী। অনেকের মতো তারাও ঈদ উদযাপন করবেন পরিবারের সঙ্গে। তাই বাস বা ট্রেনে যাত্রা করবেন একাই। কিন্তু ইচ্ছা করলেই টিকিটটা নিজের সময়মতো হয় না ঈদের মৌসুমে। অনেক সময়ই রাতে যাত্রা করতে হয়।

আবার এমনও হয়, দিনে যাত্রা করেও জ্যামের কারণে দিনে না পৌঁছে কোনো বাস বা ট্রেন মধ্যরাত কিংবা শেষ রাতে গিয়ে পৌঁছায় এবং পুরো যাত্রাপথ তিনি একা। তার দিক থেকে এটা কোনো সমস্যা নয়। তিনি নীরবে পথটুকু পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে চান। অথচ তার পাশের আসনে বসে থাকা কোনো পুরুষযাত্রী (সবাই নয় নিশ্চয়ই) তাকে হেনস্তা করতে পারে যে কোনো সময়Ñ যখন আমরা জানি রূপা, নুসরাত, তনু, রিসাতের কথা।

কয়েকদিন আগেই রাজবাড়ীতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে (জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত, ২৮ জুলাই)। এখানেই আরও খবর রয়েছেÑ বগুড়ার শেরপুরে আরেক সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে বখাটেরা। ওই ছাত্রী প্রতিবেশী এক বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিল। আমরা জানি, বাসে বাড়ি ফেরার পথে রূপা ধর্ষিত ও খুন হন। ছাত্র পড়িয়ে আসার পথে তনু ধর্ষিত ও খুন হন। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় একাধিক ধর্ষণের খবর চোখে পড়ে। দুই বছরের শিশু থেকে ৪৫ বছরের নারীÑ সবাই ধর্ষণের শিকার হন। তার পরও ঈদযাত্রায় অনেক মেয়েই একা যাত্রাপথে থাকবেন এবং থাকবেন শঙ্কিত ও ভীতভাবে।

প্রশ্ন হলো, একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে মানুষের এমন পরিস্থিতি কি মেনে নেওয়া যায়Ñ যখন সভ্যতা ইন্টারনেটের যুগে এসে পৌঁছেছে? এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে এই যে, সভ্যতার উপাদানগত উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আত্মিক উন্নতি সম্ভব হয়নি। তাই মানুষ বর্বর আচরণ করছে। অথচ সভ্য মানুষের জন্য তৈরি হয়েছে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, এমনকি আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ। অথচ কী আশ্চর্য, প্রশাসনিক এত ধাপ থাকার পরও বাংলাদেশে প্রতিদিন কয়েকজন করে নারী ধর্ষিত হচ্ছেন! শুধু প্রশাসনের কথাই বা কেন বলছি, মানুষের বিবেক বলে কি কিছু নেই? না, নেই। কারণ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ বছরের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৩৯৬ নারী ও শিশু ধর্ষিত হয়েছে (১ আগস্ট, জাতীয় দৈনিক)।

ওই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে, নারীর চলার পথ সহজ নয়। রাস্তায় বের হলে কোনো না কোনোভাবে তারা হেনস্তা হন। তাই ঈদ সামনে রেখে রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছিÑ যেন নারী যে কোনো সময় সমস্যায় পড়লে সাহায্য পান এবং সঙ্গে সঙ্গে দোষীর শাস্তি হয়। কয়েকটি শাস্তি হলেই কেউ আর দোষ করতে সাহস পাবে না।

অন্যদিকে পথের সব মানুষ তো আর খারাপ নয়। তবে গা-বাঁচিয়ে চলার প্রবণতা রয়েছে অনেকের মধ্যেই। কারণ কেউ ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চান না। ‘কী থেকে কী হয়ে যায়! বিনা দোষে ফেঁসে যেতে পারেন।’ তাই ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে চান নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা। আর এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা বর্বরতা চালায়। এ জন্য আপামর জনসাধারণকেও নিশ্চয়তা দেওয়া জরুরি যেÑ বিনা দোষে কেউ কোনো ঝামেলায় তো পড়বেনই না, বরং তার পাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনকেই সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তা হলে মুষ্ঠিমেয় বখাটে নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে। আরও বলতে চাই, নারী কোনো নিচু শ্রেণির প্রাণী নন, নারী মানুষ। মানুষ হিসেবে তার মর্যাদা আছে, চলাফেরার অধিকার আছে। তিনি নিজস্ব কৌশলে নিজেকে রক্ষা করেন প্রতিনিয়ত। চলার পথে কোনো মানুষ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করা মনুষ্যত্ব। আমরা নিজেদের মনুষ্যত্ব যেন ভুলে না যাই। এই ঈদে কোনো মেয়ে যেন হয়রানির শিকার না হন। ঈদযাত্রা সুখকর হোক। মানুষের জীবন নিরাপদ হোক।

লেখক : নাট্যকার ও গবেষক

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877