স্বদেশ ডেস্ক:
ধর্ষণ! মানবসভ্যতার ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধগুলোর মধ্যে অন্যমত। এটি হত্যা বা খুনের চেয়েও ভয়াবহ। কেননা মানুষের মৃত্যু মানেই তো সব শেষ। ধর্ষিত মানুষটির মানসিক সত্তায় আঘাত তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, ধর্ষণের মতো একটি জঘন্য অপরাধের কী ধরনের সাজা হতে পারে? আদিকাল থেকে এই যুগ ‘ধর্ষকের সাজা’ কী? দেশভেদে ধর্ষণের সাজার মাত্রা কতখানি ভয়াবহ! চলুন দেখি
হ পুরাকালে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে দোষীকে প্রায়ই অর্ধবৃত্তাকার করাত দ্বারা মৃত্যুদ- দেওয়া হতো। রোমান সাম্রাজ্য, স্পেন এবং এশিয়ার কিছু অংশে ও বিশ্বের বিভিন্ন অংশে মৃত্যুদ- কার্যকর করার এ পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়েছিল। আরেকটি অনুরূপ ধরনের শাস্তি, যেখানে একটি জীবিত ব্যক্তির কাছ থেকে অঙ্গগুলো কেটে বের করা হবে, ধীরে ধীরে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হতো।
হ প্রারম্ভিক যুগে কখনো কখনো দোষীকে ফুটন্ত পানি বা তেলের মধ্যে ফেলে দেওয়া হতো, খুব প্রচলিত না হলেও এশিয়ার কিছু স্থানে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হতো।
হ তখনকার দিনে শূলে চড়ানো সব থেকে প্রচলিত শাস্তি ছিল।
হ হাতির দ্বারা মাথা গুঁড়িয়ে দেওয়া ইতিহাসে বিখ্যাত এক শাস্তির পদ্ধতি ছিল, ধর্ষণ-খুন এসবের শাস্তিস্বরূপ এ কাজ করা হতো।
এ তো গেল সেকালের গল্প, একালেÑ
ভারত : সম্প্রতি ভারত তাদের আইন সংশোধন করেছে, যদি শিশুদের ধর্ষণ করা হয় তা হলে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদ-।
চীন : চীনে আইন রয়েছে ধর্ষণের অভিযোগে প্রমাণিত ব্যক্তিকে সরাসরি মৃত্যুদ-ে দ-িত করার। তবে ক্ষেত্রবিশেষে অপরাধীর অ-কোষ কেটে নেওয়ার মাধ্যমেও তাকে শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে।
উত্তর কোরিয়া : এ দেশে একটি স্কোয়াড আছে, যারা অভিযোগ প্রমাণের সঙ্গে সঙ্গেই ধর্ষকের মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করে।
আফগানিস্তান : ধর্ষণের অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে প্রমাণিত হওয়ার চার দিনের মধ্যে ধর্ষকের মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়।
ইরান : ইরানে ধর্ষণের শাস্তি হলো জনসমক্ষে ফাঁসি কিংবা গুলি করে হত্যা। তবে কখনো কখনো অভিযুক্ত এই সর্বোচ্চ শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যেতে পারে, যদি সে ধর্ষিতার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তারা এটি করতেও পারে। তবে এর পরও অভিযুক্ত একটি শাস্তি এড়াতে পারে না, তা হলো হয় যাবজ্জীবন কারাদ-, নয়তো ১০০টি চাবুকের আঘাত।
ইসরায়েল : এখানে একজন ধর্ষককে সর্বনিম্ন চার বছর, আর সর্বোচ্চ ১৫ বছর জেল খাটতে হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাত : ধর্ষণ কিংবা শ্লীলতাহানির সাজা এ দেশে সরাসরি ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলে মুত্যু। কোনো রকম দেনদরবার বা ক্ষতি পূরণের সুযোগ নেই। ধর্ষককে সাত দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করতে হয়।
সৌদি আরব : অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হলে, বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষককে জনসমক্ষে শিরñেদের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।
মিসর : মিসরে শুধু ধর্ষককে শাস্তিই দেওয়া হয় না, পাশাপাশি চেষ্টা করা হয় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করার, যাতে পরবর্তী সময়ে কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস পর্যন্ত না পায়। আর তা নিশ্চিত করতে জনসমাবেশের মতো করে, সবার সামনে ধর্ষককে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্র : এখানে দুই ধরনের আইনব্যবস্থা বিদ্যমান। স্টেট ল’ আর ফেডারেল ল’। আক্রান্ত ব্যক্তি যদি ফেডারেল ল’-এর অধীনে অভিযোগ জমা দেয়, তা হলে ধর্ষককে জরিমানা করা হয় কিংবা কখনো কখনো মৃত্যুদ-ও দেওয়া হয়। কিন্তু স্টেট ল’-এর নিয়মকানুন প্রতিটি রাজ্যভেদে ভিন্ন ভিন্ন।
নরওয়ে : আক্রান্তের শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে এখানে ধর্ষককে ৪ থেকে ১৫ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়।
মঙ্গোলিয়া : ধর্ষিতার পরিবারের হাত দিয়ে মৃত্যুদ- দিয়ে প্রতিশোধ পূরণ।
মালয়েশিয়া : মৃত্যুদ-।
বাংলাদেশ : বাংলাদেশ দ-বিধির ১৮৬০ আইনের ৩৭৬ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ধর্ষণের অপরাধ করে, তবে সে ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদ-ে অথবা দশ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ-ে দ-িত হবে এবং জরিমানা দ-েও দ-িত হবে।’ তবে সম্প্রতি বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ– এমন আদেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষর করেছেন।