স্বদেশ ডেস্ক:
আধিপত্য বিস্তার ও আলু আনা নেয়ার ট্রলিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই চরকেওয়ার ইউনিয়নে হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরীজীবির ছেলেকে হত্যা করে গুম করার চেষ্টা করেছে সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনীর কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছে রাসেল ঢালী (১৯)। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে।
ঘটনার শিকার হয়েছেন হাফিজ উদ্দিন ফকিরের ছেলে জুয়েল ফকির (৩০)। মসজিদে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় তাকে হত্যা করা হয়। দক্ষিণ চরমশুরা গ্রামের পূর্ব পাশে বাচ্চু মিয়ার জমি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরিবারের দাবি, হত্যাকাণ্ডটি পূর্ব পরিকল্পিত।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাহমুদ বেপারীর ছেলে নান্নু হাজীকে (৬০) আটক করেছে সদর থানা পুলিশ।
প্রতিবছরই দেলোয়ারের ট্রলি নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে থাকে। এ বছরও আলু উঠার সাথে সাথে ওই এলাকায় একমাত্র দেলোয়ারের ট্রলি দিয়ে আলু আনা নেয়া করতে হবে। অন্য কারো ট্রলি চলতে পারবে না। নিহত জুয়েল ফকিরের চাচা হারুনের নিজস্ব আলু আনা নেয়ার জন্য ট্রলি ব্যবহার করে। সেই ট্রলি দিয়ে আলু আনা নেয়া করা যাবে না। দেলোয়ারের ট্রলি দিয়ে আলু আনা নেয়া করতে হবে- এই বিষয়কে কেন্দ্র করেই কয়েক দফা মারামারির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে হারুন ও তার পরিবার থানায় মামলা করতে গেলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আফসু বিচার মিমাংসার কথা বলে মামলা থেকে বিরত রাখে। বিষয়টি নিয়ে আফসু চেয়ারম্যান মিমাংসার জন্য কোনো সালিশ করেননি।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরীজীবি হাফিজ উদ্দিন ফকির বলেন, আমার ছেলে জুয়েল ফকিরকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গুলি, ককটেল ও ইট দিয়ে থেতলে হত্যা করে লাশ গুম করার চেষ্টা করেছে।
কিশোর গ্যাংয়ের লিডার রাসেল বুধবার রাতে হাফিজ উদ্দিনের বড় ছেলে রুহুল আমিনকে ভুরি বের করে ফেলার হুমকি দেয়। বৃহস্পতিবার ভোর রাত সাড়ে ৪টার সময় রুহুলের ভাই জুয়েল ফকির তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার সময় অতর্কিত হামলা করে সন্ত্রাসী দেলোয়ার বাহিনী। জুয়েল ফকিরের বুকে ও হাটুতে গুলি করে মাথায় ককটেল বিষ্ফোরণের পর ইট দিয়ে মাথা থেতলে মৃত্যু নিশ্চিত করে দেলোয়ার বাহিনী।
নিহতের পরিবার জানায়, দক্ষিণ চরমুশুরা ফকির কান্দি গ্রামের জুয়েল ফকিরকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে শীর্ষ সন্ত্রাসী দেলোয়ার হোসেন দেলা (৫০) বাহিনী হত্যা করেছে। ভোর আনুমানিক ৪টা ৩০ মিনিটে তাহাজ্জুদ নামাজ পরার জন্য মসজিদে যাওয়ার পথে হামলা করে হত্যার পর গুম করার চেষ্টা করে।
মন্টু মেম্বারের সার্বিক সহযোগিতায় দেলোয়ার বাহিনী জুয়েলকে হত্যার পর গুম করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছে বাবা হাফিজ ফকির।
এ বিষয়ে ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মন্টু জানান, জুয়েল ফকির নিরীহ লোক। কিন্তু দেলোয়ার হোসেন দেলার কোনো দোষ নাই। হারুন গ্রুপই অসুস্থ ক্যান্সারের রোগী জুয়েলকে মেরে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে আমাকে ফাঁসানোর জন্য। আমি শহরে বসবাস করি। আমি রাতেই ওসি সাহেবকে জানিয়েছি বিষয়টি।
চরকেওয়ার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফসার উদ্দিন আফসু জানান, দেলোয়ার হোসেন দেলা ও হারুন আমার নির্বাচন করেছে। তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল। থানায় মামলা করার জন্য চেষ্টা করেছে তবে দুই গ্রুপকেই শান্ত থাকার জন্য বলেছি। আজ বৃহস্পতিবার শালিস মিমাংসা করার কথা। আমি ঢাকায় খবর জানার সাথে সাথে রওয়ানা দিয়েছি।
এ বিষয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুবকর ছিদ্দিক জানান, ঘটনার পরে নান্নু হাজীকে (৬০) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। নিহতের পরিবার আসছে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বর্তমানে ঘটনাস্থলের পরিবেশ শান্ত আছে।