সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০২:০৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চট্টগ্রামে চোরাই তেলেই চলছে ফিলিং স্টেশন

চট্টগ্রামে চোরাই তেলেই চলছে ফিলিং স্টেশন

স্বদেশ ডেস্ক: চট্টগ্রাম নগরের সল্টগোলা ক্রসিং এলাকার রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল এর ডিলার ইমাম শরীফ ফিলিং স্টেশনে কাগজে-কলমে বন্ধ রয়েছে তেল সরবরাহ। বাস্তবেও তেল সরবরাহ করছে না বলে দাবি যমুনা অয়েল কর্তৃপক্ষের (জেওসিএল)। তারপরও ফিলিং স্টেশনটিতে চলছে তেল বিক্রি। অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন জায়গা থেকে চোরাই তেল সংগ্রহ করেই বিক্রি অব্যাহত রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। সরজমিনেও এই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

জানা যায়, ১৯৬৮ সালে ইন্দোবার্মা পেট্রোলিয়াম কোম্পানি লিমিটেড (আইবিপিসিএল) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে দক্ষিণ হালিশহর মৌজা এলাকায় শূন্য দশমিক ২৮ একর জায়গা ইজারা নেয়। সেই জায়গায় নিজস্ব অর্থায়নে আইবিপিসিএল একটি ফিলিং স্টেশন গড়ে তোলে। ওই বছরের ১লা আগস্ট স্টেশনটি পরিচালনার জন্য আইবিসিপিএল স্থানীয় ব্যবসায়ী ইমাম শরীফের সঙ্গে চুক্তি করে।

এরপর থেকে ইমাম শরীফ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতে থাকে।

তার মৃত্যুর পর থেকে ফিলিং স্টেশনটির পরিচালনা নিয়ে উত্তরাধিকারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। একপর্যায়ে ৮ই মার্চ মুসলিম খানের ছেলে এহেতাশামের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ফিলিং স্টেশনে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয় জেওসিএল। তবে মূল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে তেল না পেলেও ঠিকই তেল বিক্রি অব্যাহত রেখেছে ফিলিং স্টেশনটির বর্তমান কর্তারা। সরজমিনে গিয়েও অভিযোগের সত্যতা মিলে।

রোববার (২৭ মার্চ) সরজমিন সল্টঘোলা এলাকায় অবস্থিত ফিলিং স্টেশনটিতে দেখা গেছে একটি ট্রাক থেকে স্টোরেজে লোড করা হচ্ছে তেল। একই সময়ে ফিলিং স্টেশনে বিভিন্ন গাড়িতে তেল বিক্রি হচ্ছে একেবারে স্বাভাবিক নিয়মে।
জানা যায়, ফিলিং স্টেশনটির প্রথম ডিলার ইমাম শরীফের মৃত্যুর পর সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে এক মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ায় ইমাম শরীফ ফিলিং স্টেশনটিতে আদালত রিসিভার নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেয়। ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে দেওয়া সেই আদেশের পর রিসিভার হিসেবে নিজেকে নিয়োগ দিতে মুসলিম খান আবেদন করেন। তবে মুসলিম খানের আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। পরে অ্যাডভোকেট মাহমুদুর রহমান নামে এক আইনজীবীকে রিসিভার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলে আদালত।

আদালতের আদেশ পাওয়ার পরও দখলে থাকা মুসলিম খানের অসহযোগিতায় রিসিভার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি অ্যাডভোকেট মাহমুদুর রহমান।
এদিকে আদালতের আদেশ অমান্য করে জেওসিএল কর্তৃপক্ষ মুসলিম খান এবং তার মৃত্যুর পর ছেলে এহেতাশাম রসুল খানকে দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকে। তবে বছরের পর বছর নিজেদের বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অন্যান্য ভাইকে বঞ্চিত করে মুসলিম খানের একাই ভোগ করার বিষয়ে সম্প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয় ভাই মহসিন খান। এটা নিয়ে পরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের একটি টিম তদন্ত শুরু করে। তদন্ত শেষে তারা একটা প্রতিবেদন পেশ করে। প্রতিবেদনে জেওসিএল কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে মুসলিম খান ও তার ছেলেরা একাই ফিলিং স্টেশন ভোগদখল করছে বলে উল্লেখ করা হয়।

জানা যায়, যমুনা অয়েল কর্তৃপক্ষের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার পরও ফিলিং স্টেশন চালু রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এহেতাশাম রসুল খান মানবজমিনকে বলেন, জেওসিএল কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে। ফিলিং স্টেশনে তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আমি জেওসিএলের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেছি। আপাতত ফিলিং স্টেশনের স্টোরেজে থাকা তেল বিক্রি করা হচ্ছে’ তবে স্টোরেজে ট্রাকযোগে এনে তেল কেন লোড করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি এর কোনো সদুত্তর দেননি।

জানতে চাইলে ইমাম শরীফের ছেলে মহসিন খান মানবজমিনকে বলেন, ‘আমার আব্বা মারা যাওয়ার পর থেকে মুসলিম খান এবং তার ছেলে ফিলিং স্টেশনটি অন্যান্য ভাইদের বঞ্চিত করে ব্যবসা করে আসছে। আমরা এ বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত প্রতিষ্ঠানটিতে রিসিভার নিয়োগ করে লভ্যাংশ ভাইদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে বলেছেন। তবে প্রায় দুই যুগ পেরিয়ে গেলে আদালতের সেই আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি। সম্প্রতি আমরা অভিযোগ দিলে যমুনা কর্তৃপক্ষ তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এরপরও চোরাই তেল দিয়ে বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বর্তমানে দখলে থাকা লোকজন। বিষয়টি আমরা যমুনা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে এসবের পরও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না।’

এ বিষয়ে জেওসিএলের মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) মো. আইয়ুব হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ‘আমরা কাগজে-কলমে চুক্তি বাতিল করেছি। তেল সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছি। এখন তারা কীভাবে তেল বিক্রি করছে আমরা জানি না। আপনি এ বিষয়ে লোকাল থানার সঙ্গে একটু কথা বলেন।’
তবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির বলেন, ‘ওই ফিলিং স্টেশনে তেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে সে বিষয়ে আমরা অবগত নই। তাছাড়া আমাদেরকে কেউ চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানাননি। সেখানে বৈধ নাকি চোরাই তেল বিক্রি হচ্ছে সেটা আমরা কীভাবে জানব? তারপরও আমি আপনার মাধ্যমে যেহেতু জেনেছি, এখন থেকে আমরা খোঁজ-খবর রাখব।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877