শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৫:১৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মানি লন্ডারিং মামলায় বাবরের জামিন নামঞ্জুর : ১৭ এপ্রিল শুনানি

মানি লন্ডারিং মামলায় বাবরের জামিন নামঞ্জুর : ১৭ এপ্রিল শুনানি

স্বদেশ ডেস্ক:

দুই হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খোন্দকার মোশারফ হোসেনের ভাই খোন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার দশ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ নজরুল ইসলাম এ জামিন নামঞ্জুর আদেশ দিয়ে আগামী ১৭ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেন।

একই সঙ্গে দুই সহোদর ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) মো. সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইমতিয়াজ হোসেন রুবেলের জামিনের আবেদনও নামঞ্জুর করেছে আদালত।

এদিন অসামিদের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন আইনজীবীরা। আইনজীবী শাহীনুল ইসলামসহ অপর একজন আসামিদের পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন।

শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, রুবেল ও বরকতের বিরুদ্ধে অভিযোগ সুষ্পষ্ট নয়। বলা হচ্ছে দুই হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। তার মধ্যে তারা ১৬শ কোটি টাকার টেন্ডারের কাজ করেছে। কাজগুলো তারা আইন অনুযায়ী করেছে। সেটা এর মধ্যে কিভাবে আসবে। বাকী টাকার অভিযোগও সুনির্দিষ্ট নয়। প্রায় দুই বছর ধরে জেলে আছে। তাই তারা জামিন পেতে পারেন।

আসামি বাবরের আইনজীবী শুনানিতে বলেন, তার (বাবর) বিরুদ্ধে মামলায় অন্য আসামিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের অভিযোগ। তিনি আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলেন, আর অন্য আসামিরা ফরিদপুরে ত্রাসের রাজত্ব করলো, তখন ফরিদপুরের প্রশাসন কি করছিল। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় যদি হয় তবে প্রশাসনের লোকেরা আসামি নয় কেন। যে অভিযোগ তা সিআইডি তদন্ত করার এখতিয়ার রাখে না। শুধু রাজনৈতিক কারণেই তিনি আসামি হয়েছেন। বয়স ৬৫ বছর। তিনি অসুস্থ। জামিন পেলে পালিয়ে যাবে না।

রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমান জামিনের বিরোধীতা করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।

মামলার অপর সাত আসামিরা হলেন- ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহান, এএইচএম ফুয়াদ, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাহিম, কামরুল হাসান ডেভিড, মুহাম্মদ আলি মিনার ও তারিকুল ইসলাম ওরফে নাসিম।

আসামিদের মধ্যে মুহাম্মদ আলি মিনার, তারিকুল ইসলাম ওরফে নাসিম পলাতক রয়েছেন। নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী ও আসিবুর রহমান ফারহান জামিনে আছেন। অপর ৫ আসামি কারাগারে রয়েছেন। শুনানিকালে আট আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, গত ৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এএসপি) উত্তম কুমার সাহা চার্জশিট সিএমএম আদালতে দাখিল করেন।

মামলায় এর আগে দুই সহোদরের ৫ হাজার ৭০৬ বিঘা জমি, ৫৫টি গাড়ী ক্রোক ও ১৮৮টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার বিবরণে বলা হয়, আসামি বরকত ও রুবেল ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানাধীন ব্রাক্ষণকান্দা গ্রামের মৃত আব্দুস সালাম মণ্ডলের ছেলে। তারা জীবনে প্রথম ফরিদপুর জেলার রাজবাড়ী মোড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা চাঁন খন্দকারের অফিসে চা-পান সরবরাহ করত। ১৯৯৪ সালে চাঁন খন্দকরের নির্দেশে এ দুই ভাই ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন খোকনকে নির্মমভাবে হত্যা করে মর্মে বরকতসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মামলা হয়। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০০২ সালের পর বরকত ও রুবেল তাদের গুণ্ডাবাহিনী নিয়ে ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ড, ট্রাকস্ট্যাণ্ডে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা ব্যাপকভাবে শুরু করে।

মামলায় বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে বরকত ও রুবেল সহোদর ফরিদপুর জেলার এলজিইডি, বিআরটিএ, রোডস এন্ড হাইওয়ে, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, পাসপোর্ট অফিস, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারী তারা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের লোকজন দিয়ে পরিচালনা করে অবৈধ পন্থায় কোটি কোটি টাকা তুলে এবং মাদক ব্যবসায় তাদের মনোনিত লোকজন দিয়ে পরিচালনা করে প্রচুর অংকের টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেন।

মামলায় বলা হয়, ঢাকার কাফরুল থানাধীন মহাখালী ডিগএইচএস বাড়ী নং-৩১৬, রোড নং-২১, লেভেল নিউ ডিওএইচএস এ অফিস ভাড়া নিয়ে বাংলাদেশের সকল এলজিইডি অফিসের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিগত দুই দশকের মধ্যে তারা অর্জিত অবৈধ অর্থের দ্বারা সাউথ লাইন যাত্রী পরিবহনের এসি/ননএসি ২৪টি বাস, ১০টি ট্রাক, দুইটি পাজেরো, দুইটি মাইক্রোবাস, ১টি নিশান মিনিবাস। যার অধিকাংশ নম্বরহীন। এছাড়া ১টি গেষ্ট হাউজ, ৮ হাজার বর্গফুটের উপর নবনির্মিত ভবন, বরকত এগ্রো প্রা. লিমিটেড, মেসার্স এসবি ডেইরি ফার্ম, নর্থ চ্যানেল বাগানবাড়ী, এসবি ব্রিকফিল্ড, এসবি পাথর ক্রসিং, এসবি প্রেস, এসবি ট্রেডার্স, বরকত কনষ্ট্রাকশন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও ১টি পেট্রোল পাম্প প্রতিষ্ঠা করে।

মামলায় বলা হয়, আসামিগণ অবৈধ পন্থায় অর্জিত টাকা দ্বারা উল্লেখিত সম্পদের মালিক হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাদের সম্পত্তির মূল্য অনুমান ২ হাজার কোটি টাকা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877