রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৬:১৩ পূর্বাহ্ন

জেলেনস্কি ন্যাটোতে যেতে চান না, যুদ্ধবিরতি চান

জেলেনস্কি ন্যাটোতে যেতে চান না, যুদ্ধবিরতি চান

স্বদেশ ডেস্ক:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী সংঘাত ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ আজ বুধবার ২৮তম দিনে গড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই রুশ বাহিনীর মুহুর্মুহ হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ও গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী মরিপোল। রাজধানী কিয়েভ ঘিরেও চলছে একের পর এক হামলা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, বিশ্বে সামরিক শক্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রাশিয়া এই ২৮ দিনেও কিয়েভ বা মারিউপোল কোনোটিই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি। ব্যাপক প্রাণহানি সত্ত্বেও পশ্চিমা দেশগুলোর দেওয়া অস্ত্র নিয়ে ইউক্রেনীয় সেনারা বিভিন্ন সেক্টরে যেভাবে তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে তা অবাক করেছে সামরিক বিশেষজ্ঞদের। উল্টো তারা দাবি করেছে, রাশিয়ার কাছ থেকে কিয়েভের আশপাশসহ বেশকিছু অঞ্চল ইউক্রেনীয় সেনারা আবার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ইউক্রেনকে পরাস্তে রাশিয়া সর্বোচ্চ শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়বে কিনা। কারণ এরই মধ্যে ইউক্রেনে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ভ্যাকুয়াম বোমার মতো মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। পশ্চিমাদের দাবি, এখন রাশিয়া ইউক্রেনে রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে মস্কো পাল্টা অভিযোগ করেছে, পশ্চিমাদের সহায়তায় ইউক্রেনই রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র তৈরি করছে। ইতোমধ্যে তারা এ ধরনের বেশ কয়েকটি কারখানা ধ্বংস করেছে।

গত সোমবার এক ইভেন্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এটি এখন স্পষ্ট যে রাশিয়া রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র ব্যবহারের চিন্তা করছে। তেমনটা করলে রাশিয়াকে আরও কঠোর পশ্চিমা প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশোধ হিসেবে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রে অচিরেই সাইবার হামলা করতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি। যদিও বাইডেন তার কোনো অভিযোগের পক্ষেই সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও রাশিয়ার বিরুদ্ধে একই রকম অভিযোগ করে আসছে। কিন্তু তারাও ইউক্রেনে এমন কোনো অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি। গতকাল সাইবার হামলাবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ নাকচ করে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে রুশ প্রেসিডেন্টের ক্রেমলিন দপ্তর। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়- পশ্চিমা কোনো দেশের বিরুদ্ধেই রাশিয়া রাষ্ট্রীয় দস্যুতায় জড়িত নয়।

এদিকে রাশিয়ার প্রতি আবারও আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গত সোমবার ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি, রুশ সেনা প্রত্যাহার এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার বিনিময়ে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য না হতে তিনি রাজি। এটি সবার জন্য একটি আপস। কারণ পশ্চিমা দেশগুলো জানে না তারা ন্যাটোর বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কী করবে। ইউক্রেন নিরাপত্তার গ্যারান্টি চায় এবং রাশিয়াও চায় না পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর আরও সম্প্রসারণ হোক। আমি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় প্রস্তুত।’ ক্রিমিয়া এবং রুশ সমর্থিত বাহিনীর দখলে থাকা ইউক্রেনের পূর্ব ডনবাস অঞ্চল নিয়েও কিয়েভ আলোচনা করতে চায় বলেও জানান জেলেনস্কি। তবে এ বিষয়ে মস্কো এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি।

যদিও গতকাল ইতালীয় এমপিদের সঙ্গে এক আলোচনায় জেলেনস্কি আবারও সুর চড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে তারা এগিয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে আছে। বিভিন্ন ফ্রন্টে ইউক্রেনীয় সেনারা রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা ঠেকিয়ে দিচ্ছে। তিনি হুশিয়ার করেন, রুশ সেনারা ইউক্রেন হয়ে ইউরোপে ছড়িয়ে যেতে চায়। এ জন্য ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন রুখতে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোকে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান।

এদিকে আলোচনার মধ্যেও ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ অব্যাহত আছে। ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ বলেছে, রাশিয়ার আক্রমণে মারিউপোল ও খারকিভ অঞ্চলে অন্তত ১০টি হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এদিন কৃষ্ণসাগর থেকে রুশ নৌবাহিনী ইউক্রেনের আরেক বন্দরনগরী ওডিসা লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ শুরু করেছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এদিন জানায়, তারা রাজধানী কিয়েভের পার্শ্ববর্তী মাকারিভ অঞ্চলের পুনঃনিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এ ছাড়া কিয়েভে কারফিউ চলমান আছে। তার মধ্যেই শহরের আশপাশে গতকাল বেশ কয়েকটি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877