স্বদেশ ডেস্ক:
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন হাইকোর্ট বিভাগ নাকচ করে দেওয়ায় তার মুক্তি নিয়ে কয়েক মাসের গুঞ্জন আপাতত থেমে গেল। এর মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা ভর করেছে। সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কিংবা প্যারোলে জামিন নিয়ে বিদেশ না গেলে তার মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে ধারণা করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। দলের অধিকাংশ নীতিনির্ধারক এবং নেতাকর্মীরা বলছেন, সম্প্রতি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। দলে ভিন্নমত থাকলেও খালেদা জিয়ার চিকিৎসার স্বার্থে প্যারোলে হলেও মুক্ত করা উচিত। এই অবস্থায় আজ শনিবার বিকালটায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসছে। এই বৈঠকেও করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, গত বুধবার জামিন আবেদন খারিজ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা আইনজীবীদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেখানে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়। নেতাকর্মীরা মনে করেন, আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিলে প্যারোল আবেদন করে তাকে মুক্ত করতে হবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা মনে করছেন, এ মামলায় খালাস চেয়ে যে আপিল আবেদন শুনানির অপেক্ষায় আছে, সেই আবেদন হাইকোর্টের অন্য কোনো বেঞ্চে উপস্থাপন করে জামিন আবেদন করা যেতে পারে। অথবা হাইকোর্টে জামিন আবেদন খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়া। বৈঠকে স্কাইপে লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি মহাসচিব
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, এখন বিচার বিভাগ থেকে সবকিছুই ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে। যদি তা না হতো জামিনযোগ্য এ মামলায় কেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জামিন হচ্ছে না? যেহেতু রাজনৈতিক মামলা, সিদ্ধান্তও রাজনৈতিকভাবে হতে হবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া বেগম জিয়ার জামিন হবে না। এ অবস্থায় প্যারোলে মুক্ত হয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নেওয়া উচিত। বেঁচে থাকলে রাজনীতি করার সুযোগ পাওয়া যাবে।’ তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় আমরা এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাব। তবে সাত বছরের সাজায় খালেদা জিয়ার জামিন নামঞ্জুর করা অত্যন্ত দুঃখজনক, হাইকোর্টের ইতিহাসে এমন নজির নেই।
গতকাল শুক্রবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যমঞ্চের প্রধান ও এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব) অলি আহমেদ বলেন, ‘মহামান্য সুপ্রিমকোর্টের কাছে আমরা অনুরোধ করব, তার (খালেদা জিয়া) বয়স বিবেচনায়, তার অবদান বিবেচনায় নিয়ে, তার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান বিবেচনায় নিয়ে বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে মুক্তিদান করবেন।’
খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী ও বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, খালেদা জিয়ার কোনো আইনজীবীকে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই সিনিয়র আইনজীবীরা আলোচনায় বসে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই সঙ্গে আমরা বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করে তার পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করব।
খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি চাওয়া নিয়ে বিএনপির মধ্যে দুটি মত আছে। দলের একাংশের নেতাকর্মীরা মনে করে, আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাচ্ছে না। তাই প্যারোলে মুক্তি নিয়ে হলেও তার সুচিকিৎসা হওয়া উচিত। এর ভিন্নমত দিয়ে অনেক নেতাকর্মী বলছেন, এটা ক্ষমতাসীনদের একটি ফাঁদ। ‘আপসহীন’ নেতা হিসেবে রাজনীতিতে মানুষের কাছে তার যে ভাবমূর্তি রয়েছে, তা ‘নষ্ট’ করতে চায় সরকার। তা ছাড়া প্যারোলের আবেদন গৃহীত হলে সরকারের উদারতা প্রকাশ পাবে। আর গৃহীত না হলে বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল আরও ভেঙে পড়বে।
বিএনপি নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করেন, রাজপথে আন্দোলন করে দেশি-বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে সম্মানজনক।
গত চার মাস আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান। তখনও প্যারোল প্রসঙ্গে বেগম জিয়ার আলোচনায় এলেও তিনি তাতে রাজি হননি।