বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৭:০২ অপরাহ্ন

রাজনীতিতে উত্তাপ

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের উত্তাপের মধ্যে দেশের রাজনীতিতেও উত্তাপ দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর গতকাল গণভবনে ১৪ দলের বৈঠক হয়েছে। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে জোটকে সংহত করার কথা বলেছেন অংশগ্রহণকারীরা। অন্য দিকে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পথে হাঁটতে চায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এ জন্য বৃহত্তর একটি জোটগঠনে প্রয়োজনে আরো সময় নিতে চায় দলটি।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে শরিক দলের বৈঠক : দীর্ঘদিন পর গতকাল সকালে গণভবনে জোটের শরিকদের নিয়ে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিনের ক্ষোভ অসন্তোষ ঝেড়ে ফেলে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছে জোটের প্রায় সব ক’টি দলই। শুধু বৈঠকে অংশ নেয়নি শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল।

বৈঠকে সূচনা বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ, অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিলে স্থান করে দেয়া এবং সর্বশেষ জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণায় সরকারের পদক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। জানা গেছে, বৈঠকে ১৪ দলের নেতাদের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটগত অংশ নেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটগতভাবেই হবে।

বৈঠকের আলোচনায় অংশ নেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পদাক মো: ইসমাইল হোসেনসহ কয়েকজন।
বৈঠকে শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, ১৪ দলের ঐক্য বজায় থাকবে। জোটবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচন করা হবে। সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রতিরোধে ১৪ দলের যে ভূমিকা সেটিও অব্যাহত থাকবে।

নির্বাচনে আসন বণ্টনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবীণ এ নেতা বলেন, এখনই আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে না। এ জন্য আরো আলোচনা প্রয়োজন। অনেক বিষয়ের ওপর আসন বণ্টন নির্ভর করে। এ আলোচনা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরে হবে। বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তখন কি জোটবদ্ধ নির্বাচন হবেÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আমু বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা তারা বলছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কী করবে এটা দেখার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ১৪ দলীয় জোটের ঐক্য, বর্তমান পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্য সবই আলোচনা হয়েছে। খুবই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। বহুদিন পরে একটা ভালো আলোচনা হয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে কি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, ওই বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। ‘আপনি যে বিভিন্ন সময় জনগণের ভোটের নিশ্চয়তা দাবি করেছিলেন’Ñ সেই বিষয়ে কি আজকে আলোচনা করেছেন? সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একেবারে স্পষ্টভাবে বলেছি গত ইউপি নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে যে প্রশ্নগুলো এসেছে, জনগণের ভোটদানের অধিকারের যে প্রশ্নটি এসেছে, এসব ব্যাপারটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জোট নেত্রী কী বলেছেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, নেত্রী কি সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন?

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, সরকারি দলের কাছে চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়নি। আলোচনাটা হয়েছে ১৪ দলীয় জোট প্রসঙ্গে। আমরা মূলত কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। সেটি ফলপ্রসূ হয়েছে। বাংলাদেশে এখনো রাষ্ট্রের চিরশত্রু, সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসী শক্তি রাষ্ট্রের মূলভিত্তিতে হামলা ও আঘাত করছে। তাই আমরা মনে করি এখনো ১৪ দল রাখার প্রয়োজন রয়েছে। তেল, গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম যেন বৃদ্ধি না করা হয়, সেই বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জোট থাকবে। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হবে। এটা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন।

বৈঠকে অংশ না নেয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, আমরা জানি যে, প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের সাথে বৈঠক করেছেন। ১৪ দলে আমরা আর কন্টিনিউ করছি না। গণতন্ত্রের সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য নতুন উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। সেজন্য কাজ করছি।

বৃহত্তর জোটগঠনে আরো সময় নেবে বিএনপি : নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বৃহত্তর জোটগঠনে ভেবে-চিন্তে এগোচ্ছে বিএনপি। দলটি এ ক্ষেত্রে কোনো তাড়াহুড়ো করতে চায় না, জোট ও জোটের বাইরের সমমনা দলগুলোর রাজনৈতিক মতামত ও দাবির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত পথে হাঁটতে চায়। এ জন্য পর্দার অন্তরালে ডান-বামসহ বহু রাজনৈতিক দলের সাথে দলটির নেতারা অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ দলগুলোর সাথে একদফা আলোচনা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এর বাইরে বেশ কয়েকটি বাম দলের শীর্ষ নেতার সাথেও কথা বলেছেন বিএনপির নেতারা। জানা গেছে, খুব শিগগিরই বৃহৎ জোটগঠনের চলমান তৎপরতা আনুষ্ঠানিক রূপ নিচ্ছে না। সরকারের মতিগতি বুঝে ‘সময়মতো’ কর্মসূচিভিত্তিক নতুন জোটের ঘোষণা আসবে। আগামী মাসে শুরু হওয়া পবিত্র রমজানে ইফতার পার্টির মধ্য দিয়ে এই তৎপরতা আরো এগিয়ে নেয়া হবে।

আগামী বছর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি আন্দোলনের নতুন রোডম্যাপ তৈরির চিন্তা করছে। দলটি ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন একটি জোটগঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে নিয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বিগত দু’টি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের মতো আওয়ামী লীগ সরকারকে আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে এই ইস্যুতে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে উঠেছে। এই অবস্থান কেবল দেশের ভিতরেই নয়, আন্তর্জাতিক মহলও এ বিষয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। তারা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নতুন জোটগঠনের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে অধিকাংশ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাথমিক সম্মতি পেয়েছে বিএনপি। জোট ও জোটের বাইরের সব দলই চায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ নির্বাচন। এক্ষেত্রে দুই একটি দলের জাতীয় সরকারের ফর্মুলাও রয়েছে। জাতীয় সরকারের পক্ষে থাকা একাধিক দলের মতামত হচ্ছে, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে, তারা পুরো প্রশাসন নিজেদের মতো করে সাজিয়ে রেখেছে। মাত্র তিন মাসে নির্দলীয় ব্যক্তিদের পক্ষে এই প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো সম্ভব না। তাই অন্তত দুই বছর জাতীয় সরকার ক্ষমতায় থাকতে হবে। এরপর তাদের অধীনে নির্বাচন হবে।

বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বড় জোট গঠনের পথে কোনো কোনো দলের বিকল্প চিন্তা কোনো বাধা নয়। কারণ সবাই চায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর সেই নির্বাচন আদায় করতে হলে সরকারকে বাধ্য করতে হবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া দিগন্তকে বলেছেন, গণতন্ত্রমনা সব দলকে নিয়ে আমরা বহৎ ঐক্য গঠন করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।

জানা গেছে, নির্বাচনের এখনো অনেকটা সময় বাকি থাকায় বিরোধী জোটগঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনই আসছে না। তবে এজন্য আলোচনা অব্যাহত রাখবে বিএনপি। করোনার প্রকোপ কমে আসায় আসন্ন রমজানে বেশ কয়েকটি ইফতার পার্টি আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। এসব পার্টিতে জোটগঠনে ঐকমত্য পোষণকারী দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

জানা গেছে, বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে চায়। আর সেই লক্ষ্যেই দ্রব্যমূল্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা জিনিসের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দলটি সিরিজ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার চিন্তাও করছে। নেতারা মনে করছেন, সরকারের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ জনগণ আগামী দিনের আন্দোলনে আর ঘরে বসে থাকবে না, তারা মাঠে নেমে আসবে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী কর্মসূচিতে ব্যাপক উপস্থিতি দেখে বিএনপির এই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে নেতারা বলছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877