শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৬:১২ অপরাহ্ন

বিটিআরসির প্রস্তাবিত প্রবিধান গ্রহণযোগ্য বিধানই কাম্য

বিটিআরসির প্রস্তাবিত প্রবিধান গ্রহণযোগ্য বিধানই কাম্য

‘ডিজিটাল, সোস্যাল মিডিয়া ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম’ নিয়ন্ত্রণে একটি নতুন প্রবিধান করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে একটি খসড়া প্রবিধানমালা প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। কিন্তু এ প্রবিধান সংশ্লিষ্ট খাতের অংশীজনের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। অনেকেই এটি বাতিল এবং পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। সর্বশেষ আহ্বানটি গুরুত্বপূর্ণ। ৪৫টি আন্তর্জাতিক সংস্থা বিটিআরসিকে চিঠি দিয়ে এটি প্রত্যাহার ও পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। বলা হয়েছে, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকার বিপন্ন করবে।
গত সোমবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, এ প্রবিধান শুধু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের এনক্রিপশন দুর্বল ও অনলাইন নিরাপত্তা দুর্বল করবে তা-ই নয়, এটির প্রয়োগ মানবাধিকারের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। সাংবাদিক, ভিন্নমতাবলম্বী, মানবাধিকারকর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আরো বেশি ঝুঁকিতে ফেলবে। এসব প্রবিধান যে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তিসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সে কথাও সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে চিঠিতে। ৪৫টি আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, বিটিআরসির এ খসড়া ভারতের অনুরূপ বিধানেরই প্রতিফলন। ভারতীয় বিধিগুলো গণতন্ত্রকে আঘাত করে এবং তা অনুকরণ করা উচিত নয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে যেসব নিবর্তনমূলক আইনকানুন রয়েছে তাতে বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা একরকম নির্বাসিতই বলা যায়। এর সাথে বিটিআরসির নতুন এ প্রবিধান বলবৎ হলে সার্বিকভাবে জনগণের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ষোলোআনা পূর্ণ হবে। কারণ প্রস্তাবিত প্রবিধানের মূল লক্ষ্য হলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের কনটেন্টের ওপর সরকারি সংস্থার নিয়ন্ত্রণ পোক্ত করা। জরুরি প্রয়োজনে কোনো কনটেন্ট সরানোর জন্য যেন ফেসবুক-ইউটিউবের মতো সেবাগুলোর মালিকপক্ষের অপেক্ষায় না থাকতে হয়, তা নিশ্চিত করা। বিটিআরসি নির্দেশ দিলে নির্দিষ্ট কনটেন্ট বা আধেয় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে নিতে হবে। বিধি লঙ্ঘনকারী কোনো বার্তা আদান-প্রদান করলে আদালত ও বিটিআরসির নির্দেশ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট বার্তা প্রথম যিনি দিয়েছিলেন, তাকে শনাক্ত করে দিতে হবে। এর জন্য কোনো শুনানির প্রয়োজন হবে না।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে ক্ষমতাসীনদের নিয়ে কার্টুন আঁকা, ব্যঙ্গাত্মক ছবি প্রকাশ বা সমালোচনার জন্য পুলিশি হয়রানি গ্রেফতারের মুখে পড়েছে বহু মানুষ। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীও আছে। এ পরিস্থিতিকে নৈরাজ্যকর বলে অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে গণতান্ত্রিক সুশীল সমাজ। আলোচনায় এসেছে, কিভাবে বিষয়টির গ্রহণযাগ্য সমাধানে পৌঁছানো যায় সেই প্রসঙ্গ। বলা হচ্ছে, ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রকাশিত কোনো পোস্ট সত্যিই আপত্তিকর নাকি বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা, এটা কে ঠিক করবে? কেউ এ বিষয়ে একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছেন। তারা বলেন, মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হোক। কোনো অভিযোগ উঠলে ওই কমিটি সিদ্ধান্ত দেবে অভিযোগ আদৌ যৌক্তিক কি না অথবা এ বিষয়ে করণীয় কী।
আমরা জানি, জাতীয় প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ভঙ্গ করে এমন কিছু প্রচার করা যাবে না। দেশের সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ এগুলো মেনেই কাজ করে। পর্নোগ্রাফি, ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাতের মতো ক্ষতিকর বিষয়বস্তুর বিরুদ্ধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকাও জরুরি। কিন্তু সরকারকে বৈধ ও যৌক্তিক সমালোচনার কারণে যে হয়রানি করা হয়, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ ধরনের অনেক ঘটনা দেশে ঘটেছে এবং তা প্রমাণিত সত্য। আর এটা কে না জানে, গণতান্ত্রিক সমাজে মানুষের কণ্ঠ রোধ করে সত্যিকারের অগ্রগতি হতে পারে না; বরং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণের মাধ্যমে সমাজকে পেছনে ঠেলে দেয়া হয়।
আমরা সব রকমের নিবর্তনমূলক আইনকানুনের অবসান চাই। বিটিআরসির প্রস্তাবিত প্রবিধান অবিলম্বে প্রত্যাহার করে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক বিধিবিধান প্রণয়নের দাবি জানাই, যাতে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার পূর্ণ স্বীকৃতি থাকবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877