সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৬ অপরাহ্ন

তুরস্কে আলোচনায় বসছে রাশিয়া-ইউক্রেন

তুরস্কে আলোচনায় বসছে রাশিয়া-ইউক্রেন

স্বদেশ ডেস্ক:

পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে প্রতিবেশী রাশিয়ার হামলা শুরুর ১৫তম দিন আজ। এর মধ্যেই রুশ হামলায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ একাধিক শহরে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি ও ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো রাশিয়াকে থামাতে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। সংকট সমাধানে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বেলারুশে রাশিয়া ও ইউক্রেন আলোচনায় বসলেও তাতে কোনো ফল হয়নি। উল্টো রাশিয়া হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সংকট সমাধানে আবার নতুন করে আজ বৃহস্পতিবার তুরস্কের আনাতোলিয়ায় আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লেভরভ ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা। গতকাল রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এছাড়া তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকেও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে এই বৈঠক আয়োজনের কথা। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ

তাইয়েপ এরদোগান এক বিবৃতিতে বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের যে বৈঠকটি আনাতোলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে তা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথ খুলে দেবে বলে তিনি আশা করছেন।

বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ানের খবর বলছে, বৈঠকের জন্য গতকালই লেভরভ তুরস্কে রওনা হন। আজকের মধ্যে কুলেবাও আনাতোলিয়ায় পৌঁছে যাবেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমকে জানান, আগামী ১১ থেকে ১৩ মার্চ তুরস্কভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতি গবেষণা সংস্থা আনাতোলিয়া ডিপ্লোম্যাসি ফোরামের সম্মেলন হবে। সেই সম্মেলনে উপস্থিতি কামনা করে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু। নিমন্ত্রণপত্রে দুই দেশের মধ্যকার সংকট সমাধানে কাভুসোগলু বৈঠকের প্রস্তাব দেন। তিনি নিজে ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানও এই বৈঠকের সফলতা নিয়ে আশাবাদী। বিবিসি বলছে, তুরস্ক ন্যাটো জোটের সদস্য হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে প্রেসিডেন্ট এরদোগান পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় ভিন্ন এক ভূমিকা নিচ্ছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পুতিনকে রাজি করতে পারবেন মাত্র দুজন রাষ্ট্রনায়ক। এক তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও অপরজন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। কারণ এ দুজনকে পুতিন বিশ্বাস করেন।

এদিকে গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর এর কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মস্কো। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সহযোগিতা দপ্তরের পরিচালক দিমিত্রি বিরিচেভস্কি পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করে বলেছেন, তারা বিশদ পরিসরে নিষেধাজ্ঞার জবাব দিতে কাজ করছেন। রাশিয়ার পাল্টা নিষেধাজ্ঞা হবে দ্রুত, সুচিন্তিত এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সবচেয়ে সংবেদনশীল জায়গায় আঘাত।

একদিকে মুহুর্মুহু হামলা অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি

গতকাল যুদ্ধ শুরুর ১৪তম দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বেশকিছু এলাকায় রুশ হামলায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। এর মধ্যে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি শহরের একটি আবাসিক এলাকায় রুশ বিমান হামলায় তিন শিশুসহ অন্তত ২২ জন প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে আরও বহু মানুষ। এই ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন সুমি অঞ্চলের গভর্নর দিমিত্র যাইভিৎস্কি। সুমি ছাড়াও এদিন রাজধানী কিয়েভের উত্তর-পশ্চিমে তীব্র লড়াইয়ের খবর দিয়েছে বিবিসি। সেখানে ইউক্রেনের চেকপয়েন্টগুলোর ওপর অব্যাহতভাবে মর্টারের গোলাবর্ষণ হচ্ছে। তবে ইউক্রেনের সৈন্যরা বলছে, তারা তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে এবং রুশ অগ্রাভিযান ঠেকিয়ে দিচ্ছে। এদিন কিয়েভের আশপাশে বেশ কয়েকটি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। শহরজুড়ে বারবার বেজে উঠছে বিমান হামলার সতর্কতার সাইরেন। ইউক্রেনের সেনারা পরিখা খনন এবং রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রুশ স্থল সেনাদের ঠেকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

মুুহুর্মুহু এই হামলার মধ্যে লড়াইয়ে বিপর্যস্ত ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে আবার ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেসচুকের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, যুদ্ধে সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় থাকা কিছু অঞ্চলের বেসামরিক মানুষদের পালানোর সুযোগ দিতে ১২ ঘণ্টার এই যুদ্ধবিরতি। এর আওতায় থাকা এলাকাগুলো হচ্ছে রাজধানী কিয়েভের কিছু অংশ, খারকিভ, চেরনিহিভ, সুমি ও মারিওপোল। এসব শহর থেকে বেরিয়ে যাবার মানবিক করিডোরগুলো গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা ছিল। রয়টার্স জানাচ্ছে এসব শহরে কয়েক লাখ লোক লড়াইয়ের কারণে খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ও ওষুধের অভাবের মধ্যে আটকা পড়েছে। সুমি শহরের মেয়র বলেছেন, সেখান থেকে অনেক লোক ইতিমধ্যেই গাড়িতে করে বেরিয়ে গেছে।

এমন সঙ্গিন পরিস্থিতিতেও রুশ অগ্রাভিযানের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখার প্রত্যয় আবারও ব্যক্ত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল অনলাইনে যুক্ত হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে এমপিদের উদ্দেশ্যে এক অভূতপূর্ব ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, আমরা বনে-মাঠে-বেলাভূমি, রাস্তায় যুদ্ধ করব। ইউক্রেনকে সমর্থনের জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, আমরা হাল ছাড়ব না ও হারব না। আমরা আমাদের ভূমির জন্য লড়াই চালিয়ে যাব, যা-ই ঘটুক না কেন। তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানান। এই প্রথম কোনো বিদেশি নেতা কমন্সসভার অধিবেশনকক্ষে ভাষণ দিলেন।

facebook sharing button
twitter sharing button

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877