বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন

চালুর ২ বছর পর ট্রেন চলবে পদ্মা সেতুতে

চালুর ২ বছর পর ট্রেন চলবে পদ্মা সেতুতে

স্বদেশ ডেস্ক:

আগামী জুনের মধ্যে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে পদ্মা সেতু। সেটা হতে পারে ২৩ জুন; আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে। কথা ছিল একই দিনে সড়কযান ও ট্রেন চলবে পদ্মার বুকে। এখন সেতু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেতু চালুর দিন ট্রেন চলবে না; লাগতে পারে আরও দুই বছর।

এদিকে উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও নিচ তলায় চলবে রেলপথ বসানোর কাজ। এ সময় গাড়ি চলাচলে সৃষ্ট কম্পনে রেলপথ স্থাপনে সমস্যা হবে কিনা, তা নিয়ে সেতুর নকশা প্রস্তুতকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান এইসিওএমের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া সেতুর নিচতলায় ট্রেন চলাচলের সময় দুর্ঘটনা ঘটলে যাত্রীদের নিরাপদ নির্গমনে চারটি জায়গায় জরুরি (ইমার্জেন্সি) সিঁড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল রেলওয়ে; কিন্তু সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, এ পরিকল্পনায় অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। দুটি সিঁড়ি নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। অধিগ্রহণ করতে গিয়ে দেখা যায়, একটা অংশ নদীর জমি। রেকর্ডের ভুল তথ্যের সঙ্গে বাড়তি ঝামেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয়দের আপত্তি। এই জট নিরসনের পথ তৈরি হয়নি এখনো। জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরই শুরু হবে ওই অংশের নির্মাণকাজ।

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিধি ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-যশোর পর্যন্ত। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার জঙ্গল মুকন্দপুর মৌজায় একটি জমির দাগ নম্বর রয়েছে অধিগ্রহণের জন্য; কিন্তু এসএ ম্যাপে এ জমিটি প্রবাহমান নদী হিসেবে চিহ্নিত করা আছে। আবার নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার চরবগজুড়ি মৌজার দাগ নম্বরটি মৌজার ম্যাপে অন্তর্ভুক্ত নেই। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ম্যাপে ওই দাগটিও নদীর মধ্যে পড়েছে। ফলে ওই জমি কোনো খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এটি নদী শ্রেণির জমি হওয়ায় বর্তমান দখলদারদের অনুকূলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে প্রকল্পের ১৭২ কিলোমিটার অংশের মধ্যে শুধু চরবগজুড়ি অংশের প্রায় ৬০০ মিটার জায়গায় কার্যক্রম বন্ধ। এ অংশের জটিলতা নিরসন না হলে প্রকল্পটি সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। এ অংশে কার্যক্রম চালাতে না পারলে সময় বাড়াতে হবে। তা ছাড়া ঠিকাদারকে দিতে হবে উচ্চ হারে ক্ষতিপূরণ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরবগজুড়ি মৌজার অধিগ্রহণকৃত ভূমির বাসিন্দারা ১৯৬০ সাল থেকে স্থায়ীভাবে সেখানে বসবাস করছেন। তাই অধিগ্রহণ জটিলতা নিরসনে আরএস রেকর্ড সম্পন্ন করতে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হবে। ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর- এই তিন প্যাকেজে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুনে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ সম্পন্ন হবে। যদিও লক্ষ্যমাত্রায় পিছিয়ে রয়েছে প্রকল্পটি। ফলে মেয়াদ বাড়তে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্বিতল পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে সেতু কর্তৃপক্ষ। উপরতলায় (আপারডেক) চার লেনের সড়কে চলবে গাড়ি। নিচতলায় (লোয়ার ডেক) সিঙ্গেল লাইনে চলবে ট্রেন। রেলপথ বসানোর কাজ করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২০২০ সাল থেকে পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপনের অনুমতি চেয়ে আসছে রেল কর্তৃপক্ষ; কিন্তু সেতুর কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। তাই অনুরোধ নাকচ করে আসছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম এক চিঠিতে জানান, আগামী জুনে সেতুর নিচতলার অবশিষ্ট কাজ তথা গ্যাসলাইন এবং রেললাইন ওয়াকওয়ের ‘সাপোর্ট বিম’ ও ‘গ্রাটিং প্যানেল’ স্থাপনের কাজ শেষ হবে। আগামী ১ জুলাই থেকে রেল ট্র্যাক বসানোর কাজ শুরু করা যেতে পারে। তবে তা নির্ভর করছে পাইপলাইনের হাইড্রোলিক পরীক্ষার ওপর। আগামী এপ্রিলে এ পরীক্ষা শেষ হতে পারে। এ হিসাবে এপ্রিলে বলা সম্ভব হবে, কবে নাগাদ রেলসংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদার চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের (সিআরইসি) কাছে কাজের জন্য সেতু হস্তান্তর করা যাবে।

পদ্মা সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির (এমবিইসি) বরাতে সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালককে এসব তথ্য জানায়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর সবকয়টি স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে পূর্ণ আকার পেয়েছে পদ্মা সেতু। সেতুর ওপরতলায় সড়ক নির্মাণ ও নিচতলায় গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলমান থাকায় রেলট্র্যাক বসানোর কাজের অনুমতি পায়নি রেলওয়ে।

এ বছরের জুনে যখন পদ্মা সেতুতে সড়কের গাড়ি চলবে, একই দিনে পদ্মা সেতু থেকে ভাঙা পর্যন্ত ট্রেন চালানোর লক্ষ্য ছিল রেলওয়ের। ওই চিন্তা থেকে সরে এসেছে রেল কর্তৃপক্ষ। কারণ সেতুর নিচতলায় রেলপথ হবে পাথরবিহীন। এ কাজে অন্তত ছয় মাস লাগবে। এপ্রিলের শেষ দিকে রেলপথ বসানোর সুযোগ পেলেও ৬ মাস লাগবে সেতুর নিচতলার কাজে। তা ছাড়া ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশের অবশিষ্ট কাজ সারতেও বেশ সময় দরকার। সে হিসাবে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগতেই পারে বলে ধারণা দিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। যদিও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা ছিল- ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সেতুতে গাড়ির সঙ্গে ট্রেনও চলবে।

এদিকে পদ্মা সেতুতে কখনো ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটলে যাত্রীদের জরুরি নির্গমনে সেতুর মাওয়া প্রান্তে রেলের ভায়াডাক্টের ৩৮ নম্বর পিলারের কাছে সিঁড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। এখান থেকে সেতুর প্রথম পিলার বা ওপরে ওঠার পথ এক হাজার ৭১০ মিটার বা প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার দূরে। জাজিরাপ্রান্তে জরুরি বর্হিগমন সিঁড়ি সেতুর শেষ পিলার থেকে ৯৯০ মিটার দূরে। সেতু বিভাগের চিঠিতে দুর্ঘটনাকালের জন্য নির্মিত জরুরি বর্হিগমন সিঁড়িকে অসামাঞ্জস্যপূর্ণ বলেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

এর আগে রেলসংযোগ প্রকল্প থেকে জানানো হয়, জাজিরাপ্রান্তে রেলের ভায়াডাক্টের ২০ নম্বর পিলারের কাছে জরুরি বর্হিগমন সিঁড়ি নির্মাণ চলছে। সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের দুই পিলারের সঙ্গে জরুরি বর্হিগমন সিঁড়ি নির্মাণ করেছে। সেগুলোর অবস্থান দুই প্রান্তে দুটি; ১ ও ৪২ নম্বর পিলারে। আর মাওয়া ও জাজিরাপ্রান্তে রেলের ভায়াডাক্টের দৈর্ঘ্যে প্রায় চার ও আড়াই কিলোমিটার। এ অংশে দুর্ঘটনাকালে জরুরি বর্হিগমন সিঁড়ি রাখা প্রয়োজন। রেলের প্রকল্প পরিচালক আফজালুর রহমান বলেছেন, চারটি বর্হিগমন সিঁড়ি থাকলে জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীরা দ্রুত বের হতে পারতেন। তবে সেতু বিভাগ দুটি সিঁড়ি নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে। আমরা তা-ই করব।

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজালুর রহমান বলেন, ‘সেতু কর্তৃপক্ষ রেলসংযোগের অনুমতি দিলে কাজ শুরু হবে। তারা চিঠির জবাবে জানিয়েছেন, এপ্রিলের শেষ দিকে বলতে পারবেন। আর যানবাহন চলাচলকালে সৃষ্ট কম্পনে রেলট্র্যাক বসানোয় অসুবিধা হবে না বলে তারা মন্তব্য করেছেন। তা ছাড়া জরুরি সিঁড়ি ৪টির বদলে ২টি স্থাপনে তাদের সম্মতি পেয়েছি। আর অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনকাজে সব প্রকল্পের সমস্যা থাকে, এখানেও আছে। নদীর জমি রেকর্ড সংশোধন করে ব্যবস্থা হয়ত নেওয়া যাবে। আশা করি, সমাধান মিলবে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877