শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
‘পা ধরে’ কান্নার কথা তদন্ত কমিটিকে জানালেন তিতাসের মা

‘পা ধরে’ কান্নার কথা তদন্ত কমিটিকে জানালেন তিতাসের মা

স্বদেশ ডেস্ক:

ফেরির লোকদের পা ধরে কান্নাকাটি করার কথা তদন্ত কমিটির সদস্যদের জানিয়েছেন ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যু হওয়া স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের (১২) মা সোনামণি ঘোষ।

এক যুগ্ম সচিবের অপেক্ষায় তিন ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়ায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ির ১ নম্বর ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গঠিত নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কমিটি ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তদন্ত কমিটির কাছে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দেন সোনামণি।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা তিতাস ঘোষের বাড়িতে যান। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিতাস ঘোষের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য শোনেন তারা।

সেখানে ঘটনার দিন উপস্থিত তিতাসের মা সোনামণি ঘোষ, বোন তন্নীসা ঘোষ, তিতাসের মামা বিজয় ঘোষ, অ্যাম্বুলেন্সে থাকা চিকিৎসক, নার্স ও অ্যাম্বুলেন্স চালকের বক্তব্য শোনেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিতাসের মা সোনামণি ঘোষ বলেন, ‘গত ২৪ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে তিতাসকে প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেওয়ার কথা বলেন চিকিৎসকরা। ২৫ জুলাই তিতাসকে ঢাকায় নেওয়ার জন্য রওনা হই আমরা। রাত ৮টায় কাঁঠালবাড়ি ১ নম্বর ফেরিঘাটে তিতাসকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছায়। অ্যাম্বুলেন্সে আমি, আমার মেয়ে এবং আমার ভাই ছিল। ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছার দীর্ঘক্ষণ পরও ফেরিতে অ্যাম্বুলেন্স তোলা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বার বার বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের কাছে ছুটে গেলেও তারা আমাদের ফিরিয়ে দেন। ওই সময় কাঁদতে কাঁদতে বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের পা ধরি আমি। অনেক অনুরোধ করেছি তাদের। এরপরও তারা ফেরি ছাড়তে রাজি হননি। তারা বলেছিল অ্যাম্বুলেন্স তুললে চাকরি থাকবে না। কোনো উপায় না পেয়ে সরকারি জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেও সহযোগিতা পাইনি। পরে ওই ভিআইপি আসার অপেক্ষায় তিন ঘণ্টা ঘাটে বসে থাকতে হয়। শেষ পর্যন্ত রাত ১১টার দিকে ওই ভিআইপির আত্মীয়রা এলে ফেরি ছাড়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় তিতাস।’

তদন্ত কমিটির কাছে একই বক্তব্য দিয়েছেন তিতাসের বোন তন্নীসা ঘোষ, মামা বিজয় ঘোষ ও অ্যাম্বুলেন্সের চালক। তারা বলেছেন, বার বার ঘাটের লোকদের অনুরোধ করা হলেও ভিআইপি আসার দোহাই দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ফেরিতে তোলা হয়নি। ফেরির লোকেরা বলেছেন, অ্যাম্বুলেন্স তুললে তাদের চাকরি চলে যাবে। পরে ওই ভিআইপি এলে রাত ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া হয়। ততক্ষণে তিতাসের মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান সঞ্জয় কুমার বণিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ভুক্তভোগী তিতাসের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য যাচাই-বাছাই করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবো।’

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল আহসান বলেন, ‘তদন্তকাজ চলছে। তদন্ত শেষে ফলাফল জানা যাবে।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ১ নম্বর ফেরিঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছিল সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত স্কুলছাত্র তিতাসকে বহনকারী একটি অ্যাম্বুলেন্স। তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর রাত ১১টার দিকে ফেরিতে ওঠে অ্যাম্বুলেন্সটি। কিন্তু ততক্ষণে মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় ওই স্কুলছাত্র।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম সচিব আবদুস সবুরের জন্য ফেরি ছাড়তে দেরি হওয়ার কারণে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

নিহত তিতাস ঘোষ নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পৌর এলাকার মৃত তাপস ঘোষের ছেলে। কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল তিতাস।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877