শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৩:০৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

ওষুধ নিয়ে ঠেলাঠেলি

স্বদেশ ডেস্ক:

এডিস মশা নিধনে বিদেশ থেকে কে আনবে কার্যকর ওষুধ-এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত পরস্পরের কাঁধে দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলেছে সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওষুধ কে আনবে তা স্পষ্ট করতে গতকাল সকালে হাইকোর্ট ডেকে পাঠান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের (এলজিআরডি) সচিবকে। বেলা ২টায় আদালতে উপস্থিত হয়ে সচিব জানান, মশার ওষুধ বেসরকারিভাবে উৎপাদন হয়। তাই সরকার টু সরকার (জি টু জি) পদ্ধতিতে আমদানি করা কষ্টকর হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ওই ওষুধ আনার জন্য সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সব পক্ষের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ডেঙ্গু নিধনে বিদেশ

থেকে নতুন ও কার্যকরী ওষুধ আনার নির্দেশ দেন রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনকে। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে (এলজিআরডি) নির্দেশ দেন এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য।

আদালত বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার বিভাগ মশা মারার ওষুধ দ্রুত আনার ব্যাপারে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে ‘লাইসেন্স’ ও ‘ক্লিয়ারেন্স’ প্রদানসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক সহযোগিতা দেবে। সংকট মোকাবিলায় সম্ভব হলে সরকার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওষুধ এনে দুই সিটিসহ দেশব্যাপী স্থানীয় সরকারের সব দপ্তরকে সরবরাহ করবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ন্যূনতম একজন সহযোগী অধ্যাপককে দায়িত্বে নিয়োজিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে বলেছেন আদালত। একজন রোগীও যেন বিনা চিকিৎসায় ফিরে না যায়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে আদালতের তরফে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে যতটুকু সম্ভব এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছেন আদালত। এ ছাড়া প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গু শনাক্তকরণে পর্যাপ্ত পরিমাণে কিটস আমদানি করে সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করতে বলেছেন আদালত। নাগরিকরা যেন সুলভ মূল্যে এটা পেতে পারেন তাও নিশ্চিত করতে হবে, নির্দেশে বলেছেন আদালত।

এর আগে গত ৩০ জুলাই বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মশা নিধনে নতুন কার্যকর ওষুধ কবে দেশে আনা হবে সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য এফিডেভিট আকারে দুই সিটি করপোরেশনকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী গতকাল সকালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষে তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম টিপু আদালতকে বলেন, আমরা চীন থেকে ওষুধ আনার উদ্যোগ নিয়েছি। দু-এক দিনের মধ্যে ওষুধের স্যাম্পল চলে আসবে। এর পর ফিল্ড টেস্ট করে রেজাল্ট পেলে ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে ওষুধ আনা সম্ভব হবে। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পক্ষে তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইদ আহমেদ রাজা আদালতকে এফিডেভিট দাখিল করে বলেন, ওষুধ আনবে সরকার। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ওষুধ এনে দেবে। সিটি করপোরেশন সেটা ছিটাবে। এজন্য সরকারের প্রতি যেন আদালত আদেশ প্রদান করেন, সে আবেদন করেন তিনি। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মইনুল হাসান আদালতকে বলেন, ওষুধ সিটি করপোরেশনকেই আনতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মিটিং-এ সিদ্ধান্ত হয়েছে দুই সিটি করপোরেশনই ওষুধ আনবে। এভাবে ওষুধ কে আনবে তা নিয়ে পরস্পরের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার এক পর্যায়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দুপুর ২টার সময় ডেকে পাঠান হাইকোর্ট।

সে অনুযায়ী দুপুর ২টার দিকে হাইকোর্টে হাজির হন স্থানীয় সরকার সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানও তার সঙ্গে ছিলেন।
শুনানি শুরু হলে সচিব আদালতকে বলেন, ‘অনেকের ধারণা, মশার নিধনের যে ওষুধটি চলছে সেটা দিয়ে মশা মরছে না। ফলে ২৮ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এলজিইডি, দুই সিটি করপোরেশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং হয়। সেখানে ‘ম্যালাথিয়ন’ নামক ওষুধটি আনার সিদ্ধান্ত হয় এবং সেটা আনার দায়িত্ব দেওয়া হয় দুই সিটি করপোরেশনকে। আমরা টাকাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেব।’ এ সময় আদালত জানতে চান, ওষুধ আপনারা আনবেন, নাকি সিটি করপোরেশন আনবে। জবাবে সচিব বলেন, যেহেতু সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং সিটি করপোরেশন তা আনার উদ্যোগ নিয়ে ফেলেছে। এ সময় আদালত বলেন, ‘একটা বিষয় স্পষ্ট করার জন্য আপনাকে আসতে বলা হয়েছে। ওষুধ সিটি করপোরেশন আনে নাকি সরকার আনে, কোনটা সঠিক। ডিএসসিসি তো দরখাস্ত দিয়ে নির্দেশনা চেয়েছে যাতে আপনারা ওষুধ আনেন।’

সচিব বলেন, দেশে ক্রাইসিস পিরিয়ড চলছে। দুই সিটিসহ আমরা সমন্বিতভাবে আনার উদ্যোগ নেব। আদালত বলেন, এটা পরিষ্কার করতে হবে। আপনারা একজন আরেকজনের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। আপনারা (সরকার) বলছেন সিটি করপোরেশন আনবে। আবার সকালে সিটি করপোরেশন বলেছে সরকার আনবে। নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকার বাইরের এলাকার জন্য কে আনবে? জি টু জি পদ্ধতিতে কথা বলে সরকার আনতে পারে। যেহেতু ইমার্জেন্সি পিরিয়ড চলছে সরাসরি ওষুধ আনতে হবে। আপনাদের আনতে অসুবিধা কি? তখন সচিব বলেন, আমি তো হঠাৎ এসেছি। সবার সঙ্গে কথা বলে জানাতে হবে। পরে আদালত ৪টায় ওই সিদ্ধান্ত জানানোর নির্দেশনা দিয়ে শুনানি মুলতবি করেন।

পরে বিকাল ৪টায় স্থানীয় সরকার সচিব হাইকোর্টকে জানান, ওষুধগুলো বেসরকারি পর্যায়ে উৎপাদন হয়। সরকারিভাবে আনাটা কষ্টকর হয়ে যাবে। সিটি করপোরেশনকে ইতিমধ্যে ওষুধ আনার জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় হাইকোর্ট জানতে চান, ওষুধ কতদিনের মধ্যে আনা সম্ভব হবে। তখন উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয় ১৪ কার্যদিবস বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। এ সময় দক্ষিণ সিটির আইনজীবী বলেন, মূল টার্গেট হচ্ছে বর্তমান ওষুধ অকার্যকর, নতুনটা তাড়াতাড়ি আনতে হবে। উত্তর সিটি করপোরেশন যেভাবে আসে আমরাও সেভাবে আনব। পরে হাইকোর্ট ওষুধ দুই সিটি করপোরেশনকে আনতে নির্দেশ দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সার্বিক সহযোগিতার নির্দেশ দেন।

আদেশের পর ডিএনসিসির আইনজীবী ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম টিপু সাংবাদিকদের জানান, দুই সিটি করপোরেশন যেহেতু অধিক কার্যকরী ওষুধ আমদানি করবে, সে ক্ষেত্রে যাতে দ্রুত ওষুধ আনতে পারে সে ব্যাপারে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সার্বিক সহযোগিতা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলোও তিনি নিশ্চিত করেন।

পথশিশু ও অসচ্ছলদের বিনামূল্যে ডেঙ্গু চিকিৎসার নির্দেশ : ডেঙ্গু আক্রান্ত সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু ও অসচ্ছলদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা দিতে সব সরকারি হাসপাতাল এবং সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালককে আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে এই নির্দেশ মোতাবেক কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, সে বিষয়ে প্রতিবেদন আকারে জানাতে বলা হয়েছে। জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গতকাল বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. কাজী জাহিদ ইকবাল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. লুৎফর রহমান (রাসেল), ব্যারিস্টার অনিক আর হক, ব্যারিস্টার রেজ এমডি সাদেকীন প্রমুখ।

এর আগে গত ৩১ জুলাই ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত পথশিশুটিকে ভর্তি নেয়নি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল’ শিরোনামে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওইসব রিপোর্ট সংযোজন করে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877