স্বদেশ ডেস্ক:

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটি রমজান মাসকে সামনে রেখে জনসম্পৃক্ত নানা ইস্যুতে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেমেছে। এসব কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ জমায়েত করতে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কাজ করছে বেশ কয়েকটি সাংগঠনিক টিম। গতকাল জেলা পর্যায়ে বড় বড় সমাবেশ করেছে দলটি। এতে কেন্দ্রের সিনিয়র নেতারা সশরীরে উপস্থিত থেকে আগামী দিনের আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে তারা সাধারণ মানুষের নিত্যদিনকার সমস্যা তুলে ধরে তা নিরসনে সরকার হটানোর কোনো বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেছেন। বিএনপির তরফ থেকে জনগণের কাছে দেশের বর্তমান সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে লিফলেটও ছাপানো হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া দিগন্তকে বলেন, এই সরকারের কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের যেমন বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ নেই, উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ নেই। দুর্নীতির কারণে এমন একটা পর্যায় চলে গেছে যে, প্রতিটি ক্ষেত্রে ২০-২৮% জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়েছে, তারা কৃত্রিমভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই সরকারের কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। সরকারের চরম দুর্নীতির প্রভাব বাজারে গিয়ে পড়ছে এবং জনগণকে তার মাসুল দিতে হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদে আমরা মাঠ পর্যায়ে কর্মসূচি নিয়ে যাচ্ছি, জনগণকে সম্পৃক্ত করছি। তিনি জনগণকে এসব কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং উপজেলা পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে পর্যাপ্ত দ্রব্যসামগ্রী বিক্রির দাবিতে সারা দেশে ১১ দিনের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এরই মধ্যে রাজধানীতে এবং বিভাগীয় সদর ও মহানগরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ২ মার্চ জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করেছে দলটি। আগামী ৫ মার্চ উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। ৬ মার্চ ছাত্রদল, ৮ মার্চ যুবদল, ৯ মার্চ স্বেচ্ছাসেবক দল, ১০ মার্চ কৃষক দল, ১৪ মার্চ মহিলা দল ও ১৫ মার্চ তাঁতী দলের উদ্যোগে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। এর মধ্যে ১২ মার্চ সারা দেশে ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে হাটবাজারে হাটসভা-পথসভা ও লিফলেট বিতরণ করা হবে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলটি সরকারবিরোধী আন্দোলনের একটি রোডম্যাপ তৈরির পথে রয়েছে। এজন্য তারা সমমনা বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণে রাজনৈতিক একটি বৃহত্তর ঐক্য গঠনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চলতি মার্চে এই প্রক্রিয়া আরো সামনে এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে তাদের। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বৃহৎ জোটের মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী একটি যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো যার যার অবস্থানে থেকে কর্মসূচি পালন করবে। বিএনপি এই জোট গড়ে তোলার আগে ২০ দলীয় জোট ও সমমনা দলগুলোর সাথে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। একইসাথে দলগুলোর সাথে কোনো দূরত্ব থাকলে তা মিটিয়ে ফেলারও চেষ্টা চলছে।

এ প্রসঙ্গে এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ বলেছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০ দলীয় জোটের মধ্যে অনেক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষ করে এলডিপির সাথে বিএনপির। আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সমর্থন করিনি। কারণ আমরা জানতে পেরেছিলাম যে, ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আর অধ্যাপক ডা: বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছিল। পরে যা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি এখন অনুধাবন করছে যে, এ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল ও জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দ্রব্যমূল্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা জিনিসের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে চলমান কর্মসূচি জনসম্পৃক্ত বাড়ানোর পরিকল্পনারই অংশ। বিএনপি এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার চিন্তাও করছে। নেতারা মনে করছেন, সরকারের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ জনগণ আগামী দিনের আন্দোলনে আর ঘরে বসে থাকবে না, তারা মাঠে নেমে আসবে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী কর্মসূচিতে ব্যাপক উপস্থিতি দেখে বিএনপির এই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, এই সরকারের আমলে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কোথাও কোনো স্বস্তি মিলছে না। বিএনপি সাধারণ মানুষের দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এসব কর্মসূচি ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে, জনসম্পৃক্ততা দারুণভাবে বেড়েছে। আমরা মাঠে-ঘাটে-হাটে-বাজারে কর্মসূচি নিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আগামী দিনেও বিএনপি এ ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করবে। সেসব কর্মসূচিতেও জনগণের সম্পৃক্ততার এই ¯্রােত অব্যাহত থাকবে।