স্বদেশ ডেস্ক:
রাজারবাগের পীর দিল্লুর রহমানের বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার পার্বত্য অঞ্চলে ৩ হাজার একর জমি ও দেশের ৩৫ জেলায় রয়েছে মাদ্রাসা-মসজিদ। গাড়ি আছে ৫৬টি। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব সম্পদের তথ্য মিলেছে।
দুদকের তথ্য মতে, রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমানের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে গত বছরের ১১ নভেম্বর তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে দুদক। টিমের প্রধান হিসেবে আছেন সংস্থাটির উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। সদস্য হিসেবে আছেন সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম ও মো. আলতাফ হোসেন।
দুদকের এক কর্মকর্তা বলেছেন, রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুর রহমানের সম্পদের অনুসন্ধান করার ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা আছে। সেই নির্দেশনা অনুসরণ করে কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। দুদকের একটি দল রাজারবাগ দরবার শরিফের পীরের সম্পদের অনুসন্ধান করছে। পীর তার সম্পদের কিছু তথ্য দুদকের দলকে দিয়েছে। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে পীরকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। অনুসন্ধান পর্যায়ে দুদক যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
দুদকের টেবিলে থাকা তথ্যমতে, পীর দিল্লুরকে দুদক কার্যালয়ে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় তার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে (রাজারবাগ দরবার) পীর দিল্লুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তার সম্পদ, তার নিয়ন্ত্রণাধীন মাদ্রাসা, মসজিদ এবং গাড়ির মালিকানা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে পীর দিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, বান্দরবনের লামা উপজেলায় ৩ হাজার একর বনভূমি রয়েছে তার। বিভিন্ন দাগে এসব জমি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে লিজ নেওয়া হয়েছে মাত্র ৯ লাখ টাকায়। যা তিনি ১৯৯৪ সালে এক সাল মেয়াদি লিজ নিয়েছেন। এসব বনভূমি এখনো তার দখলে রয়েছে।
তিনি আরও জানান, দেশের ৩৫টি জেলায় তার মোহাম্মাদিয়া জামিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসার নামে যেসব জমি রয়েছে সেগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে দান হিসেবে পেয়েছেন। মাদ্রাসার নামে দানে বা হেবা দলিলমূলে জমি পেয়ে তিনি মাদ্রাসা গড়ে তোলেন। এ ছাড়া মসজিদের জমিও একইভাবে তিনি পেয়েছেন।
দুদকের টেবিলে থাকা তথ্যমতে, পীর দিল্লুরের সাইয়্যেদুল কাশিম এগ্রিকালচার লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি রয়েছে। এ কোম্পানির অধীন পুরনো মডেলের ৫৬টি গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়িতে মধুসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিক্রি করা হয়। রাজারবাগ দরবারের বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা ভবনটি তার পৈত্রিক মালিকানা। অন্যান্য বাড়িও বিভিন্ন ব্যক্তি তাকে দলিল করে দান করেন।
দুদকের এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে রাজারবাগ পীরের সম্পদের যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে, তা তুলে ধরে গত ২ ফেব্রæয়ারি একটি প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে অনুসন্ধানের জন্য আরও ৩ মাস সময় চাওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধান টিমের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পার্বত্য অঞ্চলের বনভূমি ৩ হাজার একর জমি নামমাত্র মূল্যে কীভাবে লিজ পেলেন এবং গত ১৭ বছর ধরে কীভাবে দখলে রাখেন, তা অনুসন্ধান করতে অনেক সময় প্রয়োজন। এ ছাড়া ৩৫ জেলায় মাদ্রাসা ও মসজিদের নামে যেসব সম্পদ রয়েছে সেগুলো কারা দান করেছেন, কেন দান করেছেন, তা অনুসন্ধানের জন্য সময় প্রয়োজন। এ কারণে আদালতে ৩ মাস সময় চাওয়া হয়েছে।
দুদকের টেবিলে থাকা অভিযোগ থেকে জানা যায়, রাজারবাগের পীর দিল্লুর রহমান ও তার প্রতিষ্ঠানগুলো সারাদেশে গড়ে তুলেছে হয়রানিমূলক মামলা সিন্ডিকেট। কারও জমিজমা ও সম্পদ হাতিয়ে নিতে না পারলে তার বিরুদ্ধে ঠুকে দেন মামলা। পীর সিন্ডিকেট সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৭ হাজার একর জমি ও রবার বাগান অবৈধভাবে দখল করেছে। এই সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে শত শত মানুষ। বিনা দোষে জেল খটেছেন অনেকেই। সিন্ডিকেটের আচরণ সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে শুরু করেন। অভিযোগ গড়ায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে। তদন্তে নেমে মানবাধিকার কমিশনও এর সত্যতা পায়।
পীর সিন্ডিকেটের মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে গত ৭ জুন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন রাজধানীর শান্তিবাগের বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চন। তার বিরুদ্ধে পীর সিন্ডিকেটের করা ৪৯টি মিথ্যা মামলার বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে আসে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পীর সিন্ডিকেটের বিষয়ে সিআইডির দেওয়া তথ্য দেখে রীতিমতো বিস্মিত হন হাইকোর্ট। এরপর আরও ৮ ভুক্তভোগী বাদী হয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। সবার প্রায় একই অভিযোগ।