স্বদেশ ডেস্ক: রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে জাপান। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন এ কথা জানান। এর আগে তিনি জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনোর সাথে বৈঠক করেন।
ড. মোমেন বলেন, জাপান মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। টোকিওতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের ডেকে তারা মধ্যস্থতা করতে চায়। জাপানের প্রস্তাবে ঢাকার অবস্থান কী জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ প্রস্তাবটি বিবেচনা করবে।
এর আগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মধ্যস্থতার জন্য একাধিক বৈঠকের আয়োজন করেছিল চীন। এই প্রেক্ষাপটে একই ইস্যুতে জাপানের মধ্যস্থতা প্রস্তাব কোনো দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় না। তাদের মধ্যে ঝগড়া থাকতে পারে। কিন্তু আমরা আমাদের স্বার্থ দেখব।
ড. মোমেন বলেন, আজকের বৈঠকে আমি জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে না গেলে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এখান থেকে তারা যত তাড়াতাড়ি যাবে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে জাপানের বিনিয়োগ তত দ্রুত সুরক্ষিত হবে।
তিনি জানান, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার (৩১ জুলাই) মিয়ানমারে যাবেন। সেখানে আমাদের বক্তব্য ও তার পর্যালোচনা মিয়ানমারকে জানাবেন। রাখাইনে বেসামরিক পর্যবেক্ষক পাঠানোর বাংলাদেশের প্রস্তাব জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশংসা করেছেন বলে জানান ড. মোমেন।
তারো কোনো গত সোমবার রাতে বাংলাদেশে আসেন। মঙ্গলবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন তিনি।
দীর্ঘমেয়াদি রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করবে : প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট দীর্ঘায়িত হলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরী হবে, যার প্রভাব বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর পড়বে। অভ্যন্তরীণ বা বাইরের কোনো শক্তি পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে। এ সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে সব দেশের সহযোগিতা প্রয়োজন।
বিমসটেক নিরাপত্তা সংলাপ ফোরামের দ্বিতীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা এ আশঙ্কার কথা জানান। গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটিজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
সংলাপের উদ্বোধন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুর রহমান। স্বাগত বক্তৃতা দেন বিমসটেক মহাসচিব শহীদুল ইসলাম।
জাপানি প্রতিনিধিদলের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন
কক্সবাজার (দক্ষিণ) ও উখিয়া সংবাদদাতা জানান, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারা কোনো ও জাপানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্প পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গাদের সাথে তারা কথা বলেন এবং ক্যাম্পের দায়িত্বে নিয়োজিত স্থানীয় প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারা কোনো বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের সম্মানের সাথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্বদেশে প্রত্যাবাসনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বোঝা বাংলাদেশের জন্য একটা বিশাল চাপ। এ চাপ সামলাতে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শনের আহ্বান জানান।
পরিদর্শনকালে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারা কোনোর সাথে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম, ইউএনএইচসিআরের কক্সবাজারের প্রধান মারিন, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শরণার্থীবিষয়ক ডেস্কের পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা সাথে ছিলেন। এর আগে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারা কোনো সেদেশের ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিদলসহ সকাল সাড়ে ৯টায় জাপানে একটি বিশেষ ফ্লাইটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান।