স্বদেশ ডেস্ক:
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আপাতত না ভেঙেই এ আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় দলটি। এ দুই জোটের বাইরে যেসব ডান ও বাম দল রয়েছে তাদেরও পাশে চায় বিএনপি। গত সোমবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির ভার্র্চুয়াল বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।
সরকারবিরোধী বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে ২০-দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের কাঠামো অটুট থাকবে নাকি বিলুপ্ত করা হবে, জামায়াতে ইসলামীকে আদৌ জোটে রাখা সম্ভব কিনা- এমন প্রশ্নে দল ও দলের বাইরে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিএনপিও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কয়েক দফা বৈঠক করে। এ অবস্থায় কোনো সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে কীভাবে রাজপথের আন্দোলন সফল করা যায় তাতেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এ চিন্তা থেকেই সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য বা মঞ্চ গঠনের লক্ষ্যে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, দলের ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উচ্চপর্যায়ের দুটি কমিটি করা হয়েছে। একটি কমিটির নেতৃত্বে আছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান। এ কমিটি ২০-দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে। অন্য কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়। তার সঙ্গে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এ কমিটি বাম দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবে।
বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা আমাদের সময়কে জানান, স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা করে এ কমিটি গঠন করেছেন। এসব কমিটির নেতারা দ্রুত সময়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে একটা গাইডলাইন তৈরি করবেন। এর পর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের দাবি স্পষ্ট, নির্বাচনের সময় এমন একটি সরকার থাকতে হবে- যে সরকার হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ। যে সরকারের অধীনে দেশের মানুষ বিনা বাধায় তার পছন্দের প্রার্থীকে স্বাধীনভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে। এ জন্যই আমরা এক দফার আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার এ আন্দোলনে ডান বামসহ দেশের সবাইকে আমরা চাই। রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, জাতীয় সরকার হোক বা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার হোক তার একটি কাঠামো থাকতে হবে। সেই সরকারব্যবস্থায় কে প্রধান হবেন, সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে সব কিছুই লিখিত হতে হবে। ১২০ দিনের বেশি কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকলে জাতীয় সরকার বলেন, আর নিরপেক্ষ সরকার বলেন যারা আসবে তারা হয়তো সুযোগ পেয়ে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য নির্বাচন না দিয়ে কৌশলে ক্ষমতায় থেকে যেতে পারে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে বিএনপি যে বৃহৎ ঐক্য গড়ার কথা বলছে, তার কাঠামো কী হবে? মনে হচ্ছে, বিএনপি একটা জায়গায় আটকে আছে। দলটির নেতাদের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে তারা যুগপৎ আন্দোলন করতে চায়। সেটা হলেও বিএনপিকে উদ্যোগ নিতে হবে, তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। কথা বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, বৃহত্তর জোট গঠনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চলছিল। কিন্তু জামায়াত বিষয়ে আপত্তি থাকায় তা ঝুলে যায়। বিএনপি মনে করে জামায়াত একটি শক্তি। এ মুহূর্তে কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সবাইকে নিয়েই আন্দোলন করতে চায় বিএনপি। সেই চিন্তা থেকেই যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বিএনপি নিরপেক্ষ সরকার দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের একটি রূপরেখা ঘোষণা করবে। সেখানে জামায়াত যদি ভ‚মিকা রাখে তা হলে তাকে কোন যুক্তিতে বাদ দেওয়া হবে? দলের একজন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, যুগপৎ আন্দোলন দেখে বৃহৎ জোট বা মঞ্চে কারা থাকবে বা থাকবে না তা আলোচনা করেই নির্ধারণ করা হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অবশেষে সব জড়তা ভেঙে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এক দফার আন্দোলনে যেতে। কারণ আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চাই জনগণের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র আইনের শাসন মানবাধিকার সে জন্য যা কিছু প্রয়োজন সর্বশক্তি নিয়োগ করে বিভিন্ন স্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকার পতনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ব।