স্বদেশ ডেস্খ:
কোভিড ১৯-এর কারণে হজ নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে সরকারি-বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায়ই প্রাক-নিবন্ধনের কার্যক্রম চলছে; কিন্তু হজ নিবন্ধন করার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোবাইলে কল করে এবং খুদেবার্তা (মেসেজ) পাঠিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতে সক্রিয় হয়েছে প্রতারকচক্র। এ সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগ জমা হয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে। প্রতারণা এড়িয়ে সকল ধরনের লেনদেন থেকে বিরত থাকতে হজ গমনেচ্ছুদের সতর্ক করে সরকার।
প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া প্রতারকদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ দেশের সকল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের স্ক্রলবারে সম্প্রচারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কেও চিঠি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন স্বাক্ষরিত চিঠিগুলো মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ প্রায় ৩০ দপ্তর-সংস্থায় পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, হজ নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হলে সবাইকে জানানো হবে। সুতরাং নিবন্ধনের কথা বলে কেউ টাকা চাইলে তা এড়িয়ে চলুন। এ ধরনের লেনদেনের জন্য কোনো ব্যক্তি ফোন করলে বা প্রস্তাব দিলে বিষয়টি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই মোবাইল নম্বরে ০১৭২০২০৯৫৯৯ যোগাযোগ করার পাশাপাশি নিকটস্থ থানাকে অবহিত করার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছে। হজ কার্যক্রম শুরু হলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি সর্বসাধারণকে জানানো হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কোভিড ১৯-এর কারণে বহির্বিশ্ব থেকে হজ ও ওমরাহ কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে ওমরাহ কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়।
হজে গমনের নিবন্ধন কার্যক্রম এখনো বন্ধ রয়েছে। এজন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে হজের নিবন্ধন সংক্রান্ত কোনো কাজের অনুমোদন এখনো দেওয়া হয়নি। তবে হজের প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রম চালু রয়েছে; কিন্তু হজে নেওয়ার কথা বলে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি সহজসরল ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সাথে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করছে।
প্রতারণার শিকার বেশ কয়েকজনের বিষয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) ০১৮৮৬৯৬৫২১৫ নাম্বার থেকে ফোন করে হজের নিবন্ধনের কথা বলে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার পারখিদিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আফতাব হোসেনের কাছ থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করে এক প্রতারক।
অন্য একটি কেস স্টাডিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কিছুদিন ধরেই এমএ হায়দার (মোবাইল নম্বর ০১৮১৬৪০৩৫৫৮) নিজেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে দেশের সহজসরল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সরকারিভাবে হজে পাঠানোর কথা বলে অর্থ চেয়ে প্রতারণা করে আসছে। অনেকেই প্রতারণার খপ্পড়ে টাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। হজে প্রেরণ কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও প্রলুব্ধ করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা চাওয়া প্রতারণার সামিল এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ অনুযায়ী অপরাধ। এ ছাড়া গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে টেলিফোন নম্বর ৯৫৪৬৯০ থেকে প্রতারকের ০১৮৮৬৯৬৫২১৫ নম্বরে ফোন দিলে মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এতে প্রমাণ হয় যে, এ ধরনের প্রতারকরা একেক সময় একেকটি মোবাইল সিম ব্যবহার করে। প্রতারকরা বারবার বিভিন্ন মোবাইল সিম ব্যবহার করার কারণে তাদের সাথে পরবর্তীতে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। তাদের এমন কার্যক্রমে সরলপ্রাণ মুসলমানদের মনে পবিত্র হজ এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হবে এবং নিরীহ সাধারণ জনগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই এ ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, করোনার কারণে বাংলাদেশ থেকে খুব কম লোকই হজের সুযোগ পাবেন- এমন কথা বলে হজে গমনেচ্ছুদের সাথে যোগাযোগ করছে প্রতারকচক্র। তারা হজ নিবন্ধনের কথা বলে ৭ হাজার ৫০০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। হজ করার সুযোগ নিতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও প্রতারকদের বিশ্বাস করে তাদের প্রতারণার জালে পা দিচ্ছে। এ কারণে সর্বসাধারণকে সতর্ক করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
কর্মকর্তারা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে এখনো সৌদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের হজচুক্তি হয়নি। কারণ বহির্বিশ্ব থেকে হজের সুযোগ মিলবে কিনা তা নিশ্চিত নয়। গত দুবছর শুধু সৌদি আরবে অবস্থানকারীরাই হজের সুযোগ পেয়েছেন। বহির্বিশ্ব থেকে কেউই হজে যেতে পারেননি। এবারও এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সৌদি সরকার। করোনা পরিস্থিতি দেখেই হয়তো কিছুদিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে সৌদি আরব।