শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:৫৮ অপরাহ্ন

চলতি সপ্তাহে সার্চ কমিটি, আগামী সপ্তাহে নতুন ইসি

চলতি সপ্তাহে সার্চ কমিটি, আগামী সপ্তাহে নতুন ইসি

স্বদেশ ডেস্ক:

নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের লক্ষ্যে চলতি সপ্তাহেই সার্চ কমিটি হচ্ছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে দুই সপ্তাহ পর। এর আগেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ বিলে স্বাক্ষর করেছেন। ফলে প্রথমবারের মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আইন পেয়েছে বাংলাদেশ। নতুন এ আইনের আলোকেই চলতি সপ্তাহে ইসি গঠন প্রক্রিয়াসহ সার্চ কমিটি গঠন হচ্ছে। আজ-কালের মধ্যে সার্চ কমিটি এবং আগামী সপ্তাহে নতুন ইসি গঠন হতে পারে বলে জানা গেছে।

গত ১৭ জানুয়ারি সংসদে পাস হওয়া ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল ২০২২’-এ রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করার পর বিলটি আইনে পরিণত হয়েছে। এখন থেকে এ আইন পালনের বাধ্যবাধকতা শুরু হবে।

আগামী ১৪ ফেব্রæয়ারি বর্তমান কেএম নূরুল হুদা কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগেই নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। সে হিসাবে নতুন ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির হাতে সময় আছে ১৫ দিন। এ সময়ের মধ্যে আইন অনুসারে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে।

সদ্য পাসকৃত আইন অনুসারে, রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন, যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল

বিভাগের একজন বিচারপতি। কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের অপর একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুই বিশিষ্ট নাগরিক। এই দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী। তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম হবে। আর কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

সার্চ কমিটি সম্পর্কে জানতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, সার্চ কমিটি গঠনের জন্য ইতোমধ্যে দুজন বিচারপতি ও দুই বিশিষ্ট নাগরিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সে বিষয়ে এখন আলোচনা চলছে। সার্চ কমিটি প্রধান হিসেবে কয়েকজন বিচারপতির নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এ ছাড়া দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, সাবেক আইন সচিব কাজী হাবিবুল আওয়াল, ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মুহাম্মদ জমির ও সাবেক পিএসসি সদস্য অধ্যাপক ড. এসএম আনোয়ারা বেগম। এ ছাড়া একটি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের একজন নারী অধ্যাপকের নাম শোনা যাচ্ছে। দু-একদিনের মধ্যেই দুটি নাম চ‚ড়ান্ত হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সার্চ কমিটির (অনুসন্ধান কমিটি) কাজ সম্পর্কে বিলে বলা হয়েছে, এ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। এ অনুসন্ধান কমিটি সিইসি ও কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য দুজন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিতে হবে। সার্চ কমিটি সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্যদের অনুসন্ধানের জন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহŸান করতে পারবে।

এ ক্ষেত্রে চলতি সপ্তাহে সার্চ কমিটি গঠন হলে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কাছে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারের প্রস্তাবিত নামের তালিকা চাওয়া হতে পারে। সেখান থেকে কমিটি চ‚ড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে তালিকা উপস্থাপন করবে। কমিটির দেওয়া তালিকা থেকে ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি।

সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে তিনটি যোগ্যতা থাকতে হবে- তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে; ন্যূনতম ৫০ বছর বয়স হতে হবে এবং কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে তার ন্যূনতম ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

সিইসি ও কমিশনার পদের জন্য ছয়টি অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে- আদালত অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা করলে; দেউলিয়া হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে; কোনো বিদেশি রাষ্ট্র্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে; নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদÐে দÐিত হলে; ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার-১৯৭২-এর অধীনে কোনো অপরাধের জন্য দÐিত হলে এবং আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে।

সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং এ বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানসাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন।

কিন্তু সংবিধানের আলোকে ওই আইন গত ৫০ বছরেও হয়নি। গেল এক দশকে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে সর্বশেষ দুই নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছিলেন। এতদিন আইন না হওয়ায় প্রতিবারই ইসি গঠনের সময় শুরু হয় বিতর্ক। এরই মধ্যে অনেক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সংসদে বিল পাস হয়। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হচ্ছে আইনের আলোকে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877