স্বদেশ ডেস্ক:
দুই বছরের সিনিয়র এক ছাত্রকে শারীরিকভাবে লঞ্ছিত ও থাপ্পড় মারার অভিযোগে দুই ছাত্রীকে বহিষ্কার করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা হলেন- নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৬ ব্যাচের সুমাইয়া বিনতে ইকরাম ও তার বান্ধবী একই বিভাগের অনিকা তাবাচ্ছুম মিম। এর মধ্যে সুমাইয়াকে এক বছর ও অনিকা তাবাচ্ছুমকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে তাদেরকে এ শাস্তির সুপারিশ করা হয়। পরে রাত ৯টার দিকে সিন্ডিকেটের বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সুপারিশটি আমলে নিয়ে তাদেরকে বহিষ্কারের আদেশ দেয় সিন্ডিকেট। রাত ১১টার পর জাবির রেজিস্ট্রার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সুমাইয়া ৪৪ ব্যাচের এক ছাত্রকে থাপ্পড় দেয় ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। পরে ভুক্তভোগী ছাত্র রাত ১২টার দিকে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে বিচার দাবি করেন।
ওই রাতেই প্রক্টর অফিসে উভয় পক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের লিখিত সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকলে প্রক্টর অফিসে উপস্থিত প্রশাসনিক ও শিক্ষক সমিতির নেতারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টির সুরহা করার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, মারধরের শিকার শিক্ষার্থীসহ মোট পাঁচজন বটের রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন। তখন সুমাইয়া তাদের পেছন থেকে সাইড দিতে বলে। তখন ওই ছাত্র রাস্তার তো ৭০ ভাগ জায়গা খালি আছে- এমন কথা বলার পর সুমাইয়া উচ্চবাচ্য শুরু করে গালমন্দ করতে থাকে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক শিক্ষার্থী আরও জানান, এ ঘটনার আধা ঘণ্টা পরে সুমাইয়ার ছেলে বন্ধু লাঞ্ছিত শিক্ষার্থীদের ডেকে বিষয়টি মিটমাট করার চেষ্টা করেন। তাদের কথা বলার একপর্যায়ে সুমাইয়া একটি দোকান থেকে তেড়ে এসে ওই ছাত্রকে থাপ্পড় দেয়। তখন আশপাশের শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে সুমাইয়াকে নিবৃত্ত করতে চাইলে সে একটি দোকানে আশ্রয় নেয়। পরে সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকলে প্রক্টরিয়াল টিম উভয়পক্ষকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে লিখিত সাক্ষ্য নেয়।
এ বিষয়ে সুমাইয়া বিনতে ইকরাম তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘রাস্তায় সাইড চাইলে তারা আমাকে উদ্দেশ্য করে আক্রমণাত্মক অঙ্গভঙ্গি করে ও আমাকে নেশাগ্রস্ত বলে সম্বোধন করে। তখন আমি এর প্রতিবাদ জানাই।’
অন্যদিকে ভুক্তভোগী ছাত্র বলেন, ‘এটি সত্যিই লজ্জার ও দুঃখজনক ঘটনা। আমরা বান্ধবীসহ প্রিন্টের কাজে যাচ্ছিলাম। তখন মেয়েটি উচ্চস্বরে সাইড চাইলে আমি বলি- আপু রাস্তার তো ৭০ ভাগ জায়গাই খালি আছে। এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে সে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে। কিন্তু পরে তার ছেলে বন্ধু বিষয়টা সমাধান করতে ডাকলে মেয়েটি হঠাৎ করে আমাকে ধাপ্পড় মেরে বসে।’
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় থাপ্পড় ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করায় সুমাইয়াকে এক বছর এবং গালিগালাজ করা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায় আনিকা তাবাচ্ছুম মিমকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তারা দুজনই এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বিরত থাকবে।