মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৫:৫৮ অপরাহ্ন

১০১ কোটি টাকা পাচারে জড়িত এহসান গ্রুপ

১০১ কোটি টাকা পাচারে জড়িত এহসান গ্রুপ

স্বদেশ ডেস্ক: প্রতারণার ফাঁদে ফেলে লাখো মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এহসান গ্রুপের কর্ণধার মুফতি রাগীব আহসানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ১০১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিং সোসাইটি এবং এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডে গ্রাহকদের বিনিয়োগের টাকা ৯টি প্রতিষ্ঠানে প্রতারণার মাধ্যমে সরিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। হালাল ব্যবসায় বিনিয়োগের নামে তারা হাজার হাজার মানুষকে নিঃস্ব করেছে।
এহসান গ্রুপের অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে ১৯টি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগ এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসান ও তার স্ত্রী সালমা আহসানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে।
এদিকে প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসা গ্রাহকরা বিনিয়োগের অর্থ ফিরে পেতে রাস্তায় নেমেছেন। বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা। প্রতারণার প্রমাণসহ ভুক্তভোগীদের আন্দোলনের মুখে মামলা দায়ের এবং আসামিরা গ্রেপ্তারও হয়েছেন। তবে এসব মামলার তদন্ত চললেও গ্রাহকরা কবে তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলা বিনিয়োগ ফেরত পাবেন, সেটা জানেন না। সিআইডির
বিশেষ পুলিশ সুপার (ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম) হুমায়ুন কবির আমাদের সময়কে বলেন, এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিং সোসাইটি ও এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের নামে গ্রাহকদের টাকা নিয়ে আসামিদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৯টি প্রতিষ্ঠানে টাকা সরিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি তারা ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা সরিয়ে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে মামলা হয়েছে। আসামিরা আর কোথাও টাকা পাচার করেছে কিনা, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
গত ২৩ ডিসেম্বর সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের পরিদর্শক মো. মীর কাশেম বাদী হয়ে পিরোজপুর সদর থানায় অর্থপাচার আইনে মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় রাগীব আহসান, তার স্ত্রী সালমা আহসান, নাজমুল ইসলাম, শামীম হাসান এবং রাগীব আহসানের তিন ভাই আবুল বাশার খান, খায়রুল ইসলাম ও মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে। তাদের বিরুদ্ধে ১০১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, এহসান গ্রুপের এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং এহসান রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড বিল্ডার্সের মাধ্যমে ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে বিনিয়োগের নামে অধিক লাভের প্রলোভনে ফেলে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা মাত্র ৪২৭ জন হলেও তারা পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও বাগেরহাট এলাকার হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে শুধু রসিদের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে আমানত নিয়েছে। এহসান গ্রুপ ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০০৭ সালে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বিধিবিধান পালনে ব্যর্থ হওয়ায় আবেদনটি ২০১২ সালে বাতিল হয়। তবে নির্দেশ অমান্য করে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালানো হয়। ২০১১ সালে তার স্ত্রী সালমা আহসানকে চেয়ারম্যান এবং নিজে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে এহসান রিয়েল এস্টেট নামে প্রতিষ্ঠান খোলেন রাগীব আহসান। এরপর রাগীব আহসানসহ মামলার অন্য আসামিরা ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে পিরোজপুর, বাগেরহাট ও ঝালকাঠির সাধারণ মানুষদের মাঝে প্রচারণা চালান যে, প্রতিষ্ঠানে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে সুদবিহীন দুই হাজার টাকা লভ্যাংশ পাবেন। তাদের প্রলোভনে পড়ে মানুষ দশ বছর, ছয় বছর, ছাপান্ন মাস ও চুয়ান্ন মাস মেয়াদে বিনিয়োগ করে। এলাকার মসজিদের ইমামসহ বিভিন্ন লোকজনকে তার প্রতিষ্ঠানের ফিল্ড অফিসার হিসেবে নিয়োগসহ তিন জেলাকে ১১টি জোনে ভাগ করে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফিল্ড অফিসাররা আত্মীয়স্বজনসহ সাধারণ মানুষকে প্রলোভনে ফেলে কোটি কোটি টাকা এহসান গ্রুপে জমা করে।
সিআইডি কর্মকর্তারা বলেন, এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের গ্রাহকদের বিনিয়োগের শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নামে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠানে টাকা সরিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন সিআইডি কর্মকর্তারা। নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এসব প্রতিষ্ঠানে অন্তত ১০১ কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে সরিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ নূর-ই-মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট একাডেমি, নূরজাহান মহিলা মাদ্রাসা, পিরোজপুর বস্ত্রালয়, আল্লাহুর দান বস্ত্রালয়, মক্কা এন্টারপ্রাইজ, বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স, সাহাবা হজ কাফেলা ও এহসান সাউন্ড সিস্টেম। প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও মামলার আসামিরা নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা সরিয়েছে।
জানা গেছে, রাগীব আহসান ২০০৭ সালে ইমামতির পাশাপাশি একটি এমএলএম কোম্পানিতে ৯০০ টাকা বেতনে চাকরি করতেন। সেখান থেকে প্রতারণার আদ্যোপান্ত রপ্ত করে আত্মসাতের ব্যবসায় নামেন তিনি। এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসান মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে প্রতারণার মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ‘শরিয়তসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগ’-এর বিষয়টি ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের আড়ালে ব্যবসায়িক প্রচারণা চালান। মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া কোটি কোটি টাকা নিজের এবং আত্মীয়স্বজনের নামে করা প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেন। ৩শ কর্মচারী খাটালেও তাদের বেতন দিতেন না। গ্রাহকের পাশাপাশি কর্মচারীরাও প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
এদিকে বিনিয়োগকারীরা টাকা কিভাবে এবং কবে ফেরত পাবেন তা জানে না কেউ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার এবং পাচারের টাকা কোথায় আছে সেই বিষয়ে তদন্ত করছি। গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ নয়।
গত ৯ সেপ্টেম্বর রাগীব আহসান এবং তার চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পিরোজপুর সদর থানায় একটি মামলা করেন হারুন অর রশীদ নামের এক বিনিয়োগকারী। সেই রাতেই রাগীবের ভাই পিরোজপুর শহরের বাজার মসজিদের ইমাম মাহমুদুল হাসান এবং খায়রুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পিরোজপুর সদর থানাপুলিশ। এর পর একই দিন ঢাকা থেকে রাগীব এবং তার আরেক ভাই আবুল বাশারকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাদের বিরুদ্ধে ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করে র‌্যাব।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877