স্বদেশ ডেস্ক:
দেশে করোনা প্রতিরোধী টিকার বুস্টার ডোজ প্রদান আজ রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে। রাজধানীর মহাখালীস্থ বিসিপিএস মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রম শুরু হবে। এদিন ট্রায়ালরান হিসেবে চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের কয়েকজনকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে বয়স্ক ও বিভিন্ন সেবায় জড়িত অন্য সম্মুখসারির মানুষদেরও দেওয়া হবে। বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজারের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ বুস্টার ডোজ পাওয়ার ক্ষেত্রে যারা প্রথম টিকা নিয়েছিলেন (গত ৭ ফেব্রুয়ারি) তারাও অগ্রাধিকার পেতে পারেন- এমন তথ্য সংশ্লিষ্টদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং টিকা গ্রহণের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী দেশের নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে দুই ডোজ টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ১০ কোটির বেশি মানুষ করোনার অত্যন্ত এক ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনার নতুন সংক্রামক ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বুস্টার ডোজ দেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও বুস্টার ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ১৯ ডিসেম্বর থেকে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হবে। তবে এদিন কতজনকে টিকা দেওয়া হবে এটি জানা নেই। চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী এবং গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে টিকা দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা থাকবেন। টিকা দেওয়ার পর তাদের ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণ করা হবে। এর পর স্বল্পসময়ের ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে দেওয়া শুরু হবে বুস্টার ডোজ। ফাইজারের টিকা মিক্সম্যাচ হিসেবে দেওয়া হবে বুস্টার ডোজে। নাইট্যাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এটা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে কাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বুস্টার ডোজ টিকা দেওয়া দেওয়া হবে সেটি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশেষ করে যাদের মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে এমন রোগাক্রান্তরা অগ্রাধিকার পাবেন। পাশাপাশি ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা, সম্মুখসারির যোদ্ধারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসনে কর্মরত, সব ধরনের স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যম কর্মী) অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছেন। পর্যায়ক্রমে সাধারণদের বয়সসীমা ৬০ থেকে কমিয়ে ৫৫তে নামানো হবে। পরে ধাপে ধাপে বয়স আরও কমানো হতে পারে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, বুস্টার ডোজ হিসেবে শুধু ফাইজারের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটার জন্য বিশেষ কোনো নির্দেশনা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে কোন টিকা বুস্টার ডোজ হিসেবে দেওয়া হবে সেই নিদের্শনা দেওয়া হয়নি। যেহেতু বুস্টার হিসেবে বেশিরভাগ দেশে ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে, সেই বিবেচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বাংলাদেশে এই টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, রবি অথবা সোমবার থেকে দেশে করোনা টিকার বুস্টার ডোজ শুরু করা হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তারা বেশ কিছুদিন আগে থেকেই এ নিয়ে কাজ করছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার থেকে বুস্টার ডোজ দেওয়ার প্রস্তুতি আছে। প্রাথমিকভাবে সীমিত আকারে এটা শুরু করা হবে। আশা করি টিকার যে সরবরাহ রয়েছে, ঘাটতি হবে না।
এদিকে গতকাল শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে খুব বড় করে বুস্টার ডোজ কার্যক্রম শুরু হবে না। যে কোনো টিকার ক্ষেত্রেই আমরা শুরুতে সতর্কতামূলকভাবে কিছু জনগোষ্ঠীকে দিয়ে শুরু করি। এর পর কিছুদিন পর্যবেক্ষণের পর বড় আকারে শুরু করা হয়। বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে যাচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে যারা সক্ষম, তাদের দিয়ে বুস্টার ডোজ প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু করব। পরে অবশ্যই বয়স্কদের আনব। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে কোমরবিডিটি কন্ডিশন আমরা বিবেচনায় রাখব। বুস্টার ডোজের ঘোষণা তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। একটি হলো সক্ষমতা এবং আমাদের টিকার পর্যাপ্ত সরবরাহ। আমরা প্রথমে একটি ডোজ দিয়ে টিকা কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। এর পর আমরা সরবরাহ বাড়িয়ে দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে কাজ করেছি। এখন আমাদের সরবরাহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। তাই সরকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ৬ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার ৪৯ জন। দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন ৪ কোটি ৪১ লাখ ৬২ হাজার ৬৯৫ জন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেয়েছেন ১ কোটি ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ২৯৮ জন। ফাইজারের টিকা পেয়েছেন ৩৬ লাখ ১৪ হাজার ৮৬৮ জন। সিনোফার্মের টিকা পেয়েছেন ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৯৬ হাজার ৭৩৭ জন। মর্ডানার টিকা পেয়েছেন ২৭ লাখ ১৫ হাজার ৬১২ জন। সিনোভ্যাকের টিকা পেয়েছেন ৫৪ হাজার ৫৩৪ জন। এ ছাড়া দ্বিতীয় ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেয়েছেন ৭০ লাখ ৯০ হাজার ৫৮৬ জন, ফাইজারের ১২ লাখ ২২ হাজার ৪৬০ জন, সিনোফার্মের ৩ কোটি ৩২ লাখ ১৯ হাজার ২২৭ জন এবং মর্ডানা টিকা পেয়েছেন ২৬ লাখ ৩০ হাজার ৪২২ জন। তবে সিনোভ্যাকের টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রদান এখনো শুরু হয়নি। এ ছাড়া এ পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকাগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮৬ জন এবং দ্বিতীয় ডোজপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ২৭ হাজার ৩০৪ জন।