শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন

অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা

অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনাভাইরাসের নতুন রূপ ওমিক্রনের দ্রুত বিস্তারে বাংলাদেশসহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আবার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওমিক্রনের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হলে এর নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

এর আগে করোনাভাইরাসে দুটি রূপ বাংলাদেশে দুবার হানা দিয়েছে। অনেক দেশে তৃতীয় দফা হানা দিয়েছে। বাংলাদেশেও ওমিক্রন হানা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল। চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স ছাড়া প্রায় সব খাতেই অগ্রগতি ছিল সন্তোষজনক। আশা করা হয়েছিল আগামীতে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে। এ লক্ষ্যে সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি, দূরদর্শী রাজস্ব নীতি গ্রহণ করেছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দিচ্ছে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ। এসব নীতি সহায়তা অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘করোনায় দুই দফায় দেশের অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছে সেটি এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় নতুন করে ওমিক্রন হানা দিলে ক্ষতির মাত্রা এবার বেশি হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে, ওমিক্রন ততটা ভয়ংকর নয়। কিন্তু দ্রুত ছড়াচ্ছে। এখন সতর্কতা অবলম্বন করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রাখার ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি এখন আর একমুখী নয়। বিশ্ব পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ রপ্তানি, আমদানি ও রেমিট্যান্স-এই তিনটি মৌলিক উপকরণ বৈশ্বিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। ফলে বৈশ্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকার প্রবাহ বাড়ানো ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সরবরাহজনিত সংকটের কারণে পণ্যমূল্য বেড়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির হারও বেড়েছিল। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে গতি ফেরায় সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতির হারও কমে আসছে। গত বছরের অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত অক্টোবরে তা কমে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ের ব্যবধানে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ২২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৮ শতাংশের কাছাকাছি। অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবাহও কমেছে। রাজস্ব আদায় বাড়ায় সরকারের ঋণ কমেছে। তবে বেড়েছে কম সুদের বৈদেশিক ঋণ।

এতে আরও বলা হয়, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে আর্থিক এবং রাজস্ব নীতি ব্যাপকভাবে উদ্যোক্তাদের সহায়তা করেছিল। ফলে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক আস্থার পরিবেশের উন্নতি হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার কমে গেছে এবং সারা দেশে টিকাদান কর্মসূচি বাড়ানোর ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন গতিশীল হচ্ছিল, তেমনি পুনরুদ্ধার কার্যক্রমও দ্রুত এগোচ্ছিল। বিশেষ করে দেশের কৃষি ও শিল্প খাত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল। এ খাতে উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি চাহিদা বাড়ায় পণ্যের সরবরাহও বেড়েছে। কৃষক ভালো দামও পাচ্ছে। সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে ইতিবাচক প্রবণতা ফিরে আসছিল।

বিশ্ব অর্থনীতিতেও গতি ফিরছিল। কিন্তু এই অবস্থায় পণ্যের সরবরাহ সংকট ও চাহিদা বৃদ্ধির কারণে দাম বেড়ে গেছে। এতে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববাজারে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। যাতে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনীতির এমন অবস্থায় ওমিক্রন এখন নতুন হুমকি হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ায় এখন আমদানি বাড়ছে ৫০ শতাংশ। গত অর্থবছরে যা নেতিবাচক ছিল। রপ্তানি আয় বেড়েছে ২৬ শতাংশ। তবে রেমিট্যান্স কমেছে ১৯ শতাংশ।

সূত্র জানায়, রপ্তানির মধ্যে ৮৪ শতাংশই আসে পোশাক খাত থেকে। এ খাতে রপ্তানির আদেশ হু-হু করে বাড়ছে। একই সঙ্গে এর বিপরীতে কাঁচামাল আমদানিও বেড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা বেড়েছে সাড়ে ৫৩ শতাংশ। আমদানি বেড়েছে ৪৮ শতাংশের বেশি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানি সমিতির নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, করোনার পর গত জুলাই থেকেই পোশাক রপ্তানির আদেশ বাড়তে থাকে। এখন ওমিক্রন এসে নতুন শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশ্বের অনেক দেশে এখন আবার নতুন করে লকডাউন আরোপিত হয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আবার রপ্তানি ব্যাহত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংক্রমণ কোন দিকে যায়।

এদিকে ওমিক্রনের সংক্রমণের খবরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাচ্ছিল। গত নভেম্বরে প্রতি ব্যারেল ৯০ ডলারে ওঠার পর তা কমে ৬৪ ডলারে নেমে যায়। ওমিক্রন ততটা ভয়ংকর নয় এমন খবর প্রচারের পর তা আবার বেড়ে ৭২ ডলারে উঠেছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877