স্বদেশ ডেস্ক:
ডিজিটাল প্রোফাইলের আওতায় আসছেন কৃষকরা। দেশের পাঁচ কোটি কৃষকের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে এক কোটি ৬২ লাখ কৃষক ডিজিটাল প্রোফাইলে যুক্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি এক কোটি নয় লাখ কৃষককে দেওয়া হবে স্মার্ট কৃষি কার্ড। এজন্য ‘স্মার্ট কৃষি কার্ড ও ডিজিটাল কৃষি’ শীর্ষক একটি পাইলট প্রকল্প প্রস্তাব করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নের সফলতার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে এটি উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন রোববার যুগান্তরকে বলেন, শুধু কার্ড করলেই হবে না। এর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কেননা কাগজের কার্ড তো এখনো আছে। সেটি দিয়েও কাজ চলছে। কিন্তু স্মার্ট কার্ড যেন ডিজিটাল পদ্ধতিতেই ব্যবহার করা যায় সেজন্য স্থানীয় পর্যায়ে ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। সেটি না হলে শুধু কার্ড দেখিয়ে রেজিস্টার খাতায় নাম লিখলাম তা হলে তো হলো না। সেবা গ্রহণকারী ও সেবা দানকারী উভয় দিকে ডিজিটাল প্রস্তুতি থাকতে হবে। এটি না হলে শতকোটি টাকার অপচয়ের শঙ্কা রয়েছে। জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) ড. মো. আব্দুর রৌফ বলেন, এই কার্ড হলে অনেক সুবিধা হবে। কৃষকদের নাম ভাঙিয়ে কেউ ঋণ নিয়ে তাদের বিপদে ফেলতে পারবে না। এই কার্ডে থাকা বারকোড স্ক্যান করলে একজন কৃষকের সব তথ্যই চলে আসবে। ফলে সরকারের সব সুবিধা পাবেন কৃষক। এই কার্ডের ব্যবহার ডিজিটাল করা হবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এক কোটি ৬২ লাখ কৃষকের সঙ্গে সম্প্রসারণ কর্মী ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের যোগাযোগ, তথ্যের আদান-প্রদান ও এলাকাভিত্তিক চাহিদা অনুযায়ী সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এছাড়া ডিজিটাল কৃষি তথ্যের সাহায্যে উৎপাদন পরিকল্পনা ও বাজারজাতকরণ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কৃষক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ সক্ষমতা বৃদ্ধি হবে। উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে ট্রেসিবিলিটি নির্ণয় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা এবং নারী কৃষক ও নারী কৃষি উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল সচেতনতা ও দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগছা ইউনিয়নের কৃষক মীর্জা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, সরকারের উদ্যোগ সবসময় ভালোই হয়। কিন্তু বাস্তবায়ন পর্যায়ে কার্যকারিতা থাকবে কি-না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এ ছাড়া এত টাকা খরচ করে এ ধরনের প্রকল্প না নিয়ে ডিজেলের দামে ভর্তুকি দিলে আমরা সরাসরি লাভবান হতাম। কেননা এখন উৎপাদন খরচ অনেক বেশি পড়ছে। সে অনুযায়ী ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় না।
পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ সেবাগুলো কৃষক মাঠ স্কুল, কৃষক সংগঠন, প্রদর্শনী, প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, সেমিনার, রেডিও ও টেলিভিশনে প্রচার এবং লিফলেট বিতরণ, মাইকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয়। এ ব্যবস্থায় কৃষকদের কাছ থেকে সেবার মান সম্পর্কে কোনো ফিরতি বার্তা পাওয়া যায় না। আবার কৃষকদের জরুরি কোনো প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে সরাসরি কোনো সম্প্রসারণ কর্মীর কাছে পৌঁছানোর কাজটি সময়, ব্যয় ও কষ্টসাধ্য হয়। ফলে সম্প্রসারণ সেবাগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে নানারকম সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়।
চলতি বছরের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনের জন্য ২০১৬ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের যৌথ উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। এর আওতায় কৃষি বাতায়ন এবং কৃষক বন্ধু ফোনসেবা ৩৩৩১ নামক দুটি ডিজিটাল উদ্ভাবনী উদ্যোগ আছে। এই উদ্যোগের আওতায় ২০১৮ সাল থেকে পাইলট আকারে সারা দেশ থেকে প্রায় ৫৩ লাখ কৃষক ডাটাবেজ সংগ্রহ ও কৃষিসেবার কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে কৃষিবিষয়ক সম্পূর্ণ তথ্য সংবলিত কৃষকের ডিজিটাল ডাটাবেজ থাকার সুবিধা উপলব্ধ হয়। এজন্য দেশের সব কৃষক এবং কৃষি উৎপাদনকে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় আনার উদ্দেশ্য থেকেই এ প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। ফলে ডিজিটাল কৃষক প্রোফাইল তৈরি, স্মার্ট কার্ড বিতরণ, ডিজিটাল কৃষি তথ্য বিশ্লেষণ ও তথ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা করা যাবে। এর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্যে কৃষি উৎপাদনের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নেওয়া কৃষকের জন্য সহজ হবে। এতে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, একই সঙ্গে কৃষকের অধিকতর ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিও নিশ্চিত হবে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, কৃষি বাতায়নে এক কোটি ৬২ লাখ কৃষকের ডিজিটাল প্রোফাইল প্রস্তুত করা। এ ছাড়া এক কোটি ৯ লাখ কৃষকের জন্য স্মার্ট কৃষি কার্ড তৈরি ও বিতরণ। এক কোটি ২০ লাখ কৃষকের নির্বাচন কমিশন নাগরিকত্বের তথ্য যাচাই করা। ৩১টি মডিউলে স্মার্ট কৃষি কার্ড ডাটাবেজ ক্লাস্টার, কৃষক সেবা ও রিপোর্টটি সফটওয়্যার ও অ্যাপস তৈরি করা। সেই সঙ্গে ডিজিটাল কৃষি ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে টিওটি প্রশিক্ষণ, অফিসার প্রশিক্ষণ, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ দেওয়া। ৯০০ জন আইসিটি চ্যাম্পিয়ন কৃষক উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, ১৪টি কৃষি উদ্ভাবন শোকেসিং এবং ৩টি জাতীয় ও ১৪টি আঞ্চলিক কর্মশালা করা।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে একটি ডিজিটাল কৃষি প্রোফাইল তৈরি হবে। এর মাধ্যমে স্মার্ট কৃষি কার্ড বিতরণ হবে। এ ছাড়া ডিজিটাল কৃষি তথ্য বিশ্লেষণ ও তথ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্যে কৃষকের কৃষি উৎপাদনের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নেওয়া সহজ হবে।