রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২০ অপরাহ্ন

বাংলাদেশে ঢুকতে লাগবে ৪৮ ঘণ্টা আগের নেগেটিভ সনদ

বাংলাদেশে ঢুকতে লাগবে ৪৮ ঘণ্টা আগের নেগেটিভ সনদ

স্বদেশ ডেস্ক:

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়ালেও দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ কিংবা লকডাউনের চিন্তা সরকারের নেই। গতকাল রবিবার সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যানেজমেন্টের (বিআইএইচএম) নবনির্মিত ভবন পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। যে কোনো বন্দর দিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওমিক্রন আক্রান্ত খুঁজে পাওয়া গেছে এমন দেশ থেকে কেউ বাংলাদেশে ঢুকতে চাইলে ৪৮ ঘণ্টা আগে করা পরীক্ষার করোনা নেগেটিভ সনদ লাগবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

সীমান্ত বন্ধ না করলেও সরকার ল্যাব পরীক্ষার ওপর জোর দিচ্ছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এখন বিদেশে আছেন তাদের এ মুহূর্তে দেশে না আসাই ভালো। তারা যেন সংক্রমিত হয়ে দেশে না আসেন। যারা বিদেশ থেকে আসবেন তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। প্রবাসীদের পরিবারকে নিরাপদে রাখতে হবে, দেশকেও সুরক্ষিত রাখতে হবে। কাজেই আপনারা যেখানে আছেন সেখানেই নিরাপদে থাকুন। এখানে ৬০ বছরের ওপরে যারা আছেন, তাদের টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে অনেক দেশেই বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশেও বুস্টার ডোজের কার্যক্রম চলছে। আমাদের টিকার কোনো অভাব নেই। আমরাও বুস্টার ডোজ দিতে পারব ইনশাআল্লাহ।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা করোনার পরীক্ষা, কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা জোরদার করেছি। আমাদের দেশ ভালো আছে, নিরাপদে আছে। আপনারা জানেন, আমরা দুই থেকে তিনজন করে মৃত্যুর খবর পাই। এ অবস্থা থাকলে বাংলাদেশে মৃত্যুর হার শূন্যে নেমে আসবে। তিনি বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগে দুই হাজার স্কয়ার ফিটের ল্যাব ছিল। এখন সেটিকে ৩০ হাজার স্কয়ার ফিটে উন্নীত করা হয়েছে। এ ছাড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় নতুন করে নিয়োগ করা হয়েছে আট হাজার নার্স এবং চার হাজার চিকিৎসক।

ওমিক্রন মোকাবিলায় যা যা প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব ইতোমধ্যেই তা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা এর মধ্যেই ওমিক্রন মোকাবিলায় একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি। সেই সভা থেকে অনেক সিদ্ধান্ত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওমিক্রন আক্রান্ত অন্যান্য দেশ থেকে যেই আসবে তাকে ৪৮ ঘণ্টা আগে পরীক্ষা করে নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসতে হবে। দেশে তাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ইতোমধ্যেই সীমান্তে পরীক্ষা জোরদার করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিনও জোরদার করেছি আমরা। ঢাকায় যেসব হাসপাতালে আগেও কোভিড চিকিৎসা হয়েছে সেগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তার বাইরেও আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। বিমানবন্দরগুলোয় স্ক্রিনিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে ল্যাবের পরিধি। ওমিক্রন নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্তের দিকেও আমাদের দৃষ্টি রয়েছে। তবে সব প্রস্তুতির পরও দেশের মানুষকে আরও স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। আমাদের টিকা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে সাত কোটির বেশি প্রথম ডোজ ও চার কোটির কাছাকাছি দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিয়েছি। কারণ ওমিক্রনকে যদি মোকাবিলা করতে হয় তা হলে টিকা নিতে হবে।

বিআইএইচএমের নবনির্মিত ভবন পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরাসহ অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

স্থলবন্দরগুলোয় বিশেষ সতর্কতা

বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলা সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহিন। এতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে ভারত থেকে ফিরলে সঙ্গে আনতে হবে আসার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করা পরীক্ষার করোনা নেগেটিভ সনদ। যাদের করোনার দুই ডোজ টিকাগ্রহণ করা নেই, তাদের ভারত থেকে ফিরলে থাকতে হবে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে। কারও শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে তাকে ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করা হবে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। তবে ১২ বছরের নিচে শিশুদের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম বাধ্যতামূলক নয়।

আমদানি-রপ্তানি পণ্য ও পাসপোর্টধারী যাত্রীদের সব ধরনের সুরক্ষা জোরদারেরও গুরুত্ব দেওয়া হয় বৈঠকে। এ ক্ষেত্রে যাত্রীদের সবার মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হবে। ভারতীয় ট্রাকচালকদেরও বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও ট্রাকে জীবাণুনাশক স্প্রের সিদ্ধান্ত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি আবারও খারাপ হলে আগের মতো সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে ভারতফেরত যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন চালু ও ভ্রমণের সময়সীমা কমানোর প্রসঙ্গেও হয়েছে আলোচনা।

অন্যদিকে আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন সূত্রের বরাতে নিজস্ব প্রতিবেদক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, বন্দরে ভারত থেকে আসা যাত্রীরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আসছেন কিনা সেটি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে। ওমিক্রণের উপসর্গ থাকলে তাৎক্ষণিক পরীক্ষারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত উপসর্গ নিয়ে আসা কোনো যাত্রী পাওয়া যায়নি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877