শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৯:০৭ অপরাহ্ন

ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে ২৩ সুপারিশ

ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে ২৩ সুপারিশ

স্বদেশ ডেস্ক:

শনাক্তের দুই সপ্তাহের মধ্যে ৩০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে নভেল করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন (ভ্যারিয়েন্ট) ওমিক্রন। সংক্রমণ ঠেকাতে এসব দেশের সঙ্গে অনেক দেশ ইতোমধ্যে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। প্রাথমিক গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, এটি ‘ডেল্টার’ চেয়েও বেশি সংক্রামক। বাংলাদেশেও এই ধরন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই আশঙ্কা বিবেচনায় নিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ২৩ দফা সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দু-একদিনের মধ্যে এসব সুপারিশ নির্দেশনা আকারে জারি হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

গত বুধবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এই ২৩ দফা সুপারিশ পাঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম এসব সুপারিশ দ্রুত অনুমোদন করার আবেদন জানিয়েছেন। বুধবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ওমিক্রনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে এসব সুপারিশ দ্রুত অনুমোদন করা প্রয়োজন।

অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে- ওমিক্রন শনাক্ত হওয়া দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা জোরদার করা; ওইসব দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস/মিশনে পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত প্রবাসীদের দেশে ফিরতে নিরুৎসাহিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে; সংক্রমিত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের পাসপোর্ট নম্বর, পূর্ণ ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ যেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানায় তার ব্যবস্থা করতে হবে; দেশের সব বন্দরে কোয়ারেন্টিন সুবিধাসহ আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা জোরদার করা; বন্দরগুলোয় আসা যাত্রীদের ৪৮ ঘণ্টা মেয়াদি আরটি-পিসিআর সনদ থাকা বাধ্যতামূলক করা; আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল ছাড়া কোনো এয়ারলাইন্স যাত্রী বহন করতে পারবে না; যেসব দেশে ওমিক্রনের উচ্চ সংক্রমণ আছে, সেসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিনের হোটেলে নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করতে হবে। কোয়ারেন্টিনের ৭ম ও ১৪তম দিনে নিজ খরচে কোভিড-১৯ পিসিআর পরীক্ষা করতে হবে; কোয়ারেন্টিনের দায়িত্বে আগের মতো সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবির দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা করতে হবে; করোনা উপসর্গ/লক্ষণযুক্ত সন্দেহজনক ও নিশ্চিত করোনা রোগীর আইসোলেশন ও করোনা পজিটিভ রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; হাসপাতালগুলোয় কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে; কোভিড ১৯-এর লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা এবং তার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে সহায়তা করা; সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং অন্যান্য জনসমাগম নিরুৎসাহিত করা; দেশের সব নাগরিককে বাড়ির বাইরে বের হতে হলে অবশ্যই সব সময় সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া; রেস্তেরাঁতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থার ধারণক্ষমতার অর্ধেক নামিয়ে আনা; সব ধরনের জনসমাবেশ, পর্যটন, বিনোদন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল/থিয়েটার ও সামাজিক অনুষ্ঠান (বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম সংখ্যক লোকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা; গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা; সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, সহ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোচিং সেন্টার) স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের কোভিড টিকা প্রদান জোরদার করা; সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সেবাগ্রহীতা, সেবা প্রদানকারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা; স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা; অফিসে প্রবেশ ও অবস্থানের সময় বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি দাপ্তরিকভাবে নিশ্চিত করা; কোভিড নিয়ন্ত্রণ ও কমাতে কমিউনিটি পর্যায়ে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সচেতনতা তৈরিতে মাইকিং ও প্রচার চালানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডার মাইক ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। এ ছাড়া জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ কমিটিগুলোকে সক্রিয় করা।

এ প্রসঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই সপ্তাহ আগেও প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ জন করোনা পজিটিভ হচ্ছিল। কিন্তু গতকাল শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৫৬১ জন। গত এক মাসে দেশটিতে যত নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে, সেগুলোর শতাংশ ছিল ওমিক্রন। তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আফ্রিকার দেশসমূহ থেকে আসা সবার জন্য বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং স্থলবন্দর বন্ধ ঘোষণা করুন। যে কোনো দেশ থেকে আসা পিসিআর নেগেটিভ এবং টিকা সনদধারীদের জন্যও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। কোয়ারেন্টিন মানে হোটেলের এক কক্ষে একজনকে রাখা, হাজি ক্যাম্পে এক রুমের মধ্যে লাইন দিয়ে সবাইকে শুইয়ে রাখা নয়।’ এই অধ্যাপক মনে করেন, ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বিশ্বের প্রায় সব দেশে ওমিক্রন রাজত্ব করবে। অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণভাবে ঠেকানো যাবে না। কিন্তু চেষ্টা করলে সংক্রমণ সহনীয় মাত্রায় রাখা সম্ভব।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877