রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে নেতারা- খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায় সরকারের

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে নেতারা- খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায় সরকারের

স্বদেশ ডেস্ক:

বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অভাবে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার মৃত্যু হলে সরকারকেই দায়ভার নিতে হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার ক্ষেত্রে মূল বাধা শেখ হাসিনার সরকার। এ বাধা দূর করতে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এ জন্য রাজপথ দখল করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিশাল সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন। একই দাবিতে গতকাল ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী, কুমিল্লায় সমাবেশ হয়। ফরিদপুরের সমাবেশ নেতাকর্মীদের বিশৃঙ্খলায় পণ্ড হয়ে যায়।

চারটি ছোট ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ করে সমাবেশটি হয়। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশাল ছবিসংবলিত ব্যানারে লেখা ছিল ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবি’তে সমাবেশ। রাজধানীর কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁ থেকে ফকিরাপুল সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে সরাব এবং দেশনেত্রীকে মুক্ত করব। খালেদা জিয়ার কোনো ক্ষতি হলে জনগণ আওয়ামী লীগ সরকারকে রেহাই দেবে না বলে হুশিয়ারি দেন মির্জা ফখরুল। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা বলেন, আইনের কারণে দেশনেত্রীকে বাইরে যেতে দিতে পারছি না। কেন মিথ্যা কথা বলেন? আইনজীবীরাও বলছেন, ৪০১ ধারাতে বলা আছে একমাত্র সরকারই পারে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে। খালেদা জিয়াকে বাইরে পাঠাতে সরকারের ওপর বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা, রাষ্ট্রদূতরা চাপ সৃষ্টি করেছে বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, পুলিশকে ব্যারাকে রাখুন। এর পর আসুন আওয়ামী লীগ-বিএনপি খেলা হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করছি না। আমরা শুধু তার চিকিৎসা চাই। ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে না। তাই এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে।

ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, তৈমূর আলম খন্দকার, শাহিদা রফিক, আফরোজা খানম রিতা, আবদুল হাই, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সালাউদ্দিন আহমেদ, মীর সরাফত আলী সপু, আবদুস সালাম আাজাদ, তাবিথ আউয়াল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, যুবদলের সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ। উলামা দলের আহ্বায়ক শাহ নেসারুল হকের কোরআন তেলায়াতের মধ্য দিয়ে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে সমাবেশ শুরু হয়। বিকাল সাড়ে ৪টায় সমাবেশ শেষ হয়।

ঠাট্টা করার দুঃসাহস দেখাবেন না
খুলনা মহানগরীর কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে ঠাট্টা করার দুঃসাহস দেখাবেন না, তার চেয়ে বলে দেন চিকিৎসার সুযোগ দেবেন না। মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, সৈয়দ মেহেদী রুমী, আজিজুল বারী হেলাল, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, শফিকুল আলম মনা, আমীর এজাজ খান, মনিরুজ্জামান মনি, রবিউল ইসলাম রবি।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, নগরীর বাকলিয়ায় কালামিয়া বাজার কেবি কনভেনশন হলসংলগ্ন মাঠে এ সমাবেশ হয়। এতে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারের উদ্দেশে বলেন, খালেদা জিয়া কোনো অপরাধ করেননি, রাষ্ট্রপতির কাছে তার ক্ষমা চাওয়ার কোনো কারণ নেই।
এদিকে সমাবেশ শুরুর ঘণ্টা দুয়েক পর মঞ্চ ভেঙে পড়ে। পরে তড়িঘড়ি করে অতিথিদের বসার উপযোগী করে তৈরি করা মঞ্চে সমাবেশ সম্পন্ন হয়। প্রথম সারির নেতারা মঞ্চে থাকার কথা থাকলেও তৃতীয়-চতুর্থ সারির নেতারা মঞ্চে ওঠার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

রংপুর প্রতিনিধি জানান, রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে বিএনপি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, নেতাকর্মীদের বলছি, আপনারা প্রস্তুত হোন, আন্দোলনের ডাক এলেই রাজপথে নামতে হবে। এ রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।

মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীব দুলু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, যুবদলের সহসভাপতি রহুল আমিন আকিল, যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক ও রংপুর জেলা যুবদল সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র ও বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ জানান, বিকালে ময়মনসিংহ নগরীর নতুনবাজারে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হয়। এতে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, সুচিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর কথা বলি। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এটা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারাসহ সরকার রসিকতা করছে। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক একেএম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, নির্বাহী সদস্য ও ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহাবুবুর রহমান লিটন, আবদুল বারী ড্যানী, সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ার, জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. রুবেল, সাধারণ সম্পাদক শামীম তালুকদার, নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক প্রমুখ।

সকালে নয়াপল্টনে সংঘর্ষ
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গতকাল সকালে দলটির দুই গ্রুপের মধ্যে গতকাল সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় সংঘর্ষে বাধা দিতে গিয়ে কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী পড়ে গিয়ে আঘাত পান। এ ছাড়া আহত হন অন্তত ১৫ জন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৯টার দিকে বিএনপির বিভিন্ন শাখা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে আসতে থাকে। এর মধ্যে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে নিপুণ রায় সমাবেশে যোগ দেন। মঞ্চের বাম দিকে নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি রাস্তায় বসে যান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একটি মিছিল আসে। তারা নিপুণ রায়ের নেতাকর্মীদের তুলে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা করে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কেরানীগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। ঢাকা জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এ হামলার বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জানানো হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877