রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১০:০১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মোটরসাইকেল থামিয়ে কাগজ দেখতে চাওয়ায় পুলিশের ওপর হামলা ভারতে গিয়ে এমপি নিখোঁজ, যা জানালেন ডিবির হারুন মানসিক ট্রমায় ভুগছেন বিএনপি নেতারা: ওবায়দুল কাদের হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের পর ‘পাওয়া যাচ্ছে না’ ইরানের প্রেসিডেন্টকে ভারতে গিয়ে নিখোঁজ আওয়ামী লীগের এমপি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ২টি গ্রামে আরাকান আর্মির হামলা ‘কিরগিজস্তানকে আমাদের গভীর উদ্বেগ জানিয়েছি, কোনো বাংলাদেশী শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়নি’ কালশীতে পুলিশ বক্সে আগুন অটোরিকশা চালকদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের র‌্যালি থেকে ফেরার পথে ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চরম তাপপ্রবাহ আসন্ন বিপদের ইঙ্গিত
আপিল করতে এক মাস সময় পাবেন সিনহা

আপিল করতে এক মাস সময় পাবেন সিনহা

স্বদেশ ডেস্ক:

জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে এক মাস সময় পাবেন। তবে এই আপিল করতে হলে এসকে সিনহাকে আগে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এরপর কারাগারে গিয়ে এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করতে পারবেন। তার আগে কোনোভাবেই এই রায় চ্যালেঞ্জ করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

এ মামলায় গত মঙ্গলবার এসকে সিনহাকে মোট ১১ বছরের কারাদ- দিয়ে রায় ঘোষণা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম। মামলার বাকি ১০ আসামির মধ্যে আটজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দিয়েছেন আদালত। বাকি দুই আসামি খালাস পেয়েছেন। তবে আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকায় এসকে সিনহা এই মামলা আইনিভাবে মোকাবিলা করতে পারেননি। বিচার চলাকালে আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী নিযুক্ত ছিল না। একপাক্ষিভাবেই রায় হয়েছে। এখন এই রায়

চ্যালেঞ্জ করতে হলে, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হলে তাকে দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করতে হবে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া তুলে ধরে দুদকের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, ‘এসকে সিনহার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) জারি হয়ে গেছে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত এখন অপেক্ষা করতে হবে। রায়ে কি পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে তা দেখব। এরপর আমরা দুদক থেকে রাষ্ট্রকে রায়টি কার্যকর করার অনুরোধ জানাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহতু তিনি বিদেশে আছেন, তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হলে বিভিন্ন ফরমালিটিজ আছে। দেশের বাইরে ওয়ারেন্ট পাঠাতে হলে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিতে হবে। রেড অ্যালার্ট জারি করাতে হবে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য ৩০ দিন সময় আছে, সে পর্যন্ত অপেক্ষা করব। যদি সে এই সময়ের মধ্যে ফিরে এসে আপিল না করেন, তা হলে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো পলাতক ব্যক্তি আইনি সুবিধা পান না। সে কারণে তাকে আইনের আওতায় এসে আইন অনুযায়ী আদালতে আাত্মসমর্পণ করতে হবে। তারপর তাকে কাস্টডিতে নেওয়া হলে তখন তিনি এই রায় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আপিল করতে পারবেন। আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যাওয়ার আগে তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলও করতে পারবেন না। এমনকি জামিনও চাইতে পারবেন না। জানতে চাওয়া হলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, রায় প্রদানকালে সে যেহেতু পলাতক রয়েছেন- তাই এই সাজা চ্যালেঞ্জ করতে হলে তাকে অবশ্যই আগে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তারপর উচ্চ আদালতে আপিল করতে হবে। আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যাওয়ার আগে তিনি কোনো আইনগত সুবিধা পাবেন না।’

২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বাংলাদেশ ছেড়ে যান। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দুই দফায় ছুটির মেয়ার বাড়ানোর পর ১০ নভেম্বর কানাডা যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে তিনি রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা হয়ে যুক্তরাষ্ট্র্রে যান। বছরখানেক তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি এলাকায় তার ভাই অনন্তু কুমার সিনহার নামে কেনা বাড়িতে ছিলেন। ২০১৯ সালের ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় গিয়ে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছিলেন দেশের প্রথম অমুসলিম প্রধান বিচারপতি। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৮২ দিন আগেই পদত্যাগ করতে হয় তাকে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের ঘটনা এটিই প্রথম। এরই মধ্যে গতকাল দুর্নীতির মামলায় তাকে কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ আদালত। এটিও দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ছিলেন। তবে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর বিভিন্ন মহল থেকে আলোচনা-সমালোচনা জোরদার হয়। রায়ে প্রধান বিচারপতি বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র, সংসদসহ বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করেন। পরে ওই রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করার জন্য আইনি পদক্ষেপ নিতে ওই বছর ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। প্রস্তাবটি পাসের আগে সংসদে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপিসহ ১৮ জন বক্তব্য দেন।

রায় নিয়ে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের টানাপড়েনের মধ্যে ওই বছরের ২ অক্টোবর অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। পরে ১৩ অক্টোবর তিনি অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। যাওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অসুস্থ নই। পালিয়েও যাচ্ছি না। সাময়িকভাবে যাচ্ছি। আবার ফিরে আসব। বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষার জন্য যাচ্ছি। সরকারকে ভুল বোঝানো হয়েছে।’ পরদিন এ ঘটনায় সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানায়, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১টি দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তার কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। নৈতিক স্খলন, দুর্নীতি অসদাচরণসহ ১১টি সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ ওঠায় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আপিল বিভাগের অপর পাঁচজন বিচারপতি বসতে চাননি। তখন থেকেই প্রধান বিচারপতির দেশে ফিরে দায়িত্বগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় দেশের গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি না দিলেও ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বরে ‘আ ব্রোকেন ড্রিম : রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ নামে তার একটি গ্রন্থ যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হয়। আত্মজীবনীমূলক ওই গ্রন্থে সাবেক প্রধান বিচারপতি দাবি করেন, তিনি দেশ ছেড়েছেন ‘হুমকির মুখে’; একই কারণে বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

এরই মধ্যে অনুসন্ধান শেষে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই এসকে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা করে দুদক। আসামিদের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি ও চার কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। মামলায় বলা হয়, আসামি মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) গুলশান শাখায় দুটি চলতি হিসাব খোলেন। ৭ নভেম্বর তারা দুই কোটি করে চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। ব্যাংক হিসাব খোলা ও ঋণ আবেদনপত্রে দুজনই বাড়ি নম্বর ৫১, সড়ক নম্বর ১২, সেক্টর ১০, উত্তরা আবাসিক এলাকা ঠিকানায় উল্লেখ করেন। ওই বাড়ি সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। ঋণ আবেদনে জামানত হিসেবে রণজিৎ চন্দ্র সাহার স্ত্রী সান্ত্রী রায় সিমির সাভারের ৩২ শতাংশ জমি দেখানো হয়। এ দুজনই এসকে সিনহার পূর্বপরিচিত। ঋণ আবেদন দুটি কোনোরকম যাচাই-বাছাই করা হয়নি। রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ ও ব্যাংকের নিয়মনীতিও মানা হয়নি। বিচার শেষে মঙ্গলবার সাবেক এই প্রধান বিচারপতিকে দণ্ডিত করা হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877