স্বদেশ ডেস্ক:
হলমার্কের ঋণের বিপরীতে যে পরিমাণ সম্পদ জামানত হিসেবে নেয়া হয়েছিল তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশই ছিল সরকারি খাল, খাসজমি। হলমার্কের ঘটনা শনাক্তের পর এর ঋণের জামানত নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানের সময় এ ভুয়া সম্পদের তথ্য জানা যায়। তেমনিভাবে বেসিক ব্যাংক যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছিল তার বিপরীতে জামানত হিসেবে দেয়া সম্পদের মূল্য কম ছিল। এভাবেই জমি, ভবন, শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ স্থায়ী সম্পদের মূল্য অতিমূল্যয়িত করে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ঋণের নামে অর্থ বের করে নেন। পরবর্তীতে ওই ঋণ খেলাপি হয়ে গেলে বেকায়দায় পড়ে যায় ব্যাংক। এমনি পরিস্থিতিতে সম্পদের গুণগত মান বাড়িয়ে ঋণঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পদের মূল্য যথাযথভাবে হিসাবের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বিপরীতে জমি, ভবন, মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন স্থায়ী অস্থায়ী সম্পদ জামানত হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। নির্ধারিত মেয়াদ শেষে গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করে স্থায়ী-অস্থায়ী সম্পদের মালিকানা বুঝে নেন। কিন্তু যখন কোনো গ্রাহক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেন না তখন ওই ঋণ খেলাপি হয়ে যায়। এভাবে কোনো ঋণ দীর্ঘ খেলাপি থাকলে তা একসময় আদায়ের অনুযোগী হয়ে যায়। কোনো ঋণ মন্দমানের খেলাপি হলে ব্যাংক ওই ঋণ আদায়ের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করে। একই সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ঋণ অবলোপন করে খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে আলাদা করে রাখা হয়।
এ দিকে মামলা মোকদ্দমার কারণে অনেক উদ্যোক্তা ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে শিল্প কারখানা বন্ধ করে দেন। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকা এসব মন্দমানের ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পদ বিশেষ করে ভবন, মূলধনী যন্ত্রপাতি জরাজীর্ণ হয়ে যায়। এভাবে অনেক সম্পদ ব্যবহার অনুযোগী বা বাজারমূল্য থাকে না। বন্ধকি সম্পদগুলোকেই মূলত ব্যাংকিং ভাষায় অ-ব্যাংকিং সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। অনেক সময় অব্যবহৃত অনুযোগী সম্পদকে বাজারমূল্য ধরে ব্যাংকগুলোর অ-ব্যাংকিং সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে থাকে। আবার ঋণ নেয়ার সময় অনেক গ্রাহক ব্যাংকের কাছে দেয়া বন্ধকি সম্পদের মূল্য অতিমূল্যায়িত করে থাকে। কম দামের জমি বেশি মূল্য দেখিয়ে বেশি পরিমাণ ঋণ নেয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ক্ষেত্রে কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিয়োগ পাওয়া যায়। এভাবেই ব্যাংকের ঋণ এক সময় খেলাপি হয়ে গেলে ঋণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ব্যাংকের ঋণঝুঁকি কমাতে এবং সম্পদের গুণগত মান উন্নত করতে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেয়া সম্প্রতি এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সাধারণত ব্যাংক প্রদত্ত ঋণ অনাদায়ে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংক ঋণের বিপরীতে গৃহীত জামানত/বন্ধকিকৃত সম্পদের মালিকানা লাভ করলে অ-ব্যাংকিং সম্পদের উদ্ভব হয়। ব্যাংকঋণের বিপরীতে গৃহীত জামানত/ বন্ধকিকৃত সম্পদের মালিকানাস্বত্ব ব্যাংকের অনুকূলে পাওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে এরূপ সম্পদ ব্যাংকের নামে রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশন করে দখলিস্বত্ব নিশ্চিতকরণসহ প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঋণগ্রহীতার ঋণ সমন্বয়পূর্বক প্রাপ্ত সম্পদ ব্যাংকের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ব্যাংকের হিসাবে অন্তর্ভুক্তিকালে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মূল্যায়ন করতে হবে। এরূপ সম্পদ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এতদ্বিষয়ে অভিজ্ঞ কমপক্ষে তিনজন কর্মকর্তা/নির্বাহীর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনপূর্বক তাদের মাধ্যমে মূল্যায়ন সম্পন্ন করতে হবে। মূল্যায়ন কমিটি নির্ণীত মূল্যের সাথে সম্পদের স্থানীয় অধিক্ষেত্রাধীন সাব-রেজিস্ট্রারের জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্যের পার্থক্য দেখা দিলে মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এর যৌক্তিকতা উপস্থাপন করতে হবে। ব্যাংক কর্মকর্তা/নির্বাহীর সমন্বয়ে গঠিত কমিটি সম্পদের মূল্যায়নের পাশাপাশি পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও সম্পদের মূল্যায়ন করতে হবে। ভ্যালুয়ার ফার্ম/পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান এবং কমিটি নির্ণীত মূল্য-এ দু’টি মূল্যের মধ্যে যেটি কম সেটিকে সম্পদের বাজারমূল্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সম্পদের বাজারমূল্য নিরূপণের পর তা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী অনুমোদিত হতে হবে। তবে, সম্পদের বাজারমূল্য নিরূপণকালে টিন/ সেমি পাকা দালান, ব্যবহার অযোগ্য স্থাপনা ও মেশিনারি যতদূর সম্ভব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বিক্রি করে ঋণের বিপরীতে জমা করতে হবে। তবে কোনোভাবেই এরূপ সম্পদকে হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। তবে যে জমি/ ভূমির ওপর টিন/সেমি পাকা দালান, ব্যবহার/ বিক্রয় অযোগ্য স্থাপনা ও মেশিনারি থাকবে সে জমি/ ভূমির নিরূপিত বাজারমূল্য হতে আলোচ্য স্থাপনা/মেশিনারি অপসারণ করার ব্যয় বাদ দিয়ে জমি/ ভূমির বাজারমূল্য নির্ধারণ করতে হবে।