স্বদেশ ডেস্ক:
পূর্ণ টিকা প্রাপ্তের সংজ্ঞা পরিবর্তন হচ্ছে শিগগিরই। আগামী দিনে দুই ডোজ টিকা নিলেই ‘পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত’ হিসেবে গণ্য করা হবে না, নিতে হবে বুস্টার ডোজ।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, কিছুদিন পর দুই ডোজপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আর পূর্ণ টিকা প্রাপ্ত হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হবে না।
গত শুক্রবার হোয়াইট হাউজে সিডিসির পরিচালক রচেল ওয়েলেনস্কি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমরা এখনো ফুল ভ্যাক্সিনেটেডের সংজ্ঞা পরিবর্তন করিনি কিন্তু আমরা সামনের দিনগুলোতে এর প্রতি নজর রাখব। ভবিষ্যতে পূর্ণ টিকা প্রাপ্তের সংজ্ঞা আমাদের পরিবর্তন করতে হতে পারে।’ যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে তাকেই পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত হিসেবে ধরা হচ্ছে যে ফাইজার অথবা মডার্নার দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন অথবা যে জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজ টিকা নিয়েছেন। অতিরিক্ত এক ডোজ অর্থাৎ বুস্টার ডোজ শুরু করে এর সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হবে। সিডিসি ইতোমধ্যে ৬৫ অথবা এর চেয়ে বেশি বয়সী ব্যক্তিদের এক ডোজ বুস্টার টিকা নিতে হবে বলে সুপারিশ করেছে। ওয়েলেনস্কি বলেন, ‘আপনি বুস্টার ডোজের উপযোগী হয়ে থাকলে আপনি বুস্টার ডোজ নিয়ে নিন। আমরা এটি ভবিষ্যতে চালিয়ে যাব। যাদের বয়স কমপক্ষে ১৮ এবং যারা করোনার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কাজ করেন এবং কারো যদি মেডিক্যাল কনডিশন অনুমোদন করে তাহলে তার এখনই একটি বুস্টার ডোজ নিয়ে নেয়া উচিত।’
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ইতোমধ্যে মডার্না ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার জন্য বুস্টার ডোজ অনুমোদন করেছে। বুস্টার ডোজ হিসেবে এর আগে যে কোম্পানির টিকা নিয়েছেন তারই একটি অতিরিক্ত ডোজ নিতে হবে। বুস্টার ডোজ অন্য কোম্পানির নিলে হবে না।
অন্য দিকে পূর্ণ টিকাপ্রাপ্তরাও তাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে পারেন করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভাইরাস। যদিও টিকা গ্রহণের কারণে তারা আক্রান্ত নাও হতে পারেন। লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের গবেষকেরা বলছেন, অনেক বেশি সংক্রামক করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট টিকা নেয়ার পরও টিকাপ্রাপ্তদের মাধ্যমেই অন্যদের মধ্যে ছড়াতে পারে। তবে গবেষকেরা বলছেন, টিকাপ্রাপ্তদের মাধ্যমে ডেল্টা ছড়াতে পারলেও এটা প্রমাণ হয় না যে, ‘করোনাভাইরাস নির্মূলে টিকার প্রয়োজন নেই।’ বরং ভাইরাসটি নির্মূলে দুই ডোজ টিকা প্রাপ্তদের অতিরিক্ত একটি ডোজ অর্থাৎ বুস্টার ডোজ নিতে হবে। গবেষকরা বলছেন, টিকাপ্রাপ্তদের দেহ থেকেই করোনাভাইরাস দ্রুত পরিষ্কার হতে থাকে। বিপরীতে টিকা গ্রহণ করেনি এমন ব্যক্তিদের দেহে করোনা সর্বোচ্চ সংখ্যায় অবস্থান করে অনেক বেশি সময়।
এই গবেষণার সহপ্রধান গবেষক ড. আনিকা সিঙ্গানায়াগাম বলেন, করোনা আক্রান্তদের থেকে বারবার নমুনা পরীক্ষার পর আমরা দেখেছি যে বাড়ির টিকাপ্রাপ্ত সদস্যরাও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বহন করছেন এবং অন্যদের মধ্যে তা ছড়াতে পারছেন। ‘কেন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বব্যাপী উচ্চ সংক্রামক বৈশিষ্ট্যের এমনকি সে সেব দেশে যেখানে সর্বোচ্চ সংখ্যাক মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে’- প্রশ্নের উত্তর পেতেই গবেষণাটি করা হয়। ড. আনিকা সিঙ্গানায়াগামের গবেষণায় ৬২১ জন অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ভ্যাক্সিনেটেড হওয়ার পরও ২০৫টি পরিবারে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। আবার এই ৬২১ পরিবারের ৩৮ শতাংশ পরিবারের লোকজন টিকাপ্রাপ্ত ছিল না যাদের মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। অন্য দিকে টিকাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও ২৫ শতাংশ পরিবারের লোকজনের মধ্যে ডেল্টা ভাইরাস পাওয়া গেছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, করোনা পজিটিভ যেসব পরিবারের লোকজন টিকা নিয়েছিলেন তারা টিকাটি নিয়েছিলেন অনেক আগে তাদের তুলনায় যারা করোনা নেগেটিভ হয়েছিলেন। গবেষক আনিকা সিঙ্গানায়াগাম বলেন, এতে প্রমাণ হচ্ছে যে, ‘টিকা নেয়ার পরও দেহে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে কমছে এবং এদেরই বুস্টার ডোজ প্রয়োজন।’ ইমপেরিয়াল কলেজের এপিডেমিওলজিস্ট নেইল ফারগুসন বলেন, ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের ক্ষমতা থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হতে অনেক সময় লাগবে। তিনি বলেন, ‘পরের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ব্রিটেনে হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হবে যদি সংক্রমণ শিখরে উঠার পর কমতে শুরু করে কিন্তু এটা স্থায়ী হবে না।’