স্বদেশ ডেস্ক:
তফসিল অনুযায়ী আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে বরিশালের আগৈলঝাড়া, বানারীপাড়া ও সদর উপজেলার ১২ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচ ইউপিতে একক প্রার্থী। তারা আবার আওয়ামী লীগ মনোনীত। এসব প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে। আগৈলঝাড়ার আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। এ ছাড়া বরিশাল সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটিতেই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এই আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক শামীম। সদর উপজেলার পাঁচ ইউপি নির্বাচন নিয়েই মূলত স্থানীয় আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে শুরু হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে হাসানাতপুত্র মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে ঘিরে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনা এবং এর জেরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি মামলার মূলে সদর আসনের সাংসদ জাহিদ ফারুক শামীম। জাহিদ ফারুক শামীম এমপির অভিযোগ, সদর আসনের এমপি হলেও তার কোনো মতামত না নিয়েই সদর উপজেলার ইউপিগুলোতে জেলা আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রে প্রেরণ করেছে। জাহিদ ফারুক শামীম এমপির প্রতিপক্ষ গ্রুপের অভিযোগ, এ উপজেলায় যারা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী, তাদের পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন এমপি। সে কারণে সদর উপজেলায় দলের পক্ষ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলা হলেও তাতে সাড়া মেলেনি। এমন পরিস্থিতিতে অস্বস্তির পাশাপাশি দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন ছয় ইউনিয়নেই প্রার্থী (হাতপাখা) দিয়েছে। বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও তিনটি ইউনিয়নে দলটির নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আহমেদ শাহরিয়ার বাবু। ইউনএনও-মেয়র দ্বন্দ্বের ঘটনার রাতে ঘটনাস্থল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্থানীয় এমপি সমর্থক হাবিবুর রহমান খোকন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী কোতোয়ালি থানা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের ছোট ভাই মো. মনিরুজ্জামান মনির। চরকাউয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের
বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুন অর রশিদ। আর নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি। স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মামুন সরদার।
চাদপুরা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হেলাল উদ্দিন। আর বিদ্রোহী প্রার্থী সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক এইচএম জাহিদ। শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান মুন্না নৌকার প্রার্থী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রুবেল হোসেন তালুকদার। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি প্রয়াত ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হকের ভাতিজা। এখানে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। তবে নেতাকর্মীরা রুবেল তালুকদারকে সমর্থন দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
চন্দ্রমোহন ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি এসএম মতিউর রহমান। স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি সমর্থক সিরাজুল ইসলাম। চরমোনাই ইউনিয়নে প্রার্থী চরমোনাইয়ের পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমিরের ছোট ভাই সৈয়দ জিয়াউল করীম। এখানে নৌকার প্রার্থী মাস্টার নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দলটির ইউনিয়ন যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন।
আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন বলেন, তৃণমূল আওয়ামী লীগের মতামতে প্রার্থী মনোনীত হওয়ায় ৬ ইউনিয়নের কোথাও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়নি। আর অন্যান্য দলের কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা স্বেচ্ছায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ কাউকে চাপ সৃষ্টি করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করায়নি বলে জানান তিনি।
বরিশাল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিম রেজা মোফাজ্জেল বলেন, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থীদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন, তাদের ডেকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানানো হবে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর আসনের এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক শামীম জানান, বরিশাল সদর উপজেলার ৬ ইউনিয়নের একটিতেও আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে প্রার্থীর নাম আসেনি। এমনকি ইউনিয়ন ও উপজেলার নেতারাও এক্ষেত্রে ছিলেন উপেক্ষিত।
স্থানীয় এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি থাকার পরও একবারের জন্য আমার কোনো মতামত চাওয়া হয়নি উল্লেখ করে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, বরিশালে আওয়ামী লীগের মধ্যে আরেকটি আওয়ামী লীগ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যহারকালে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছিল। অনেক ইউনিয়নে সম্ভব হয়েছে, আবার অনেক জায়গায় হয়নি। তারপরও জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে, আশা করি আমরা সফল হব। তবে তৃণমূলের মতামতের বাইরে কোনো ইউনিয়নে প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি বলে জানান তিনি।
বরিশাল জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আলম জানান, ১১ নভেম্বরের নির্বাচনে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলায় পাঁচটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত একক প্রার্থী থাকায় তারা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। তারা হলেন রাজিহার ইউপিতে ইলিয়াস তালুকদার, বাকাল ইউপিতে বিপুল দাস, বাগধা ইউপিতে আমিনুল ইসলাম, গৈলা ইউপিতে শফিকুল হোসেন ও রত্নপুর ইউপিতে গোলাম মোস্তফা সরদার।
নির্বাচন কর্মকর্তা আরও জানান, ভোট নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কমিশন কাজ করছে। ইতিপূর্বে সব প্রার্থীকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা মেনে ভোটের মাঠে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।