স্বদেশ ডেস্ক:
সাবেক স্ত্রীর ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিলেন ট্রাকচালক মো. সেকুল। একপর্যায়ে তাকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী শুক্রবার ভোরে তিনি চলে যান রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং এলাকায়। বোরকা পরা অবস্থায় তার স্ত্রী একটি রিকশায় যাচ্ছিলেন। পাশের আরেক রিকশায় ছিলেন একই রকম বোরকা পরা অপর এক নারী।
এ সময় রিকশা থামিয়ে কাঁচি দিয়ে ওই নারীর বুকে-পিঠে উপর্যুপরি আঘাত করেন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই নারীকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বিকেলে তার মৃত্যু হয়।
নিহত আয়েশা সিদ্দিকা (২৩) একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। সে সময় তিনি কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। আহত হওয়ার পর তার চিৎকার শুনে লোকজন ছুটে গিয়ে সেকুলকে আটক করে। তিনি এখন মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ বলেন, সেকুল দাবি করছেন- সাবেক স্ত্রী ভেবে তিনি আয়শাকে কাঁচি দিয়ে আঘাত করেন। একই রকম বোরকা হওয়ায় তিনি বুঝতে পারেননি। পরে বোরকার মুখের অংশের কাপড় সরে গেলে ভুলের বিষয়টি বুঝতে পারেন। ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত কাঁচিটি জব্দ করেছে পুলিশ।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীর গাবতলী এলাকায় থাকেন সেকুল। পাঁচ-ছয় বছর আগে তার বিয়ে হয়। তবে বনিবনা না হওয়ায় এক বছর পরই তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। পরে আবারও তাদের মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়। সেকুল নতুন করে সংসার শুরু করতে চান। তার সাবেক স্ত্রীও এতে সম্মত হন। এরপর নানা প্রয়োজনের কথা বলে তিনি টাকা চাইতে শুরু করেন। এভাবে গত কয়েক বছরে তিনি প্রায় সাত লাখ টাকা নেন বলে দাবি সেকুলের। কিন্তু সংসার করার প্রশ্নে সাবেক স্ত্রী শুধু সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। সর্বশেষ মাসখানেক আগে ওই নারী আরেক যুবককে বিয়ে করেন।
এতে সেকুল মারাত্মক ক্ষুব্ধ হন। তবে এই স্বামীকে ছেড়ে আসবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। বিনিময়ে এক লাখ টাকা চান। এবার সেকুল আর রাজি হননি। কারণ তিনি ততক্ষণে খুনের পরিকল্পনা করে ফেলেছেন। ঘটনার পর স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ তাকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
নিহত নারীর স্বামী মো. রুবেল পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। তিনি জানান, নবোদয় হাউজিং এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন আয়েশা। তিনি সাইন স্টার নামে একটি পোশাক কারখানার অপারেটর ছিলেন। প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তিনি কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। তখনই তার ওপর হামলা চালায় ওই ব্যক্তি। পরে তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রুবেল জানান, কারও সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ ছিল না। ফলে তার স্ত্রীকে হত্যা করার অন্য কোনো কারণ তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। গ্রেপ্তার ব্যক্তির সঙ্গে তার কোনো পরিচয় নেই। তিনি ভুল করেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে তার ধারণা। তার কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি। জানা গেছে, রুবেল-আয়েশার পাঁচ বছরের একটি মেয়ে আছে। তাদের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বিরলে।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, রক্তাক্ত অবস্থায় এক তরুণীকে সকাল পৌনে ৮টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। সংকটাপন্ন অবস্থায় তার চিকিৎসা শুরু হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় সেকুলকে আসামি করে একটি হত্যা মামলার প্রক্রিয়া চলছে।