রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:২১ পূর্বাহ্ন

পরীক্ষা কেন্দ্রের বিড়ম্বনা

পরীক্ষা কেন্দ্রের বিড়ম্বনা

ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম :

বিশ্বব্যাপী করোনাকালীন একটা দুর্যোগ বয়ে গেছে। বাংলাদেশেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। করোনা মহামারী পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জনজীবন ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে আসছে। করোনাকালে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল; বন্ধ ছিল লেখাপড়া। শিল্পকারখানাগুলো বন্ধ ছিল। চাকরির নিয়োগপ্রক্রিয়াও ছিল বন্ধ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে চাকরির নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে এটা আরো ব্যাপক হবে বলে আমরা আশা করছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও ভর্তি পরীক্ষা চলছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবার ভর্তি পরীক্ষা ঢাকাকেন্দ্রিক না রেখে সারা দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে গ্রহণ করে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ মহতী উদ্যোগকে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ নিয়ম অনুসরণ করতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কয়েক লাখ ছাত্রছাত্রী আবেদন করে থাকে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য তাদের ঢাকায় আসতে হয়। টেকনাফ কিংবা তেঁতুলিয়া থেকে একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আসতে হয়। কিন্তু আসা-যাওয়া কত যে ভোগান্তির তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কেউ অনুধাবন করতে পারে না।

অনেকেরই ঢাকায় আত্মীয়স্বজন না থাকায় থাকার জায়গা জোটে না। ফলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় উদ্বাস্তুর মতো ঘোরাফেরা করে। গাদাগাদি করে হলে থাকার চেষ্টা করে; কিন্তু সবাই হলে থাকতে পারে না। বাধ্য হয়ে হোটেলে উঠতে হয়। এরপর যাওয়া-আসার খরচ তো আছেই। এটি তাদের ওপর একটা বাড়তি চাপ। এই চাপ থেকে তাদের মুক্তি দেয়া প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে, বিশ্বের অনেক দেশে এ নিয়মে পরীক্ষা নিতে দেখেছি। তারা ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষা বিভিন্ন কেন্দ্রে নিয়ে থাকে। এ জন্য বিভিন্ন শহরে রয়েছে তাদের পরীক্ষা কেন্দ্র। এ নিয়ম আমাদের দেশের সব পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে চালু করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টমহলের ভেবে দেখা প্রয়োজন। সব পরীক্ষা ঢাকাকেন্দ্রিক না করে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে নেয়া প্রয়োজন; কারণ একজন শিক্ষার্থী কিংবা চাকরি প্রার্থীর তখন ঢাকায় আসতে হবে না; যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। এতে তাদের সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে না; বরং শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতিসহকারে তারা পরীক্ষায় হলে যেতে পারবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনের মতো ভবিষ্যতের সব ভর্তি পরীক্ষা ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে, একই দিনে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা দুঃখজনক। ১৭ সেপ্টেম্বর ২১টি প্রতিষ্ঠান একই দিনে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেছিল। একই দিনে একাধিক নিয়োগ কিংবা ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি বাতিল করা প্রয়োজন; কারণ একই দিনে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে প্রার্থীরা মানসিক দুশ্চিন্তা ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। তারা ভোগান্তিতে পড়ে। একই দিনে সবাইকে ঢাকায় আসতে হয়। এতে ঢাকার ওপর প্রচণ্ড বাড়তি চাপ পড়ে। এ ছাড়াও প্রার্থীরা ঠিক করতে পারে না, পরীক্ষা কোনটা দেবে আর কোনটা ছাড়বে। এ রকম বিড়ম্বনা থেকে তাদের রেহাই দেয়া প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে জনশক্তি মন্ত্রণালয় উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে পারে। যারা পরীক্ষা নেবেন তারা আগেভাগেই জনশক্তি মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করবেন এবং জনশক্তি মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয়ভাবে সময় ও স্থান নির্ধারণ করবে। এ কাজটি করতে পারলে একজন নিয়োগপ্রার্থী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দিতে পারবে। সে তার মেধা ও সময়কে কাজে লাগাতে পারবে। বিশেষ করে ব্যাংকের পরীক্ষা তো বিভাগীয় শহরগুলোতে নেয়া যায়। নিয়োগ প্রার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে তারিখ এবং স্থান আগভাগে নির্ধারণ করলে, তারা মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাবে। অনেক বেশি নিয়োগপ্রার্থী নিয়োগ পাবে। এতে তাদের কষ্ট লাঘব হবে এবং তারা অল্প খরচে পরীক্ষা দিতে পারবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭-এর হিসাব অনুযায়ী দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। তারা আমাদেরই সন্তান। সুতরাং তাদের আর্থিক দিকটাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। একজন চাকরিপ্রার্থীর পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ৪০০ থেকে ৮০০ টাকার বেশি ফি দিতে হয়। নিয়োগকর্তার কাছে এই ফি সামান্য হতে পারে; কিন্তু একজন বেকার চাকরিপ্রার্থীর কাছে তার মূল্য অনেক বেশি। এই বেকার জনগোষ্ঠী বিভিন্ন দেশে রয়েছে। অনেক দেশে বেকার ভাতার প্রচলন আছে। আমাদের দেশেও এটি করা যায় কি নাÑ ভেবে দেখা দরকার। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে পারে। বয়স্কভাতা ও বিধবাভাতার মতো বেকার ভাতার প্রচলন চালু করা যেতে পারে। এটি করতে পারলে তারা মানসিক ও আর্থিক যন্ত্রণা থেকে খানিকটা হলেও রেহাই পাবে।

লেখক : অধ্যাপক, চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877