রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন

শিশুর নিউমোনিয়া : সতর্ক থাকতে হবে বাবা-মাকে

শিশুর নিউমোনিয়া : সতর্ক থাকতে হবে বাবা-মাকে

স্বদেশ ডেস্ক :

নিউমোনিয়া হচ্ছে ফুসফুসের এক ধরনের ইনফেকশন বা ফুসফুসের কোষ ‘প্যারেনকাইমার’ প্রদাহ। সাধারণত ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণের কারণে নিউমোনিয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগে শিশুর জন্ম, ওজন কম হলে, অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, টিকা সময়মতো না নিলে অথবা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা, যেমন- জন্মগত হৃদরোগ হলে শিশু নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে থাকে। ৫ বছরের কমবয়সী শিশুদের বিশ্বব্যাপী প্রধান ঘাতক নিউমোনিয়া।

প্রতি ঘণ্টায় একশ জনের বেশি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মার যায়। শিশু আরএস ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হলে চার থেকে ছয় দিন সময় লাগে এবং ফ্লু ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হলে এক থেকে তিন দিন সময় লাগে। ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়ায় শরীরে জীবাণু প্রবেশের পর রোগ প্রকাশ হতে একদিন থেকে শুরু করে দুই সপ্তাহ সময় লাগে। আবার টিবিজনিত নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুদের রোগ সংক্রমণে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। অনেক সময় শিশু ঘুমিয়ে থাকলে বা অচেতন অবস্থায় রোগীকে খাওয়ালে খাবার খাদ্যনালির পরিবর্তে ফুসফুসে ঢুকে যেতে পারে। এ অবস্থায় এসপিরেশন নিউমোনিয়ার সৃষ্টি হতে পারে।

লক্ষণ : প্রচ- জ্বর, কাশি, সর্দি এবং শ্বাসকষ্ট হলো নিউমোনিয়ার প্রধান লক্ষণ। ১ বছরের বেশি এবং ৫ বছরের নিচের শিশুদের প্রতি মিনিটে ৪০ বা তার চেয়ে বেশি হলে আমরা তাকে নিউমোনিয়ার কারণেই দ্রুত শ্বাস হিসেবে ধরে নিই। জ্বরের সঙ্গে বাচ্চার শ্বাসকষ্ট, বুক দেবে যাওয়া- এসব লক্ষণ দেখা দেয়। শ্বাসকষ্টের কারণে শিশুর মুখে খাবার নিতে পারে না এবং ঘুমাতেও পারে না।

জটিলতা : নিউমোনিয়া জন্মগত হৃদরোগ, সিস্টিক ফাইব্রোসিস বা ক্যানসারের জটিলতার কারণে হলে এবং সঙ্গে শারীরিক অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিউমোনিয়া থেকে রোগ জটিলতাস্বরূপ ফুসফুসে পানি, ফুসফুসে পুঁজ অথবা ফুসফুস একেবারে চুপসে যেতে পারে। নিউমোনিয়া থেকে পুষ্টিহীন বা রোগ প্রতিরোধহীন শিশুরা এনকেফালাইটিস বা মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

চিকিৎসা : নিউমোনিয়ার রোগীর নাকে সর্দি জমে থাকার কারণে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এ জন্য বাচ্চার নাক লবণ পানির দ্রবণ দিয়ে খাবার ও ঘুমের আগে পরিষ্কার করে রাখতে হবে। নিউমোনিয়ার রোগীর পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন করতে হবে। জাউভাত, সাগু, শিং মাছের ঝোল তার নৈমিত্তিক পথ্য হতে পারে না। তাকে প্রতিদিন দুধ ডিম মাছ মাংস দিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজন হলে শিশুকে স্টিম ভেপার বা নেবুলাইজার সহযোগে সোডিয়াম ক্লোরাইডের দ্রবণ (সলো বা নরসোল) দেওয়া যেতে পারে। কাফ মেডিসিন বা ব্রংকোডাইলেটর গ্রহণের প্রযোজন হতে পারে। অনেক সময় শ্বাসকষ্ট বেশি হলে অক্সিজেন গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়া হলে যথাযথ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করতে হবে। ফাঙ্গাস বা ব্যাকটেরিয়া দেখা দিলে অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধ প্রয়োগের প্রয়োজন হতে পারে। ভাইরাস শনাক্তকরণ আমাদের দেশে কষ্টকর হলেও সে ক্ষেত্রে অনুমিত মাত্রার অ্যান্টিভাইরাস ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে।

যখন হাসপাতালে নেওয়া জরুরি : নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় শিশুর পেট ভেতরে ঢুকে গেলে। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে। নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় নাক ফুলে উঠলে। মুখ ও ঠোঁটের চার পাশ নীল হয়ে গেলে। শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলে।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, শিশু-কিশোর হৃদরোগ বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলানগর, ঢাকা

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877