সিরাজগঞ্জে শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের (রবি) অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ী বহিষ্কার না করায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ফের ফুঁসে উঠেছে ক্যাম্পাস। গতকাল দ্বিতীয় দিন রবিবার শাহজাদপুর বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রবির একাডেমিক ভবনের সামনে চলা সেই আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীদের সরে আসার আহ্বান জানাতে উপস্থিত হন রেজিস্ট্রার সোহরাব আলীসহ শিক্ষকদের একদল প্রতিনিধি। তাদের উপস্থিতিতেই সেখানে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন শিক্ষার্থী মো. শামীম হোসেন। একই সঙ্গে হাতের রগ কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন শিক্ষার্থী আবিদ হাসান।
বিষপানে অসুস্থ শামীমকে প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন ওই শিক্ষার্থী। অপর ছাত্র আবিদ হাসানকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের আত্মহত্যার চেষ্টার খবর ছড়িয়ে পড়লে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নগরবাড়ী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তারা সড়কে বসেই বিক্ষোভ দেখান। এ সময় সড়কের দুপাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগ পোহাতে হয় দূরপাল্লার যাত্রীদের। এ ব্যাপারে রবির রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অসহায় অবস্থা এবং অনশনরতদের দুর্ভোগ দেখতে এদিন (রবিবার) একাডেমিক ভবনে যাই। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করতে আমি ও আমার সহকর্মী শিক্ষকরা চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। তারা অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানার স্থায়ী অব্যাহতি ছাড়া আর কোনো কথাই শুনতে রাজি হয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথমবর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় গত ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন। অপমান সহ্য করতে না পেরে ঘটনার পরদিন রাতে নাজমুল হাসান তুহিন নামে এক ছাত্র অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এর পরই ওই শিক্ষকের স্থায়ী অব্যাহতির জন্য আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে আবেদন জানিয়ে দুই সপ্তাহ সময় নিয়েও তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হননি ফারহানা ইয়াসমিন। ফলে তার বক্তব্য ছাড়াই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। গত শুক্রবার দীর্ঘ সময় চলা সিন্ডিকেট সভায় অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী অব্যাহতির সিদ্ধান্ত না আসায় শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দফা আন্দোলনে যাওয়ায় কার্যত অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
অবরোধ চলাকালীন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্যে সোহাগ হোসেন বলেন, ‘আমাদের নেতৃত্বে থাকা মো. শামীম হোসেন আগে থেকেই বলেছিলেন- ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করলে আমি আত্মহত্যা করব। গত ২২ অক্টোবর শুক্রবার ঢাকার অতিথি ভবনের সিন্ডিকেট সভায় ওই শিক্ষিকাকে স্থায়ী অব্যাহতির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শামীম আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আসলে আমাদের দাবি উপেক্ষা করে সিন্ডিকেট কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ওই শিক্ষিকাকে বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।’
এ বিষয়ে উপাচার্য আবদুল লতিফ অবশ্য বলেন, ‘ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী অব্যাহতির ব্যাপারে বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আরও একটু সময় নেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। এ জন্যই সিন্ডিকেটের এ সভা স্থগিত করা হয়। তবে খুব শিগগিরই সিন্ডিকেটসভা আহ্বান করে বিষয়টির সুরাহা করা হবে।’