স্বদেশ ডেস্ক:
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদ্রাসায় দুস্কৃতিকারীদের হামলায় ছয়জন নিহতের ঘটনায় আটজনকে আটক করেছে এপিবিএন পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন ৮ আর্মাড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এপিবিএন এর অধিনায়ক পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার।
তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার রাতভর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালানো হয়। তাৎক্ষণিকভাবে আটকদের পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছয়জন নিহতের ঘটনায় উখিয়া থানায় এখনো মামলা হয়নি বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এর আগে গতকাল শুক্রবার ভোরে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিসহ জসিম নামে এক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছিল। এপিবিএন-এর অধিনায়ক শিহাব কায়সার জানান, শুক্রবার মধ্যরাতে নিহত মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়।
জানা গেছে, শুক্রবার ভোররাতে বালুখালী ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ ব্লকে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল ইসলামিয়াহ’ মাদ্রাসায় রোহিঙ্গা দুষ্কৃতিকারীরা হামলা চালালে মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেয়। কিন্তু হামলাকারীদের হাত থেকে মসজিদে আশ্রয় নিয়েও রেহাই পায়নি। হামলাকারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা মসজিদে আশ্রয় নেওয়া দুজনকে হত্যা করে।
এদিন ভোররাত ৪টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৮ এর এইচ-৫২ ব্লকে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদ্রাসায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে পুলিশ ওই ক্যাম্পে দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের কথা বললেও পরে ক্যাম্পে দায়িত্বরত এপিবিএন পুলিশ মাদ্রাসায় হামলার কথা নিশ্চিত করেন।
নিহতরা হলেন- রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১২, ব্লক-জে-৫ এর বাসিন্দা হাফেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষক মো. ইদ্রীস (৩২), ক্যাম্প-৯ ব্লক-১৯ এর মৃত মুফতি হাবিবুল্লাহর ছেলে ইব্রাহীম হোসেন (২৪), ক্যাম্প-১৮, ব্লক-এইচ -৫২ এর নুরুল ইসলামের ছেলে মাদ্রাসার ছাত্র আজিজুল হক (২২), একই ক্যাম্পের ভলান্টিয়ার আবুল হোসেনের ছেলে মো. আমীন (৩২)। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ‘এফডিএমএন’ ক্যাম্প-১৮, ব্লক-এফ-২২ এর মোহাম্মদ নবীর ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক নুর আলম ওরফে হালিম (৪৫) ও এফডিএমএন ক্যাম্প-২৪এর রহিম উল্লাহর ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক হামিদুল্লাহ।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ৮ আর্মাড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এপিবিএন এর অধিনায়ক পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার জানান, শুক্রবার রাত আনুমানিক ৪টার দিকে ‘এফডিএমএন’ ক্যাম্প-১৮ এইচ-৫২ ব্লকে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদ্রাসায় রোহিঙ্গা দুষ্কৃতিকারীরা হামলা চালায়। হামলায় মাদ্রাসায় অবস্থানরত চারজন এফডিএমএন সদস্য মারা যায়। ওই ঘটনা জানতে পেরে ময়নারঘোনা পুলিশ ক্যাম্প-১২ এর পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজন মারা যায়। এ সময় পুলিশ হামলাকারীদের একজনকে একটি দেশীয় লোডেড ওয়ান শুটারগান, ৬ রাউন্ড গুলি ও একটি ছুরিসহ হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হয়।
এ ঘটনায় ময়নারঘোনা পুলিশ ক্যাম্প-১২ এর পুলিশ সদস্যরা ‘মদুতুল উম্মা’ মাদ্রাসা ও আশপাশের এলাকায় ব্লকরেইড পরিচালনা করে আসছে এবং অন্যান্য ক্যাম্প এলাকায়ও একই সঙ্গে ব্লক রেইড পরিচালনা করা হচ্ছে।
অপরদিকে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে নিহত রোহিঙ্গা শীর্ষ নেতা মুহিব্বুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আরও এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করেছে ১৪ এপিবিএন পুলিশ। তবে তার পরিচয় এখনো নিশ্চিত করেনি পুলিশ। মুহিব্বুল্লাহ হত্যায় এর আগে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ৮ আর্মাড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এপিবিএন এর অধিনায়ক পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার।