রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:০২ অপরাহ্ন

তালেবানের কতটা কাছে যাচ্ছে প্রতিবেশীরা

তালেবানের কতটা কাছে যাচ্ছে প্রতিবেশীরা

স্বদেশ ডেস্ক:

আগস্ট মাসে তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসার পর প্রায় তিন মাস হলো। এই তিন মাসে তারা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছেÑ যার আনুষ্ঠানিক শপথ এখন পর্যন্ত হয়নি। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নিজেদের শীর্র্ষনেতাদের বসিয়ে সরকার পরিচালনা করছে। এখন পর্যন্ত কোনো দেশ ওই সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও দেয়নি। কিন্তু দেশটির অভ্যন্তরে অস্থিরতা, অরাজকতা থেমে নেই। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি তালেবানবিরোধী আইএস-কের মতো জঙ্গি সংগঠন মাথাচাড়া দিয়েছে; একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার খবর আসছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগানিস্তানের এই অস্থিতিশীলতা প্রতিবেশী দেশ, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। গত সপ্তাহেই সংবাদমাধ্যম এপি জানিয়েছে, তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার মাত্রা বেড়েছে। যদিও বলা হয়ে থাকে, তালেবানের উত্থানের পেছনে পাকিস্তানের মদদ রয়েছে। কিন্তু এ কথা তো সত্যি, প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগলে

নিজের ঘরেও সেই আঁচ এসে লাগে। এটা ঠিক যে, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ায় বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলো চাইবে যে যার মতো করে এই শূন্যতা পূরণ করতে। কেননা সবারই নিজ নিজ স্বার্থ রয়েছে।

আফগানিস্তান পরিস্থিতির সঙ্গে যে প্রতিবেশী দেশটির সম্পর্ক ওতোপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে সেটি হলো পাকিস্তান। এই দুই দেশের মধ্যে প্রায় ২৬৭০ কিমি দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। চার শতক ধরে আফগান পরিস্থিতির আগুন সয়ে আসছে পাকিস্তান। সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ পাকিস্তানের কম মাশুল দিতে হয়নি। মার্কিন-তালেবান যুদ্ধে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ নিহত হয়েছেন ৮৩ হাজারের বেশি মানুষ। এ ছাড়াও পাকিস্তানের অর্থনীতি কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলার লোকসান গুনেছে। কিন্তু এখন তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পাকিস্তান উভয় সংকটে পড়েছে। কেননা পাকিস্তান জানে, তাদের একক স্বীকৃতিতে তালেবান সরকারের গ্রহণযোগ্যতার তেমন তারতম্য হবে না। এ কারণে ২৪ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি তালেবানের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

পাকিস্তানের পরই যে দেশটি আফগানিস্তানের প্রতি কড়া নজর রেখেছে সেটি হলো চীন। তালেবান সরকারও ইতোমধ্যে চীনকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ দুটি দেশের মধ্যে ৯২ কিমি সীমান্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে বেইজিং আফগান সরকারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। চীনের বড় ভয় হলো, আফগানিস্তানে ‘ইসলামপন্থি জঙ্গিবাদের’ উত্থান হলে জিনজিয়াং প্রদেশে অস্থিরতা বাড়তে পারে। এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে ২৮ জুলাই তালেবানের নয় সদস্যের দল চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে। তালেবানের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয় তাদের জমিতে চীনবিরোধী কোনো তৎপরতা সহ্য করা হবে না।

অন্যদিকে ইরানের সঙ্গে আফগানিস্তানের প্রায় ৯২১ কিমি সীমান্ত রয়েছে। আফগানিস্তানের অস্থিরতার জন্য ইরানকেও কম ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। ’৯০-এর দশকে তালেবানরা যখন প্রথম ক্ষমতায় এসেছিল, সেই সময় ইরান তালেবানবিরোধী শক্তিকে মদদ দিয়েছিলÑ এমনকি সেই তালেবান সরকারকে তেহরান স্বীকৃতিও দেয়নি। কিন্তু ২০০১ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপ করল তখন থেকে ইরানের অংকে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এর পর আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার ইরানের স্বস্তিও নেমে এসেছে। কিন্তু বর্তমান আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতিবাচক সমালোচনা করেছে তেহরান। কিন্তু আফগান-ইরান সীমান্তে ইসলামিক স্টেটÑ খোরাসানের মতো জঙ্গি সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাবুলের সঙ্গে সখ্য বজায় রাখতে হচ্ছে তেহরানকে। যদিও তালেবানরাও তেহরানকে সেই নিশ্চয়তা দিয়েছে।

তালেবানশাসিত আফগানিস্তান নিয়ে আরেক দেশ বেকায়দায় রয়েছে, সেটি হলো ভারত। বর্তমানে তালেবানের বেশ কাছে আছে পাকিস্তান ও চীনÑ এই দুটি দেশের সঙ্গেই ভারতের বিরোধ তুঙ্গে। এ ছাড়া আফগানিস্তানে ইসলামপন্থি শক্তির উত্থান মানে হলো ভারতশাসিত কাশ্মীরেও এর বাতাস লাগতে পারে। এখানেই দিল্লির দুশ্চিন্তা। এ ছাড়া আফগানিস্তানে বড় অংকের বিনিয়োগও রয়েছে ভারতের। কিন্তু ভারত যেহেতু বড় আঞ্চলিক শক্তি, সেই কারণে দিল্লিকে বিপাকে ফেলে বড় ধরনের সিদ্ধান্তে যাবে না তালেবানরা। হয়তো এ কারণেই মস্কো সম্মেলনে তালেবান, পাকিস্তান, ইরানের পাশাপাশি ভারতও ছিল।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877