মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪, ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন

‘কোটিপতি’ পাঁচ দিনমজুরের জামিন মিলল ৩ মাস পর

‘কোটিপতি’ পাঁচ দিনমজুরের জামিন মিলল ৩ মাস পর

স্বদেশ ডেস্ক;

অর্থ আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটার পাঁচ দিনমজুরকে এক বছরের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। জামিন চেয়ে তাদের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। পাঁচ আসামি হলেন ফুলমণি রানী, কমলচন্দ্র রায়, প্রভাসচন্দ্র, রণজিৎ কুমার ও নিখিলচন্দ্র বর্মণ।

করোনা প্রণোদনার নামে প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে দিনমজুর কারাগারে, গণমাধ্যমে আসা এমন প্রতিবেদন যুক্ত করে চলতি সপ্তাহে হাইকোর্টে পাঁচজনের জামিনের জন্য আবেদন করা হয়। এর আগে ওই মামলায় নিম্নআদালতে জামিন চেয়ে বিফল হন তারা। অবৈধ বিল ও অ্যাডভাইস দাখিলের মাধ্যমে জালিয়াতি করে সোনালী ব্যাংক থেকে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৯৬০ টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে গত ১ জুলাই ৯ জনের নামে ওই মামলাটি হয়। গাজীপুরের

শ্রীপুর থানায় মামলাটি করেন সোনালী ব্যাংক শ্রীপুর থানা হেডকোয়ার্টার শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল হক।

আদালতে জামিন আবেদনকারীদের পক্ষে ফি ছাড়া শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত। শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যে এখানে যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা আসলে ভুক্তভোগী। আবেদনকারী সবাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ও গরিব মানুষ। তাদের বলা হয়, করোনা প্রণোদনা দেওয়া হবে। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রামে। করোনা প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলে তাদের নামে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়।

আদালত বলেন, মামলা তো হয়েছে গাজীপুরে। কত দিন ধরে তারা কারাগারে আছেন? তখন শিশির মনির বলেন, গত ৩ জুলাই থেকে জেলে আছেন। তাদের কোনো অবলম্বন নেই। আবেদনকারীদের ব্যাংক হিসাবে লাখ লাখ টাকা যারা পাঠিয়ে দিয়েছেন ও পাঠানোর চেষ্টা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।

একপর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত বলেন, এটি ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনা। তখন আদালত বলেন, গরিব মানুষের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (হিসাব) করে যারা লুটপাট করেছেন, তাদের ধরেন। তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, গরিব মানুষের নামে হয়েছে কিনা, এটি প্রমাণের বিষয়। পরে আদালত রুল দিয়ে এক বছরের জামিন দেন। এর ফলে ওই পাঁচ দিনমজুরের কারামুক্তিতে আইনগত বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবী শিশির মনির।

এদিকে জামিনের খবর পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ওই পাঁচ দিনমজুরের স্বজনরা। স্থানীয় যুবক তাপসচন্দ্র রায়সহ কয়েক জন জানান, করোনা প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলে এই পাঁচ অসহায় দিনমজুরের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। টাকা আত্মসাতের সঙ্গে তারা কোনোভাবেই জড়িত নয়। দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে ফাঁসানো হয়েছে।

প্রভাসের স্ত্রী অঞ্জলী রানী জানান, তার স্বামী জামিন পাওয়ায় তিনি খুশি হয়েছেন। তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

মা মালতী রানী জানান, ‘পূজার আগেই ছেলেরা জামিন পাবে ভাবতে পারিনি। জামিনের খবর পাওয়ায় আমরা খুশি। ছেলের জন্য অনেক কষ্টে ছিলাম। কোনো রাতেই ঘুমাতে পারিনি বাবা। আমার ছেলেকে যারা জামিন দিয়েছেন তাদেরকে ঈশ্বর যেন মঙ্গল করে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877